ঢাকা ০৯:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেনিয়া ক্রিকেট: এক বেদনাবিধুর ট্র্যাজেডি

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৯:১১:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪
  • / 262

সময়টা ১৯৯৬। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেই বাজিমাত। হারিয়েছিল ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে স্থান করে নিয়েছিল সেমিফাইনালে। এ দলটিই বিশ্বকাপের বাইরে দুবার ভারতকে দিয়েছিল হারের স্বাদ! টেস্ট না খেলা দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছানো সেই দলটি আজ কোথায় ?

বলছিলাম – আফ্রিকার দেশ কেনিয়া ক্রিকেট টিমের কথা। দলটির সেসব রঙিন স্মৃতি মলিন হতে একযুগ সময়ও লাগেনি।

দলটি ২০১৪ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মর্যাদা হারিয়েছে। পাঁচবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেয়া দলটি কিনা এক সময় বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব থেকেও ছিটকে পড়ে। ফলাফল ২০১৮ সালে নিজেদের ক্রিকেট বোর্ডের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেশটি।

১৯৯৭ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটের স্ট্যাটাস পাওয়া এ দলটিকে একসময় বাংলাদেশের শক্ত প্রতিপক্ষ ভাবা হয়। এর পেছনে অবশ্য যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ৯৭ সালে যখন বাংলাদেশ প্রথম আইসিসি ট্রফি জিতে, তখন স্টিভ টিকোলোর অনবদ্য ১৪৭ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান করে কেনিয়া। এছাড়া ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সাতটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে কেনিয়া ও বাংলাদেশ। সেখানে কেনিয়া জয় পায় ছয়টি ম্যাচে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে নিয়মিত দেশ কেনিয়াকে ছাড়িয়ে ওপরে উঠে এসেছে নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি, হল্যান্ড ও নেপালের মতো দল। একসময় কেনিয়ার চেয়ে ক্রিকেটীয় সামর্থ্যে অনেক পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তান ক্রিকেট টিম তো এখন সবার মুখে মুখে। কল্পনাকে হার মানিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দলটি পৌঁছে গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে।

যে দেশটি টেস্ট মর্যাদা চাচ্ছিল, তারা কীভাবে খেলাটাই ভুলে গেল, এর উত্তর নাইরোবির নেশন পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে দেশটির সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় স্টিভ টিকোলো বলেছেন, ‘কেনিয়ান ক্রিকেট প্রশাসকরা গোটা নব্বইয়ের দশক জাতীয় ক্রিকেট দলকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। পৃষ্ঠপোষক, আইসিসি থেকে পাওয়া অর্থ যে ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নয়নে ব্যয় করতে হয়, সেই ব্যাপারটিই ভুলে গিয়েছিলেন তারা। সে কারণেই নতুন প্রতিভা তৈরি হয়নি দেশটিতে।

কেনিয়ায় ক্রিকেট খেলার শুরু হয় ১৮৮০ এর দশকে ব্রিটিশ উপনিবেশিকদের হাত ধরে। জানা যায়, ১৮৯৯ সালে মোম্বাসায় এই সেটেলাররা প্রথম একটা ম্যাচ খেলেছিল। এরপর ১৯১০ সালে ‘অফিশিয়াল বনাম সেটেলার’ একটা তিন দিনের ম্যাচ শুরু হয়।

১৯৫১ সালে কেনিয়ার একটি জাতীয় দল গঠিত হয় এবং তারা তানগানিকার বিপক্ষে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। ১৯৫৩ সালে কেনিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। এটা ছিল কেনিয়ার প্রথম সব বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত কোনো সংস্থা।

১৯৮২ সালের আইসিসি ট্রফিতে কেনিয়া নিজের নামেই অংশ নেয়। ধীরে ধীরে আধুনিক ক্রিকেটে এক উঠতি পরাশক্তি হয়ে দাঁড়ায় দলটি।

ক্রিকেট বোর্ডে দুর্নীতি ও অন্তর্কোন্দলের কারণে কেনিয়ার ক্রিকেট সাফল্য এখন ইতিহাসের অংশ। তবে আশার কথা, ধীরে ধীরে দেশটিতে ফিরছে ক্রিকেট সংস্কৃতি। হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাচ্ছে খেলাটি।

শেয়ার করুন

কেনিয়া ক্রিকেট: এক বেদনাবিধুর ট্র্যাজেডি

সময় ০৯:১১:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪

সময়টা ১৯৯৬। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেই বাজিমাত। হারিয়েছিল ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে স্থান করে নিয়েছিল সেমিফাইনালে। এ দলটিই বিশ্বকাপের বাইরে দুবার ভারতকে দিয়েছিল হারের স্বাদ! টেস্ট না খেলা দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছানো সেই দলটি আজ কোথায় ?

