জনসংখ্যা বাড়াতে নতুন আইন করল চীন

- সময় ১০:২১:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
- / 12
বিশ্বের একসময়ের সর্বাধিক জনসংখ্যাবহুল দেশ চীন। কিন্তু বর্তমানে এই দেশটি এক চরম সংকটের সম্মুখীন। জন্মহার ক্রমাগত কমে যাওয়ার ফলে, আগামী দশকের মধ্যে চীনের জনসংখ্যা ৫ কোটি ১০ লাখ কমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন গবেষণা।
এই সংকট কেবল জনসংখ্যাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং চীনের অর্থনীতি, সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলছে।
বর্তমানে চীনের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। ২০২৫ সাল নাগাদ চীনের জনসংখ্যা ১৩৬ কোটিতে নেমে আসতে পারে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস, ২১০০ সালের মধ্যে চীনের জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।
সময়ের পরিবর্তনে এখন চীন সরকার জনসংখ্যা বাড়াতে একের পর এক উদ্যোগ নিচ্ছে। কমে যাওয়া জন্মহার এবং বিয়ের সংখ্যা সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছে।
একসময় চীনে এক সন্তান নীতি কঠোরভাবে কার্যকর ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার বাধ্য হয় এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু সেই নীতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আজ স্পষ্ট।
ওই সিদ্ধান্তের ফলে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা কমছে, প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে। জনসংখ্যাগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলে দেশটির অর্থনীতি এবং সামাজিক কাঠামোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
চীনে বিয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল কঠিন আইনি প্রক্রিয়া। আগে একজন নাগরিককে তার স্থায়ী ঠিকানাতেই বিয়ে নিবন্ধন করতে হতো। ফলে চাকরি বা অন্য কোনো কারণে যারা অন্য শহরে থাকতেন, তাদের জন্য এই প্রক্রিয়া ছিল সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
এই সমস্যা দূর করতে চীন সরকার এখন অস্থায়ী ঠিকানায় বিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ দিয়েছে। এতে তরুণ-তরুণীরা বিয়ে করতে আরও উৎসাহিত হবে বলে মনে করছে প্রশাসন।

আগে চীনা নাগরিকদের স্থায়ী ঠিকানায় বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে হতো। কিন্তু নতুন নিয়মের ফলে এখন অস্থায়ী ঠিকানায়ও বিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। এতে সময় ও খরচ দুটোই কমবে বলে মনে করছেন সরকার।
চীন সরকার শুধুমাত্র বিয়ের আইনি প্রক্রিয়া সহজ করেই থেমে থাকেনি। নতুন দম্পতিদের জন্য আর্থিক অনুদান, সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করতে নানা ধরনের প্রণোদনাও চালু করেছে। অনেক প্রদেশে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সন্তানের জন্য নগদ অনুদান এবং কর ছাড়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
চীনের ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিবার গঠনে বিধি-নিষেধ, ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় এবং সমাজে পরিবর্তনশীল নিয়ম-কানুন। সন্তান জন্মদান এবং লালন-পালনের খরচ বৃদ্ধির ফলে নারীরা সন্তান নিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
২০২৩ সালে টানা দুই বছরের মতো কমে চীনের জনসংখ্যা। দেশটিতে জনসংখ্যা কমে যায় ২০ লাখ। মোট জনসংখ্যা হয় ১৪০ কোটি। চীনকে টপকে এগিয়ে যায় ভারত।
ফলশ্রুতিতে ২০২৩ সালে চীনে ১৪ হাজারেরও বেশি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, নতুন শিক্ষার্থীর অভাবে এগুলো চালানো সম্ভব হয়নি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মশক্তি হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে অর্থনীতি, পেনশনব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোর ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সংকট চীনের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এই সংকট মোকাবিলায় চীন সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৬ সালে এক সন্তান নীতির পরিবর্তে দুই সন্তান নীতি গ্রহণ করা হয়। ২০২১ সালে চালু হয় তিন সন্তান নীতি। সন্তান নিতে উদ্বুদ্ধ করতে নগদ অর্থ, বর্ধিত মাতৃত্বকালীন ও পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি চীন সরকার ‘চাইল্ডবার্থ-ফ্রেন্ডলি সোসাইটি’ কর্মসূচি চালু করেছে। এর আওতায় শিশু লালন-পালনের সুবিধা বৃদ্ধি, চাইল্ডকেয়ার পরিষেবা উন্নত করা এবং সন্তান জন্মদানে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা, আবাসন এবং চাকরিতে বাড়তি সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হয়নি চীন। গবেষকদের মতে, জন্মহারের সাময়িক বৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ, বিবাহের হারও বর্তমানে সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।