ঢাকা ০১:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খলনায়ক থেকে বিশ্বনেতা

আকাশ ইসলাম
  • সময় ১২:৩৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪
  • / 243

মোহাম্মদ বিন সালমান। মাত্র ৩৯ বছর বয়সী এই যুবরাজ বর্তমানে সৌদির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। যিনি এমবিএস নামেই অধিক পরিচিত। যিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদিও জীবনযাত্রায় একটি বিরাট রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব ফেলেছেন। সৌদি আরবের যুবরাজ হিসেবে, তার ক্ষমতা এবং প্রভাবের মাত্রা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তাকে বিশ্ব রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।

সৌদি রাজ পরিবারের ‘ক্রাউন প্রিন্স’ হিসেবে সালমানের অভিষেক হয়েছিল ২০১৭ সালের ২১ জুন। এরই মধ্যে নিজের শাসনামলের সাত বছর পূর্ণ করেছেন। এর আগে সৌদি আরবের বাইরে খুব কম মানুষ মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম জানতো।

২০১৫ সালে তাঁর বাবা যখন সৌদি আরবের বাদশাহ হন, তখন থেকে মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম আলোচনায় আসতে থাকে। চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স পদ থেকে সরিয়ে সালমান এই পদে নিয়ে আসা হয়। ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে যিনি আসীন হন, পরবর্তীতে তিনিই হবেন সৌদি আরবের বাদশাহ।

২০০৯ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানকে তাঁর বাবার বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার বাবা বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ তখন রিয়াদের গভর্নর ছিলেন।

ক্ষমতাগ্রহণের আগে থেকেই বেশ চৌকস ছিলো এই যুবরাজ। ২০১৪ সালে সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে। বিষাক্ত আংটি ব্যবহার করে বাদশাহকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি। আর এই তথ্য ফাঁস করেছিলেন দেশটির সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল-জাবির।

২০১৫ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইমেনে শুরু হয় সামরিক অভিযান। শুধু তাই না, সালমান ভিন্নমত একদমই পছন্দ করেন না। যে কারনে তিনি নারী অধিকারের জন্য আন্দোলনকারী, ধর্মীয় নেতা এবং ব্লগেরদেরও তিনি কারারুদ্ধ করেছেন।

২০১৭ সালে মি. সালমান ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিরোধীদের নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। বলা হয়ে থাকে, কথিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ধোয়া তুলে সে তখন সৌদি ১১জন প্রিন্স, চারজন মন্ত্রী এবং প্রায় ডজন খানেক সাবেক মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেন।

একই সময়ে রহস্যজনক এক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে তার চাচাতো ভাই প্রিন্স মনসুর বিন মাকরিন নিহত হয়। যিনি সৌদির আসির প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর এবং সাবেক ক্রাউন প্রিন্সের ছেলে।

ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্বগ্রহণের পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে, তুরস্কের ইস্তাম্ব ুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এই হত্যার পরপরই সাদ আল-জাবরি নামে সৌদি আরবের সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কানাডায় একটি হত্যাকারী দল পাঠানোরও অভিযোগ উঠে সালমানের বিরুদ্ধে।

আর এসব নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু করে। বিশেষ করে মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে তখন তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী সমস্বরে এবং প্রায় একই সুরে এ ঘটনায় সালমানের সমালোচনা করেন। কিন্তু যুবরাজ পরবর্তীতে সৌদি রাজনীতিতে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, সেই বিশ্ব নেতাদের সাথেই পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ সব বৈঠকে অংশ নেন।

শুধু তাই না; সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ক্রাউন প্রিন্সের হাত ধরেই বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে যাত্রা শুরু করেছে সৌদি আরব। এক দশক আগের সৌদি আরবের সাথে বর্তমান দেশটির তৈরি হয়েছে বিশাল ব্যবধান। যে কারনে সে সৌদির তরুন সমাজের কাছে এমবিবিএস হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছেন।

