ঢাকা ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দীঘিনালার বড় দুঃখ

ছয় বছরেও শেষ হয়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ

প্রমোদ কুমার মুৎসুদ্দী, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি)
  • সময় ০২:৫৬:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 53

দীঘিনালার দুঃখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বড় দুঃখগুলোর মধ্যে অন্যতম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শান্ত পাহাড়ের বুকে মাঝে মধ্যেই অশান্তি দেখা দেয়। হানাহানির পর মারাত্নকভাবে আহত রোগীদের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসার জায়গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যে, এখনো ভাঙা ঘরেই চলছে রোগীদের চিকিৎসা সেবা। নতুন ভবন নির্মাণের কাজ ছয় বছরেও শেষ না হওয়াতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। দোষীদের শাস্তিও দাবি করেছেন কেউ কেউ। দীঘিনালার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও চান অল্প সময়ের মধ্যে আটকে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ আবার শুরু করা হোক, যেন তারা আধুনিক চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার আয়তনে সবচেয়ে বড় উপজেলা এবং জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিবেচনা করে পুরনো ১০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় রূপান্তরের জন্য পরিকল্পনা নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কাজ শুরু হয়।

দীঘিনালার দুঃখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
দীঘিনালার দুঃখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

কিন্তু ভবন নির্মাণের কাজটি পেয়েছিল হেলথ ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের আওতাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাগ কন্সস্ট্রাকশন। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৮ মাসের নির্ধারণ করলেও ৬ বছরেও শেষ না করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ম্যাগ কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প পরিচালক ওয়াহেদ রেজা বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু তেমন কিছু বলতে পারবো না। আমাদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করতেই ইচ্ছুক। কিন্তু আমরা ফান্ড ছাড়ের আশায় আছি। এখনো ফান্ড ছাড়া হচ্ছে না। আপনি দয়া করে ফান্ডের বিষয়ে খোঁজ নেন।’

হেলথ্ ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের খাগড়াছড়ি জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন একই সুরে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বর্তমানে বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। তাই এখন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ৫ম ধাপে নতুন বরাদ্দ আসলে অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করবে।

খাগড়াছড়ি জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের অফিস সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের পর কাজটি পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাগ কন্সস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ১৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিলও তুলে নিয়েছে। কিন্তু কাজটি প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারেনি। ফলে ভোগান্তি কমেনি দীঘিনালীাবাসীর।

দীঘিনালার দুঃখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
দীঘিনালার দুঃখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

উল্লেখ্য, কোভিড ১৯, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, পাহাড়ি এলাকায় আঞ্চলিক দলের চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অজুহাতে ১০ বার নির্মাণ কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার ২ নং বোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মাদ কামাল হোসেন বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন,  বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে আমাদের থানার রোগীদের বিশেষ করে দুর্ঘটনার কারণে যারা আহত বা জখম হন তাদের জেলা সদর হাসপাতালে নিতে হয়। এতে অনেক সময় রোগীর প্রাণও চলে যায়। আমরা এলাকাবাসী চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ সম্পন্ন হোক এবং এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক থাকুক। দীঘিনালাবাসীকে চিকিৎসা দেয়ার জন্যই এটা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। আশা করছি, যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুবিবেচনা করবে।

ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ কামাল হোসেন
ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ কামাল হোসেন

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা: তনয় তালুকদার জানান, অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুন কমপ্লেক্স বুঝে পেলেই স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

দীঘিনালায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৮ জন ডাক্তার থাকার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে চারজন ডাক্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সেবার মান বৃদ্ধি করতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বৃদ্ধির তাগিদও দিয়েছেন ডা. তনয় তালুকদার।

 

শেয়ার করুন

দীঘিনালার বড় দুঃখ

ছয় বছরেও শেষ হয়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ

সময় ০২:৫৬:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি ২০২৫

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বড় দুঃখগুলোর মধ্যে অন্যতম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শান্ত পাহাড়ের বুকে মাঝে মধ্যেই অশান্তি দেখা দেয়। হানাহানির পর মারাত্নকভাবে আহত রোগীদের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসার জায়গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যে, এখনো ভাঙা ঘরেই চলছে রোগীদের চিকিৎসা সেবা। নতুন ভবন নির্মাণের কাজ ছয় বছরেও শেষ না হওয়াতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। দোষীদের শাস্তিও দাবি করেছেন কেউ কেউ। দীঘিনালার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও চান অল্প সময়ের মধ্যে আটকে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ আবার শুরু করা হোক, যেন তারা আধুনিক চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার আয়তনে সবচেয়ে বড় উপজেলা এবং জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিবেচনা করে পুরনো ১০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় রূপান্তরের জন্য পরিকল্পনা নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কাজ শুরু হয়।

দীঘিনালার দুঃখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
দীঘিনালার দুঃখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

কিন্তু ভবন নির্মাণের কাজটি পেয়েছিল হেলথ ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের আওতাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাগ কন্সস্ট্রাকশন। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৮ মাসের নির্ধারণ করলেও ৬ বছরেও শেষ না করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ম্যাগ কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প পরিচালক ওয়াহেদ রেজা বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু তেমন কিছু বলতে পারবো না। আমাদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করতেই ইচ্ছুক। কিন্তু আমরা ফান্ড ছাড়ের আশায় আছি। এখনো ফান্ড ছাড়া হচ্ছে না। আপনি দয়া করে ফান্ডের বিষয়ে খোঁজ নেন।’

হেলথ্ ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের খাগড়াছড়ি জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন একই সুরে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বর্তমানে বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। তাই এখন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ৫ম ধাপে নতুন বরাদ্দ আসলে অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করবে।

খাগড়াছড়ি জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের অফিস সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের পর কাজটি পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাগ কন্সস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ১৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিলও তুলে নিয়েছে। কিন্তু কাজটি প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারেনি। ফলে ভোগান্তি কমেনি দীঘিনালীাবাসীর।

দীঘিনালার দুঃখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
দীঘিনালার দুঃখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

উল্লেখ্য, কোভিড ১৯, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, পাহাড়ি এলাকায় আঞ্চলিক দলের চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অজুহাতে ১০ বার নির্মাণ কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার ২ নং বোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মাদ কামাল হোসেন বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন,  বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে আমাদের থানার রোগীদের বিশেষ করে দুর্ঘটনার কারণে যারা আহত বা জখম হন তাদের জেলা সদর হাসপাতালে নিতে হয়। এতে অনেক সময় রোগীর প্রাণও চলে যায়। আমরা এলাকাবাসী চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ সম্পন্ন হোক এবং এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক থাকুক। দীঘিনালাবাসীকে চিকিৎসা দেয়ার জন্যই এটা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। আশা করছি, যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুবিবেচনা করবে।

ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ কামাল হোসেন
ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ কামাল হোসেন

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা: তনয় তালুকদার জানান, অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুন কমপ্লেক্স বুঝে পেলেই স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

দীঘিনালায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৮ জন ডাক্তার থাকার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে চারজন ডাক্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সেবার মান বৃদ্ধি করতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বৃদ্ধির তাগিদও দিয়েছেন ডা. তনয় তালুকদার।