চকরিয়া থানায় গিয়েও বিচার পাচ্ছেনা ভুক্তভোগীরা
- সময় ০৫:৩৯:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
- / 166
কক্সবাজারের চকরিয়ায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। হত্যা, গুম, লুটপাট, চাঁদাবাজি দখল – বেদখল, ধর্ষণ, অপহরণ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।
ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার নিরীহ মানুষের অভিযোগ চকরিয়া থানার ওসি চিহ্নিত সন্ত্রাসী ডাকাতদের সাথে নিয়ে টার্গেট করে অভিযানের নামে ব্যাপক লুটপাট, সন্ত্রাস, গণগ্রেফতার, শারিরিক নির্যাতনের পর মোটা অংকের টাকা ও মুচলেকা নিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করে ও কোন প্রতিকার ও বিচার পাচ্ছেন না।
ওসি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী চকরিয়া সাহার বিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী বলেন, আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে কখনো সম্পৃক্ত ছিলাম না। বিগত ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন সরকার দলীয় প্রার্থী ও অপরাপর প্রার্থীকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নির্বাচনে আমার কাছে হেরে যাওয়া প্রার্থীদের প্রতিনিয়ত প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হই। যার কারণে তৎকালীন সরকারের আমলে আমাকে ১২/১৪ টি মিথ্যা হয়রানী মুলক মামলার আসামী করা হয়। প্রতিটি মামলায় আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন পূর্বক জামিন প্রাপ্ত হই। গত ৫ ই আগস্টের পরে আমার একই শত্রুপক্ষ রাতারাতি রূপ পালটিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে এবং মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আমাকে আবার মিথ্যা হয়রানি মূলক ১০ টি মামলায় আসামী করে।তবু ও এলাকার জনসাধারণের সেবার স্বার্থে আমি আমার এলাকায় অবস্থান করছি।
গত শুক্রবার ৯১৭ জানুয়ারি) চকরিয়া থানার ওসি মনজুরুল কাদেরের নেতৃত্বে বিএনপি’র ৬০/৭০ জন দলীয় লোকজন তৎমধ্যে ১০/১৫ জন অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীসহ আমার বাড়ি ঘেরাও করে। তখন আমি বাড়ি থেকে সরে যাই। ঠিক জুমার খুতবার সময় মসজিদ ও বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে তারা। তখন আমার বাড়ি ও মসজিদ তল্লাশী করে। আমাকে না পেয়ে মসজিদের মুসল্লীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার সময় একজন মুসল্লী (ব্যাংক কর্মকর্তা) আমার ভাতিজা সিরাজুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়ে ওসি মনজুরুল কাদের ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ প্রদানের মাধ্যমে রাত ৩ টার সময় ছেড়ে দেয়।
আজ থেকে ৬ মাস পূর্বে ৮/১০ টি অস্ত্র নিয়ে যারা র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল ডাকাত কামাল, বেলাল, বাবু ও ২ বছর আগে ৬ টি অস্ত্র নিয়ে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া মোকাদ্দেছ তাদের সহযোগি হেলাল, মুবিন ঐসব সস্ত্রাসীদেরকে নিয়ে ওসি মনজুরুল কাদের জুমার নামাজ চলাকালীন সময় ৫ গাড়ি পুলিশ ও ৬০/৭০ জন বিএনপি’র কর্মীরা এলাকার মুসল্লীদের কাউকে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করতে দেওয়া হয়নি শুধুমাত্র আমাকে গ্রেফতার করার অজুহাতে।
পরে বাড়ি মসজিদ তল্লাশী শেষে আমাকে না পেয়ে ১০/১৫ জন সন্ত্রাসীসহ ওসির নেতৃত্বে আমার ভাই আবদুল গফ্ফারের বাড়িতে প্রবেশ করে। ওসির উপস্থিততে আমার ভাইকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে এবং সন্ত্রাসীরা ওসির সামনে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। আমার ভাই আহত আবদুল গফ্ফারকে ওসি মনজুরুল কাদের লাথি ও ঘুষি মেরে সিএনজিতে তুলে নিয়ে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার ভাই মারাত্মকভাবে আহত হওয়ায় চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমার ভাইয়ের অবস্থা গুরুতর দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আমার ভাইয়ের অবস্থা আরো অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। বর্তমানে আমার ভাই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