শেয়ার করুন

খলনায়ক থেকে বিশ্বনেতা

সময় ১২:৩৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪

মোহাম্মদ বিন সালমান। মাত্র ৩৯ বছর বয়সী এই যুবরাজ বর্তমানে সৌদির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। যিনি এমবিএস নামেই অধিক পরিচিত। যিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদিও জীবনযাত্রায় একটি বিরাট রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব ফেলেছেন। সৌদি আরবের যুবরাজ হিসেবে, তার ক্ষমতা এবং প্রভাবের মাত্রা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তাকে বিশ্ব রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।

সৌদি রাজ পরিবারের ‘ক্রাউন প্রিন্স’ হিসেবে সালমানের অভিষেক হয়েছিল ২০১৭ সালের ২১ জুন। এরই মধ্যে নিজের শাসনামলের সাত বছর পূর্ণ করেছেন। এর আগে সৌদি আরবের বাইরে খুব কম মানুষ মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম জানতো।

২০১৫ সালে তাঁর বাবা যখন সৌদি আরবের বাদশাহ হন, তখন থেকে মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম আলোচনায় আসতে থাকে। চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স পদ থেকে সরিয়ে সালমান এই পদে নিয়ে আসা হয়। ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে যিনি আসীন হন, পরবর্তীতে তিনিই হবেন সৌদি আরবের বাদশাহ।

২০০৯ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানকে তাঁর বাবার বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার বাবা বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ তখন রিয়াদের গভর্নর ছিলেন।

ক্ষমতাগ্রহণের আগে থেকেই বেশ চৌকস ছিলো এই যুবরাজ। ২০১৪ সালে সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে। বিষাক্ত আংটি ব্যবহার করে বাদশাহকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি। আর এই তথ্য ফাঁস করেছিলেন দেশটির সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল-জাবির।

২০১৫ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইমেনে শুরু হয় সামরিক অভিযান। শুধু তাই না, সালমান ভিন্নমত একদমই পছন্দ করেন না। যে কারনে তিনি নারী অধিকারের জন্য আন্দোলনকারী, ধর্মীয় নেতা এবং ব্লগেরদেরও তিনি কারারুদ্ধ করেছেন।

২০১৭ সালে মি. সালমান ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিরোধীদের নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। বলা হয়ে থাকে, কথিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ধোয়া তুলে সে তখন সৌদি ১১জন প্রিন্স, চারজন মন্ত্রী এবং প্রায় ডজন খানেক সাবেক মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেন।

একই সময়ে রহস্যজনক এক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে তার চাচাতো ভাই প্রিন্স মনসুর বিন মাকরিন নিহত হয়। যিনি সৌদির আসির প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর এবং সাবেক ক্রাউন প্রিন্সের ছেলে।

ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্বগ্রহণের পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে, তুরস্কের ইস্তাম্ব ুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এই হত্যার পরপরই সাদ আল-জাবরি নামে সৌদি আরবের সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কানাডায় একটি হত্যাকারী দল পাঠানোরও অভিযোগ উঠে সালমানের বিরুদ্ধে।

আর এসব নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু করে। বিশেষ করে মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে তখন তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী সমস্বরে এবং প্রায় একই সুরে এ ঘটনায় সালমানের সমালোচনা করেন। কিন্তু যুবরাজ পরবর্তীতে সৌদি রাজনীতিতে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, সেই বিশ্ব নেতাদের সাথেই পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ সব বৈঠকে অংশ নেন।

শুধু তাই না; সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ক্রাউন প্রিন্সের হাত ধরেই বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে যাত্রা শুরু করেছে সৌদি আরব। এক দশক আগের সৌদি আরবের সাথে বর্তমান দেশটির তৈরি হয়েছে বিশাল ব্যবধান। যে কারনে সে সৌদির তরুন সমাজের কাছে এমবিবিএস হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছেন।