কেন কাজে আসছে না ডেভিল হান্ট?

- সময় ০৬:০৫:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 76
সারদেশে চলছে অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’। কিন্তু এর মাঝেও থেমে নেই চুরি, ছিনতাই, হত্যাকান্ড। মাথাচাড়া দিয়েছে চরমপন্থী সংগঠনগুলোও।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি মাঝ রাত থেকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা শুরু করা হয়। শেষ ১৪ দিনে এই অভিযানে ৮ হাজার ৭৯ জনকে আটক করা হয়। একই সময়ে অন্যান্য মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আরো ৫৭২ জন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শুরু থেকে এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাদের দাবি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে তাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও নির্যাতন করতে এই অভিযান। মূল অপরাধীরা এই অভিযানে অধরাই থেকে যাচ্ছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলাই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট হয়। তার মধ্যে এখনও বেহাত এক হাজার ৩৮৪টি। লুণ্ঠিত অনেক অস্ত্র পেশাদার অপরাধীদের হাতে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে – যা অপরাধ প্রবণতা বাড়ানোর একটি কারন।
পুলিশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে সারাদেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২৯৪ জন। এ সময়ে ১৭১টি চুরি, ৭১ ডাকাতি, ১০৫ অপহরণ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৪৪০টি।
গত বছর একই সময়ে হত্যার শিকার হন ২৩১ জন। ডাকাতি ২৯, চুরি ১৪১, অপহরণ ৪৩ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৪৩টি।
গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এবার চুরি, ডাকাতি, খুনাখুনি, অপহরণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। যদিও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান দিয়ে সমাজের প্রকৃত চিত্র বোঝানো কঠিন। কারণ, ঘটনার শিকার হয়ে অনেকে মামলা করতে চান না। আবার মামলা হলেও পুলিশ গড়িমসি করে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখনো পুলিশের মাঝে আতœবিশ্বাস ফিরে আসেনি। তারা এখনো দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সুযোগ নিয়েছেন অপরাধীরা।
এছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ থানায় নতুন মুখ হওয়ায় তারা এখনও এলাকাভিত্তিক অপরাধী এবং গোয়েন্দা তথ্য রাখার ক্ষেত্রে কাঙ্খিত জায়গায় যেতে পারেননি। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও অনেককে বড় অপরাধে জড়াতে দেখা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত অভিযানের নাম কেন ‘ডেভিল হান্ট’ রাখা হয়েছে – এ নিয়ে নানা ধরনের কৌতুহল তৈরি হয়েছে। ডেভিল হান্ট শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। মধ্যযুগীয় ইউরোপে ডেভিল হান্ট বলতে বোঝানো হতো জাদুকরী শিকার বা ডাইনী বধ, যেখানে নিরীহ মানুষকে শাস্তি দেওয়া হতো কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে।
আবার, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীতে এটি শামানদের এক ধরণের আচার-অনুষ্ঠান ছিল, যেখানে তারা বিশ্বাস করত যে অশুভ আত্মাকে বশে আনতে হবে বা ধ্বংস করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি প্রতিকী নাম। এর মাধ্যমে মূলত সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হবে। যার নেতৃত্বে থাকবেন সেনাবাহিনী। এছাড়াও এই দলে থাকবে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা।
এর আগে ২০০৭ সালে ‘ওয়ান ইলেভেন’ হিসেবে পরিচিত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও এই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করা হয়। সেবার যৌথবাহিনীর সেই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল ‘ অপারেশন র্যাপিড ফ্রিডম’।
ওই অভিযানের মাধ্যমে যৌথবাহিনী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সন্ত্রাস দমনে কাজ করেছিল। সে অভিযানে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলাসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের আটক করা হয়েছিল।
তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত অভিযান ছিলো ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’। ২০০২-০৩ সালে এই অভিযান পরিচালিত হয়। তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার।
দেশে তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিল। মানুষের মনে আতঙ্ক, উদ্বেগ, ক্ষোভ আর হতাশা জন্ম নিয়েছিল। ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনা করা হয়। এবং তাতে সফলতাও আসে।
এছাড়াও ২০১৬-২০১৭ সালে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনের জন্য আরো বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অপারেশন প্যাথফাইন্ডার, অপারেশন সানডাউন, অপারেশন স্টর্ম-২৬, অপারেশন ঈগল হান্ট, অপারেশন হিট ব্যাক, অপারেশন ম্যাক্সিমাম এক্সপ্রেশন, অপারেশন টোয়াইলাইট।
এদিকে, ডেভিল হান্টের ১৫ দিন পরও বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলার কোনো উন্নতি দেখতে না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। হতাশাও ব্যক্ত করেছেন তারা।