জমজম কূপের রহস্য

- সময় ১২:০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
- / 20
সারা বিশ্বের মুসলমানরা জমজম কূপের পানিকে ‘অত্যন্ত পবিত্র’ এবং ‘অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন’ বলে মনে করেন। সৌদি আরবের মক্কায় মসজিদুল হারামের ভেতরে এই কূপটি অবস্থিত। মুসলিমদের কাছে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত কাবাঘরের মাত্র ২০ মিটার দূরে এর অবস্থান।
জমজম কূপের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা কিছু রহস্য, ইতিহাস এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ আজও নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। কীভাবে এই কূপের পানি এত পবিত্র এবং এর পেছনে কী এমন ঘটনা ঘটেছিল যা এখনো অনেকের কাছে অজানা?
জমজম কূপের ইতিহাস বহু পুরনো। ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, কূপটির উৎপত্তি হযরত ইসমাইল (আঃ) এর সাথে সম্পর্কিত। বলা হয়, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যখন তার স্ত্রী হযরত হাজেরা ও তার সন্তান ইসমাইলকে মরুভূমির মক্কায় রেখে চলে যান, তখন পানির অভাবে হাজেরা বেশ কষ্ট পাচ্ছিলেন।
তিনি সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ান পানি খোঁজার জন্য। ঠিক তখনই, হযরত ইসমাইলের পা চাপলে মাটির মধ্যে এক ঝর্ণার সৃষ্টি হয়, যা আজকের জমজম কূপ। পরবর্তীতে মক্কা নগরী জনবসতিপূর্ণ হওয়ার অন্যতম উপলক্ষ ছিল এই জমজম কূপটি।
জমজম কূপের পানি একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। বিশ্বের অনেক কূপের পানি পবিত্র এবং ব্যবহারিক, কিন্তু জমজমের পানি যে পরিমাণ পবিত্র, তা পৃথিবীর অন্য যে কোন কূপের পানি থেকে আলাদা।
যে কারনে প্রতি বছর যে লাখ লাখ মুসলিম হজ বা ওমরাহ পালন করতে গিয়ে জমজম কূপের পানি নিয়ে দেশে ফেরেন। পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে এই পানি বিতরণের রেওয়াজ দেখা যায়। তাদের প্রত্যাশা এই ‘পবিত্র পানি’ পান করলে বিপদ, রোগ কিংবা যে কোন অমঙ্গল দূর হবে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও জমজম কূপের পানি কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একাধিক গবেষণায় জানা গেছে, জমজম কূপের পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ এবং এতে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য জীবাণু নেই।
কিছু গবেষক দাবি করেন, এই কূপের পানি বিশেষ ধরনের মিনারেল দ্বারা সমৃদ্ধ, যা মানব শরীরের জন্য উপকারী। তবে এর আসল রহস্য এখনো পুরোপুরি উদঘাটিত হয়নি।
‘সৌদি গেজেট’ সংবাদপত্র অনুযায়ী, জমজমের কূপটিকে বিশ্বের ‘প্রাচীনতম কূপ’ বলে ধারণা করা হয়। কারণ গত পাঁচ হাজার বছর ধরে এখান থেকে একটানা পানি পাওয়া যাচ্ছে।
এটি ত্রিশ মিটার গভীর। তারপরেও এটি প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে আঠারো লিটার পানি পাম্প করতে পারে। জমজম কূপ সৃষ্টির পর থেকে বালু ও পাথর দিয়ে ঘেরা ছিল। দড়ি এবং বালতি দিয়ে এই কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করা হতো।
ইসলামের ইতিহাস গবেষকরা বলেন, একটা সময়ে এই কূপে ময়লা ফেলা হতো এবং এক পর্যায়ে কূপটি হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে হযরত মুহাম্মদ (স) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব স্বপ্নে এর সন্ধান পান।
মক্কায় এই জমজম কূপই একমাত্র নয়। কাবার অভ্যন্তরে একটি শুষ্ক গর্তও কখনো কখনো ‘কাবার কূপ’ নামে পরিচয় দেয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে ২০২০ সালের ১৫ই ডিসেম্বর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জমজম কুয়ার পানি রোগ-জীবাণুমুক্ত। এই পানিতে সিরাম ইউরিক এসিড স্বাভাবিক মাত্রার চেয়েও কম বলে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষনায় দাবি করা হয়েছে, এই কূপের পানি লিভারের জন্যও নিরাপদ। মানব স্বাস্থ্যের জন্য এই কুয়ার পানি নিরাপদ এবং উপকারী প্রভাব রয়েছে।
একই ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জমজমের পানি নিয়ে আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যেখানে দাবি করা হয়, পানির আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সব প্যারামিটার সঠিক মাত্রায় রয়েছে জমজমের পানিতে। এতে গ্রহণযোগ্য রাসায়নিক প্রোফাইল রয়েছে বলে বলা হয়েছে। তবে, আরো বৃহত্তর গবেষণা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।