ঢাকা ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেন মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে নেই আদম পাহাড়?

জুয়াইরিয়া খান
  • সময় ০২:৩৪:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 34

আদম পাহাড়

শ্রীলঙ্কার সুমধুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে এক রহস্যময় পাহাড়, যার নাম আদম পাহাড়। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি পবিত্র স্থান, কারণ বিশ্বাস করা হয় এখানে পৃথিবীর প্রথম মানব, হজরত আদম (আ.)-এর পায়ের ছাপ রয়েছে।

এই পবিত্র পাহাড় শুধুমাত্র মুসলমানদের কাছেই নয় বরং বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রিস্টানদের কাছেও পবিত্র স্থান হিসেবে গৃহীত। বৌদ্ধদের কাছে এটি বুদ্ধের পদচিহ্ন, হিন্দুরা একে শিবের পদচিহ্ন হিসেবে পূজা করে আর খ্রিস্টানরা ভাবেন এটি সেইন্ট থমাসের চিহ্ন।

পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল আকারের পায়ের ছাপটি রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এই পদচিহ্নটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। সেই সময় থেকেই এটি বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। এর জন্যই শ্রীলঙ্কার আদম পাহাড়ে প্রতি বছর হাজারো মানুষ সমবেত হয়।

আদম পাহাড়
আদম পাহাড়

মুসলমানদের মতে, এটি হজরত আদম (আ.)-এর পদচিহ্ন, যিনি পৃথিবীতে প্রথম এই স্থানে পা রেখেছিলেন। কিন্তু এই পদচিহ্ন নিয়ে বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাস ভিন্ন। বৌদ্ধরা মনে করেন, এটি গৌতম বুদ্ধের বাম পায়ের চিহ্ন। তাদের বিশ্বাস, বুদ্ধের এই পদচিহ্ন তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

হিন্দুরা একে শিবের পদচিহ্ন হিসেবে পূজা করে, কারণ শিবের পায়ের ছাপ এখানে চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস। অন্যদিকে, খ্রিস্টানদের কাছে এটি সেইন্ট থমাসের চিহ্ন, যিনি এই পাহাড় থেকে স্বর্গে যাওয়ার যাত্রা করেন বলে তারা মনে করেন।

এই রহস্যময় চূড়ায় পৌঁছানো মোটেই সহজ নয়। আঁকাবাঁকা পথ, বিষধর সাপ আর খাড়া ধাপ পার হয়ে শীর্ষে পৌছানো বেশ কঠিন। পাহাড়ের শীর্ষে উঠতে হয় ৪০০০ ধাপের একটি ধাতব সিঁড়ি দিয়ে, যার প্রতিটি ধাপই ঝুঁকিপূর্ণ।

অনেকের জন্য এটি একটি শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ। শীতকাল বা বর্ষাকালে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ পাহাড় মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকে।
পাহাড়টির ইতিহাসও আকর্ষণীয়। বলা হয়, ৮৫১ খ্রিস্টাব্দে আরব পর্যটক সোলাইমান প্রথম এই পাহাড়ের পদচিহ্ন আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ইবনে বতুতা ও মার্কো পোলোসহ অনেক পর্যটক এই পাহাড় ভ্রমণ করেন।

ইবনে বতুতা রত্নপুরা হয়ে চূড়ায় উঠেছিলেন। মার্কো পোলো চীন থেকে ভেনিস যাওয়ার পথে ১২৯২ সালে এই পাহাড় পরিদর্শন করেন এবং তিনি এটিকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন।

পাহাড়ের চূড়ায় উঠার সিঁড়িটি কখন তৈরি হয়েছিল বা কে নির্মাণ করেছিল তা এখনও অজানা। শীর্ষে পৌঁছাতে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে, এই ঝুঁকি নিয়েও বহু পর্যটক শীর্ষে পৌঁছে বিস্ময়ের সাথে সেই পদচিহ্নের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

দ্য স্যাক্রেড ফুটপ্রিন্ট
দ্য স্যাক্রেড ফুটপ্রিন্ট

‘দ্য স্যাক্রেড ফুটপ্রিন্ট: এ কালচারাল হিস্টরি অব অ্যাডামস পিক’ বইটিতে আদম পাহাড় সম্পর্কে বহু তথ্য রয়েছে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন যে এই চূড়াটি শ্রীলঙ্কার ইতিহাস লেখার বহু আগ থেকেই বিখ্যাত ছিল। পাহাড়ের উচ্চতা ২.২৪৩ মিটার এবং এটি এমন এক স্থানে অবস্থিত যা ভারত মহাসাগর থেকেও দৃশ্যমান। “আদম পাহাড় একটি রহস্যময় ও চিরন্তন আকর্ষণ। হাজারো পর্যটকের চরম কৌতূহল আর বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাস একত্রিত করে রেখেছে এই পবিত্র স্থানটিকে। পাহাড়ের প্রতিটি পাথর যেন একেকটি ইতিহাসের অধ্যায়, প্রতিটি ধূলিকণা যেন একেকটি রহস্য।

এভাবেই আদম পাহাড় যুগের পর যুগ ধরে আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করেছে, এখানে কি সত্যিই লুকিয়ে আছে আদিম মানবের পদচিহ্ন, নাকি এটি প্রকৃতিরই কোনো খেলা? উত্তর যাই হোক না কেন, আদম পাহাড় আজও আমাদেরকে সম্মোহিত করে। কেন আদম পাহাড় মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সে বিষয়ে গবেষণার দাবি তুলেছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা।

শেয়ার করুন

কেন মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে নেই আদম পাহাড়?