এরপর ওসি’র নেতৃত্বে ১০/১৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে নিয়ে পাশ্বর্বর্তী ইউনিয়ন পূর্ব বড় ভেওলা ২ নং ওয়ার্ড কদ্দাছড়া আমার মামাতে বোনের জামাই নাছির সওদাগরের বাড়ি যায়। ওসির সামনে আমার বোনের জামাইকে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপায় এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের জনসম্মুখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, ৩ ভরি স্বর্ণ লুট করে। পরে পুলিশ পাহারায় তার গোয়াল ঘরে রক্ষিত ১২টি গরু, ১টি মহিষ লুট করে নিয়ে যায়।
এখানে শেষ নয়, পুলিশের নেতৃত্বে কোরালখালী নিবাসী আমার ভাগিনা আলী হোসেন প্রকাশ সোনা মিয়াকে ধাওয়া করে এবং ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। সে নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য দৌড়তে গিয়ে খুঁচড় খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলে কামাল ডাকাত ও হেলাল ডাকাত তারা দুইজন পর পর তাকে বুকে এবং তলপেটে মারাত্মকভাবে আঘাত করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। পরে আমরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে চকরিয়া ইউনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমার ভাগিনার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি ওসির ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন করে মৃত্যু বিষয়টি জানালে জবাবে ওসি আমাকে বলে আমার লোকজন নাকি গুলি করে মেরে ফেলছে, এই কথা বলে ফোন রেখে দেন।
সোনা মিয়ার বিষয়ে ওসির নেতৃত্বে পরিবারকে ভয়ভীতি ও বিভিন্ন মামলার আসামী করবে বলে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় পরিবার থেকে মামলা করবে না বলে জবান বন্ধি ও সে স্টোক করছে বলে মুচলেকা নেওয়ার পর ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দাফরের ব্যবস্থা করে।
পরে একই সন্ত্রাসীরা সংঘটিত হয়ে বিকাল ৫ টায় অস্ত্রশস্ত্রে দলবদ্ধ ভাবে আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে ইয়াছির মো: পারভেজ এর পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের কদ্দাছড়া দুগ্ধ মহিষের খামারে হামলা করে। খামারের দায়িত্বে থাকা কাশেমকে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটপাট চালিয়ে দুগ্ধ মহিষ ৬ টি লোকজনের সামনে লুট করে সন্ত্রাসীদের বাড়িতে নিয়ে যায়। এতকিছু হওয়ার পরেও ওসিকে ওয়াটস্যাপে ম্যাসেজ দিয়ে গুরু-মহিষ লুট করার কথা বললেও কোন সাড়া পাওয়া মেলেনি। চকরিয়া-পেকুয়ায় দায়িত্বরত এএসপি সার্কেলকে অভিযোগ করলে ওনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। ২৪ ঘন্টা পরেও কোন সাড়া মেলেনি। অবশেষে কক্সবাজার পুলিশ সুপারকে ফোন করলে ওসি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে বলে এবং লিখিত অভিযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এদিকে বোনের জামাই নাছির সওদাগরকে চকরিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করেন।
আমার প্রশ্ন চকরিয়া থানার ওসি মনজুরুল কাদেরের সাথে সাহারবিলের কোরালখালীর চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের অপকর্ম, চাঁদাবাজি ও লুটপাটের শেষ কোথায়? এই ওসি ও সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক অপকর্মের কারণে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এ বিষয়ে চকরিয়া থানার ওসি মনজুরুল কাদের ভূঁইয়ার কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা মিথ্যা।আমি চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরীর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি তাকে গ্রেফতার করার জন্য। কারণ তিনি একাধিক মামলার পলাতক আসামী।আমার সাথে কোন সন্ত্রাসী কিংবা ডাকাত ছিল না।আর কোথায় কি হয়েছে এ ব্যাপারে আমি অবগত নই।আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি।
এ দিকে চকরিয়ার অসংখ্য ভুক্তভোগীর অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে চকরিয়ায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম ভাবে অবনতি ঘটেছে। হত্যা,ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, অপহরণ, সন্ত্রাস,দখল – বেদখল, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও চাঁদাবাজি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।