কোস্ট ফাউন্ডেশনের জাহাঙ্গীরের দুর্নীতির প্রতিকার চায় ভুক্তভোগীরা

- সময় ০৯:৫১:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫
- / 173
কক্সবাজারে এনজিও সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি, সহকর্মীদের প্রতি দুর্ব্যবহার, হঠাৎ চাকরিচ্যুতি ও অর্থ লোপাটের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব অপকর্ম আড়াল করতে তিনি নিজেকে কখনো সাংবাদিক, কখনো পরিবেশবাদী নেতা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে কোস্ট ফাউন্ডেশনের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে কোস্ট ফাউন্ডেশনের সাবেক কর্মীরা এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার অপসারণ ও অনিয়মের প্রতিকার দাবি করেছেন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বিকেলে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক কর্মীরা তাদের ন্যায্য পাওনা ও বকেয়া বেতন-ভাতা দ্রুত পরিশোধের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংস্থাটির কক্সবাজার অঞ্চলের সাবেক আঞ্চলিক কর্মসূচি সমন্বয়কারী মো. আশেকুল ইসলাম।
এসময় সাবেক কর্মীরা জানান, কোস্ট ফাউন্ডেশন বর্তমানে বাংলাদেশে পরিচিত ও স্বনামধন্য একটি এনজিও। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে চলছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা। কর্মীরা নির্যাতিত হলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত। অনেক কর্মীকে তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করে তাদের ন্যায্য পাওনা আত্মসাৎ করার নজিরও রয়েছে।আর এসব অপকর্মের নায়ক টেকনাফের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম।
ভুক্তভোগীরা জানান, কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম একজন চরম দুর্নীতিবাজ, অর্থ লুটপাটকারী ও নারী কেলেংকারী সহ নানা অসংগতিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। এছাড়া তার অনিয়ম দুর্নীতি সামাল দিতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাব সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি কথিত সংগঠন। এই জাহাঙ্গীর নিজের অপকর্ম ঢাকতে ভাগিয়ে নিয়েছেন পত্র পত্রিকা ও সাংবাদিক সংগঠনের পদবী।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীকে ভুল পথে পরিচালিত করে দীর্ঘদিন ধরে এ অনৈতিক কাজ চালিয়ে আসছিলেন বিতর্কিত জাহাঙ্গীর। ফলে স্বেচ্ছাচারী আচরণ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নীরবতার ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী লিপ্সা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে, যা পূর্বে প্রমাণিত হয়েছে।
নির্বাহী পরিচালক যদি কক্সবাজারের বাস্তব পরিস্থিতি জাহাঙ্গীরের চোখ দিয়ে না দেখে নিজের বিকেক ও চোখ দিয়ে দেখতেন তাহলে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতোনা।
তারা আরও জানান, নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন নির্বাহী কমিটির সভাপতি ড. তোফায়েল আহমদ। জাহাঙ্গীর গংদের কর্মকাণ্ডে শেষমেশ বিরক্ত ও হতাশ হয়ে নির্বাহী কমিটির সভাপতি ড. তোফায়েল আহমেদ পদত্যাগ করেছেন। তার নির্দেশ অমান্য করা, নির্বাহী কমিটির বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বিল-ভাউচার অনুমোদন ছাড়াই খরচ করার কারণে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক কর্মীরা তাদের কিছু দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হল, কর্মীদের ন্যায্য পাওনা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের ও তাদের জামিনদারদের চেক, স্টাম্প ও মূল সনদপত্র ফেরত দিতে হবে। পূর্বে যাদেরকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদেরকে পুনর্বহাল করতে হবে অথবা তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও স্টাফ সিকিউরিটি ফান্ড ফেরত দিতে হবে। কোস্ট ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে। পদত্যাগকারী কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ ও যথাযথ তদন্তের জন্য কোস্ট ফাউন্ডেশনে প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। নারী কর্মীদের নিরাপত্তা প্রদান করে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে মূল সনদপত্র ফেরত না দেওয়ার কারণে কর্মীরা অন্য কোথাও চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছেন না, এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চকরিয়ার সাবেক এলাকা ব্যবস্থাপক আবু ছালেক, পেকুয়ার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সুজন কান্তি দে, খুটাখালীর সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক এসএম শফিউল কাদের, সোনারপাড়ার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সরওয়ার কামাল, মরিচ্যা শাখার ব্যবস্থাপক জাহেদুল ইসলাম, মাতারবাড়ি শাখার মাঠকর্মী শাহনাজ পারভীন, মরিচ্যা শাখার সাবেক মাঠকর্মী মো. তারেক, কামরুল ইসলাম কায়েস, চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি শাখার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান, পেকুয়া শাখার সাবেক মাঠকর্মী মোরশেদ আলম সেলিম, মরিচ্যা শাখার সাবেক শাখা হিসাব রক্ষক মো. ইউনুস কুতুবী, সাবেক সাপোর্ট স্টাফ মো. ছলিম উল্লাহ, সদর-১ শাখার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক আবুল আবছার ও রামু শাখার সাবেক মাঠকর্মী কামরুন নেছা সেবু প্রমুখ।
তাদের মতে জাহাঙ্গীর একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন। কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স আসলো কী ভাবে? চাকুরী করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনে গাড়িতে লাগানো হয় সিএনএন বাংলা ও বিভিন্ন পত্রিকার স্টিকার। এর আসল কারণ কি হতে পারে? তাহলে কি তার গাড়ীতে ইয়াবাসহ অস্ত্র পাচার করা হয়! তিনি জমির ব্যবসা করেন তা জানি, তবে মাদকের ব্যবসা করেন তাতো জানতাম না।
তার পরকীয়া জানেনা এমন লোকের সংখ্যা খুব কম আছে। বাজারে প্রচার আছে এক আওয়ামী লীগ নেত্রীর সাথে তার পরকীয়া ছিল। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে তার স্বামী স্টোক করে মারা যান।
এমন বিতর্কিত লোক যদি কোস্ট ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকেন কোন কর্মচারী স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না। এমনকি এখনো যারা মাটি কামড়ে কোস্ট ফাউন্ডেশনে চাকুরী করছেন তাদের মধ্যে চরম চাপা ক্ষোভ রয়েছে। অনেকের সাথে কথা বলে জানাযায় তাদের অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে যেতে হচ্ছে।
সাবেক কর্মীরা তাদের ন্যায্য পাওনা ও অধিকার আদায়ে সাংবাদিকদের সহায়তা কামনা করেছেন এবং তাদের দাবিসমূহ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।