বলছিলাম – আফ্রিকার দেশ কেনিয়া ক্রিকেট টিমের কথা। দলটির সেসব রঙিন স্মৃতি মলিন হতে একযুগ সময়ও লাগেনি।

দলটি ২০১৪ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মর্যাদা হারিয়েছে। পাঁচবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেয়া দলটি কিনা এক সময় বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব থেকেও ছিটকে পড়ে। ফলাফল ২০১৮ সালে নিজেদের ক্রিকেট বোর্ডের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেশটি।

১৯৯৭ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটের স্ট্যাটাস পাওয়া এ দলটিকে একসময় বাংলাদেশের শক্ত প্রতিপক্ষ ভাবা হয়। এর পেছনে অবশ্য যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ৯৭ সালে যখন বাংলাদেশ প্রথম আইসিসি ট্রফি জিতে, তখন স্টিভ টিকোলোর অনবদ্য ১৪৭ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান করে কেনিয়া। এছাড়া ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সাতটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে কেনিয়া ও বাংলাদেশ। সেখানে কেনিয়া জয় পায় ছয়টি ম্যাচে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে নিয়মিত দেশ কেনিয়াকে ছাড়িয়ে ওপরে উঠে এসেছে নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি, হল্যান্ড ও নেপালের মতো দল। একসময় কেনিয়ার চেয়ে ক্রিকেটীয় সামর্থ্যে অনেক পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তান ক্রিকেট টিম তো এখন সবার মুখে মুখে। কল্পনাকে হার মানিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দলটি পৌঁছে গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে।

যে দেশটি টেস্ট মর্যাদা চাচ্ছিল, তারা কীভাবে খেলাটাই ভুলে গেল, এর উত্তর নাইরোবির নেশন পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে দেশটির সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় স্টিভ টিকোলো বলেছেন, ‘কেনিয়ান ক্রিকেট প্রশাসকরা গোটা নব্বইয়ের দশক জাতীয় ক্রিকেট দলকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। পৃষ্ঠপোষক, আইসিসি থেকে পাওয়া অর্থ যে ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নয়নে ব্যয় করতে হয়, সেই ব্যাপারটিই ভুলে গিয়েছিলেন তারা। সে কারণেই নতুন প্রতিভা তৈরি হয়নি দেশটিতে।

কেনিয়ায় ক্রিকেট খেলার শুরু হয় ১৮৮০ এর দশকে ব্রিটিশ উপনিবেশিকদের হাত ধরে। জানা যায়, ১৮৯৯ সালে মোম্বাসায় এই সেটেলাররা প্রথম একটা ম্যাচ খেলেছিল। এরপর ১৯১০ সালে ‘অফিশিয়াল বনাম সেটেলার’ একটা তিন দিনের ম্যাচ শুরু হয়।

১৯৫১ সালে কেনিয়ার একটি জাতীয় দল গঠিত হয় এবং তারা তানগানিকার বিপক্ষে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। ১৯৫৩ সালে কেনিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। এটা ছিল কেনিয়ার প্রথম সব বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত কোনো সংস্থা।

১৯৮২ সালের আইসিসি ট্রফিতে কেনিয়া নিজের নামেই অংশ নেয়। ধীরে ধীরে আধুনিক ক্রিকেটে এক উঠতি পরাশক্তি হয়ে দাঁড়ায় দলটি।

ক্রিকেট বোর্ডে দুর্নীতি ও অন্তর্কোন্দলের কারণে কেনিয়ার ক্রিকেট সাফল্য এখন ইতিহাসের অংশ। তবে আশার কথা, ধীরে ধীরে দেশটিতে ফিরছে ক্রিকেট সংস্কৃতি। হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাচ্ছে খেলাটি।