০৯:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণপূর্তের মাসুদ কি ভালো হবে না!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০৪:৩২:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
  • / 315

গণপূর্তের মাসুদ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিআরটিএ কর্মকর্তা মাসুদের কথা মানুষ কিছুটা ভুলে গেলেও, গণপূর্তে রয়ে গেছেন আরেক মাসুদ। তাকে ভালো হতে বলবে কে?

বিগত সরকারের সময় গণপূর্তের প্রকৌশলীদের ঢাকায় যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিলো; তাদের মধ্যে অন্যতম মাসুদ রানা। ৫ আগস্টের পর ওই সিন্ডিকেটের অনেককেই ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ঘুরে ফিরে ঢাকাতেই পোস্টিং পেয়ে যাচ্ছেন।

প্রকৌশলী মাসুদ রানাকে কমিশন না দিলে কাজ পাওয়া তো দূরের বিষয়, বিলও আদায় করা সম্ভব হয় না। গণপূর্তের ঠিকাদারদের কাছে আতংকের নাম শেরে বাংলা নগর বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদ রানা। কমিশন খোর হিসাবে পরিচিত এই প্রকৌশলী স্ত্রী ও নিজ নামে গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

প্লট, বাড়ি, দোকান, হ্যারিয়ার গাড়ি থেকে শুরু করে সবই আছে তার। মাসুদের বিরুদ্ধে এবার অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে।

গণপূর্তের ঠিকাদার মা এন্টারপ্রাইজের এস এম আফজাল হোসেন গত ২০ জানুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান বরাবর নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ রানার বিরুদ্ধে নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পত্তির বিবরণও পাওয়া গেছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের ক্যাশিয়ার হিসাবে পরিচিত এই মাসুদ রানা নিজ নামেই কিনেছেন মোহাম্মদপুর বাবর রোডে ১০ কাঠার একটি প্লট। যার বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে ৬ কোটি টাকা।
এছাড়াও মাসুদ রানার স্ত্রীর নামে রয়েছে দেড় কোটি টাকার দুইটি ফ্ল্যাট। শুধু রামপুরার বনশ্রীতে এ ব্লকের ৭৯/১ মোল্লা ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় ১২শ’ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট কিনেই দেননি, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স এ দুটি দোকান। যেগুলোর বাজারমূল্য দুই কোটি টাকা।

গণপূর্তের একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেছেন, প্রকৌশলী মাসুদ রানা মিস্টার ১৫ পারসেন্ট হিসাবেই পরিচিত। তার অধীনে বর্তমানে বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের দরপত্রে অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলন দেখানো, দরপত্রের তথ্য ফাঁস করে দেয়া এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে দর কষাকষির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

বিল আটকে রাখার অভ্যাসও রয়েছে এই প্রকৌশলীর। মাসুদ রানাকে ২০ শতাংশ কমিশন দিলেই বিল পাস করা হয়। না হলে সেটি আটকে রাখেন দিনের পর দিন। ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে বিল তুলে গ্রহণ করার অভিযোগে মাসুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশও করা হয়েছিল।

কিন্তু তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী অফিসার হিসাবে সাবেক গণপূর্ত সচিব মো: শহীদ উল্লাহ খানের সঙ্গে বিশেষ সখ্যতার কারণে তার রিবুদ্ধে কেউ কিছু বলতেই পারতেন না। তবে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও এই মাসুদ রানা রয়ে গেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। চালিয়ে যাচ্ছেন কমশিন বাণিজ্য।

বিষয়গুলো নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দিলেও সুচতুর মাসুদ রানা সব কিছু ম্যানেজ করে ফেলেন। তাই বাধ্য হয়েই ঠিকাদাররা এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের দারস্থ হয়েছেন। তারা নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিশেষ করে তার এবং পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব বের করার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ ও সম্পদের বিষয়ে মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

গণপূর্তের মাসুদ কি ভালো হবে না!

সময় ০৪:৩২:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিআরটিএ কর্মকর্তা মাসুদের কথা মানুষ কিছুটা ভুলে গেলেও, গণপূর্তে রয়ে গেছেন আরেক মাসুদ। তাকে ভালো হতে বলবে কে?

বিগত সরকারের সময় গণপূর্তের প্রকৌশলীদের ঢাকায় যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিলো; তাদের মধ্যে অন্যতম মাসুদ রানা। ৫ আগস্টের পর ওই সিন্ডিকেটের অনেককেই ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ঘুরে ফিরে ঢাকাতেই পোস্টিং পেয়ে যাচ্ছেন।

প্রকৌশলী মাসুদ রানাকে কমিশন না দিলে কাজ পাওয়া তো দূরের বিষয়, বিলও আদায় করা সম্ভব হয় না। গণপূর্তের ঠিকাদারদের কাছে আতংকের নাম শেরে বাংলা নগর বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদ রানা। কমিশন খোর হিসাবে পরিচিত এই প্রকৌশলী স্ত্রী ও নিজ নামে গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

প্লট, বাড়ি, দোকান, হ্যারিয়ার গাড়ি থেকে শুরু করে সবই আছে তার। মাসুদের বিরুদ্ধে এবার অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে।

গণপূর্তের ঠিকাদার মা এন্টারপ্রাইজের এস এম আফজাল হোসেন গত ২০ জানুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান বরাবর নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ রানার বিরুদ্ধে নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পত্তির বিবরণও পাওয়া গেছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের ক্যাশিয়ার হিসাবে পরিচিত এই মাসুদ রানা নিজ নামেই কিনেছেন মোহাম্মদপুর বাবর রোডে ১০ কাঠার একটি প্লট। যার বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে ৬ কোটি টাকা।
এছাড়াও মাসুদ রানার স্ত্রীর নামে রয়েছে দেড় কোটি টাকার দুইটি ফ্ল্যাট। শুধু রামপুরার বনশ্রীতে এ ব্লকের ৭৯/১ মোল্লা ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় ১২শ’ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট কিনেই দেননি, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স এ দুটি দোকান। যেগুলোর বাজারমূল্য দুই কোটি টাকা।

গণপূর্তের একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেছেন, প্রকৌশলী মাসুদ রানা মিস্টার ১৫ পারসেন্ট হিসাবেই পরিচিত। তার অধীনে বর্তমানে বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের দরপত্রে অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলন দেখানো, দরপত্রের তথ্য ফাঁস করে দেয়া এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে দর কষাকষির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

বিল আটকে রাখার অভ্যাসও রয়েছে এই প্রকৌশলীর। মাসুদ রানাকে ২০ শতাংশ কমিশন দিলেই বিল পাস করা হয়। না হলে সেটি আটকে রাখেন দিনের পর দিন। ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে বিল তুলে গ্রহণ করার অভিযোগে মাসুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশও করা হয়েছিল।

কিন্তু তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী অফিসার হিসাবে সাবেক গণপূর্ত সচিব মো: শহীদ উল্লাহ খানের সঙ্গে বিশেষ সখ্যতার কারণে তার রিবুদ্ধে কেউ কিছু বলতেই পারতেন না। তবে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও এই মাসুদ রানা রয়ে গেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। চালিয়ে যাচ্ছেন কমশিন বাণিজ্য।

বিষয়গুলো নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দিলেও সুচতুর মাসুদ রানা সব কিছু ম্যানেজ করে ফেলেন। তাই বাধ্য হয়েই ঠিকাদাররা এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের দারস্থ হয়েছেন। তারা নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিশেষ করে তার এবং পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব বের করার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ ও সম্পদের বিষয়ে মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।