জবাইয়ের হুমকি, ইউনূস সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন!
- সময় ১২:৪০:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
- / 58
বাংলাদেশে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে খাটো করে জাতীয়-আন্তর্জাতিক মহলে দেখানোর প্রবণতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংখ্যালঘু ছাত্র-যুব ও সংখ্যালঘু সমাজ। এক বিশেষ মহল প্রকাশ্যে সংখ্যালঘুদের জবাই করার হুমকি দিচ্ছে। তারা আতঙ্কিত হয়ে দিনানিপাত করছেন। এ অবস্থায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতী সরকারের ভূমিকা কি সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত জমায়েতে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। শুধু তা-ই নয়, এক বিশেষ মহল প্রকাশ্যে সংখ্যালঘুদের জবাই করার হুমকি দিচ্ছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান ড. ইউনূস সরকারের কোনো যথাযথ পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এতে আপামর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আশঙ্কিত ও আতঙ্কিত।
ছাত্র-যুব ও সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি অ্যার্টনি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের হাইকোর্টের এক মামলার শুনানিতে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার পক্ষে প্রদত্ত অভিমতকে গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ ও ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আকাঙ্খার পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। সেখানে শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূস সরকার তেমন কোনো কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে না।
বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের রংপুরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বানচালের লক্ষ্যে যোগদানেচ্ছুক সনাতনী সম্প্রদায়ের ওপর উপর্যুপরি হামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে ছাত্র-যুব নেতৃবৃন্দ বলেন, এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করবে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী হামলাকারীদের এবং মহাসমাবেশ বানচালের অপচেষ্টাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্যে সরকারের কাছে তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সরকারের সঞ্চালনায় নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার চলমান ঘটনা হিসেবে কিশোরগঞ্জের হৃদয় রবিদাসকে হত্যা, চট্টগ্রামের হাজারী লেইনে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে সুনামগঞ্জে আটককৃত আকাশ সিংহকে গ্রেপ্তার, নেত্রকোনার মহনগঞ্জে সংখ্যালঘুদের জমি জবর দখল এবং মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার শশিকর কলেজের অধ্যক্ষ দূর্লভানন্দকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান এবং অনতিবিলম্বে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ ও দোষীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
জমায়েতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা। বক্তব্য রাখেন ছাত্র ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সজিব সরকার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অপূর্বানন্দ রায়, ছাত্র ঐক্য পরিষদের নেত্রী সুস্মিতা সরকার, যুব ঐক্য পরিষদের মহিলা সম্পাদিকা চন্দ্রা রায় চম্পা, যুব ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি তাপস দাস, এ্যাড. প্রভাত টুডু, রঞ্জিত সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিষ সরকার, হিন্দু যুব মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ নাহা প্রমুখ।
এছাড়াও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি প্রফেসর ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ ছাত্র-যুবদের দাবির পক্ষে সংহতি প্রকাশ করে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানান ও অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘুদের ৮ দফা বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রখ্যাত আইনজীবী, মানবাধিকার নেতা রাণা দাশগুপ্তসহ ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
জমায়েত শেষে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চিরতরে বন্ধ এবং সহিংসতাকারীদের গ্রেপ্তারপূর্বক বিচারের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান সহকারে এক বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ইউনূস সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ ও ছাত্র ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও কুমিল্লা জেলা ও মহানগর, পাবনা, খুলনা জেলা ও মহানগর, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধের দাবিতে জমায়েত ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত করে।