সময় ০২:৩৪:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রীলঙ্কার সুমধুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে এক রহস্যময় পাহাড়, যার নাম আদম পাহাড়। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি পবিত্র স্থান, কারণ বিশ্বাস করা হয় এখানে পৃথিবীর প্রথম মানব, হজরত আদম (আ.)-এর পায়ের ছাপ রয়েছে।

এই পবিত্র পাহাড় শুধুমাত্র মুসলমানদের কাছেই নয় বরং বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রিস্টানদের কাছেও পবিত্র স্থান হিসেবে গৃহীত। বৌদ্ধদের কাছে এটি বুদ্ধের পদচিহ্ন, হিন্দুরা একে শিবের পদচিহ্ন হিসেবে পূজা করে আর খ্রিস্টানরা ভাবেন এটি সেইন্ট থমাসের চিহ্ন।

পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল আকারের পায়ের ছাপটি রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এই পদচিহ্নটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। সেই সময় থেকেই এটি বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। এর জন্যই শ্রীলঙ্কার আদম পাহাড়ে প্রতি বছর হাজারো মানুষ সমবেত হয়।

আদম পাহাড়
আদম পাহাড়

মুসলমানদের মতে, এটি হজরত আদম (আ.)-এর পদচিহ্ন, যিনি পৃথিবীতে প্রথম এই স্থানে পা রেখেছিলেন। কিন্তু এই পদচিহ্ন নিয়ে বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাস ভিন্ন। বৌদ্ধরা মনে করেন, এটি গৌতম বুদ্ধের বাম পায়ের চিহ্ন। তাদের বিশ্বাস, বুদ্ধের এই পদচিহ্ন তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

হিন্দুরা একে শিবের পদচিহ্ন হিসেবে পূজা করে, কারণ শিবের পায়ের ছাপ এখানে চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস। অন্যদিকে, খ্রিস্টানদের কাছে এটি সেইন্ট থমাসের চিহ্ন, যিনি এই পাহাড় থেকে স্বর্গে যাওয়ার যাত্রা করেন বলে তারা মনে করেন।

এই রহস্যময় চূড়ায় পৌঁছানো মোটেই সহজ নয়। আঁকাবাঁকা পথ, বিষধর সাপ আর খাড়া ধাপ পার হয়ে শীর্ষে পৌছানো বেশ কঠিন। পাহাড়ের শীর্ষে উঠতে হয় ৪০০০ ধাপের একটি ধাতব সিঁড়ি দিয়ে, যার প্রতিটি ধাপই ঝুঁকিপূর্ণ।

অনেকের জন্য এটি একটি শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ। শীতকাল বা বর্ষাকালে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ পাহাড় মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকে।
পাহাড়টির ইতিহাসও আকর্ষণীয়। বলা হয়, ৮৫১ খ্রিস্টাব্দে আরব পর্যটক সোলাইমান প্রথম এই পাহাড়ের পদচিহ্ন আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ইবনে বতুতা ও মার্কো পোলোসহ অনেক পর্যটক এই পাহাড় ভ্রমণ করেন।

ইবনে বতুতা রত্নপুরা হয়ে চূড়ায় উঠেছিলেন। মার্কো পোলো চীন থেকে ভেনিস যাওয়ার পথে ১২৯২ সালে এই পাহাড় পরিদর্শন করেন এবং তিনি এটিকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন।

পাহাড়ের চূড়ায় উঠার সিঁড়িটি কখন তৈরি হয়েছিল বা কে নির্মাণ করেছিল তা এখনও অজানা। শীর্ষে পৌঁছাতে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে, এই ঝুঁকি নিয়েও বহু পর্যটক শীর্ষে পৌঁছে বিস্ময়ের সাথে সেই পদচিহ্নের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

দ্য স্যাক্রেড ফুটপ্রিন্ট
দ্য স্যাক্রেড ফুটপ্রিন্ট

‘দ্য স্যাক্রেড ফুটপ্রিন্ট: এ কালচারাল হিস্টরি অব অ্যাডামস পিক’ বইটিতে আদম পাহাড় সম্পর্কে বহু তথ্য রয়েছে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন যে এই চূড়াটি শ্রীলঙ্কার ইতিহাস লেখার বহু আগ থেকেই বিখ্যাত ছিল। পাহাড়ের উচ্চতা ২.২৪৩ মিটার এবং এটি এমন এক স্থানে অবস্থিত যা ভারত মহাসাগর থেকেও দৃশ্যমান। “আদম পাহাড় একটি রহস্যময় ও চিরন্তন আকর্ষণ। হাজারো পর্যটকের চরম কৌতূহল আর বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাস একত্রিত করে রেখেছে এই পবিত্র স্থানটিকে। পাহাড়ের প্রতিটি পাথর যেন একেকটি ইতিহাসের অধ্যায়, প্রতিটি ধূলিকণা যেন একেকটি রহস্য।

এভাবেই আদম পাহাড় যুগের পর যুগ ধরে আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করেছে, এখানে কি সত্যিই লুকিয়ে আছে আদিম মানবের পদচিহ্ন, নাকি এটি প্রকৃতিরই কোনো খেলা? উত্তর যাই হোক না কেন, আদম পাহাড় আজও আমাদেরকে সম্মোহিত করে। কেন আদম পাহাড় মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সে বিষয়ে গবেষণার দাবি তুলেছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা।