ঢাকা ১১:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়াতে পেঁয়াজ চাষীদের হাহাকার

মো. মিশুক আহমেদ জয়, কুষ্টিয়া
  • সময় ১০:৩২:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 25

কুষ্টিয়াতে পেঁয়াজ চাষী

কুষ্টিয়া জেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৮০৪ হেক্টর জমিতে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হলেও কৃষকদের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়েছে। মূলত আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে জেলার হাজারো কৃষক। বিঘাপ্রতি অর্ধলাখ টাকা লোকসানের বোঝা বইতে গিয়ে অনেক কৃষককে হারাতে হচ্ছে চাষের জমি কিংবা হালের গরু।

কৃষকদের অভিযোগ, মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুমকে সামনে রেখে সরকার দেশের বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণে পিয়াজ আমদানি করেছে। এতেই লোকসানে পড়তে হয়েছে তাদের।

এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজে প্রতিবিঘায় কৃষকের খরচ গেছে লাখ টাকার ওপরে। রোপণ করার জন্য চাষিদের ছোট সাইজের পিয়াজ কিনতে হয় ৮ হাজার টাকা মণ। আকাশ ছোঁয়া দামের বীজ থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১৪-১৫শ’ টাকা মণ। তা ছাড়া রোপণের পরপরই অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ফলনও নেমে এসেছে ৪ ভাগের ১ ভাগে।

কৃষক, ব্যবসায়ী ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছর এই সময় পেঁয়াজের মণ ছিল ৩-৪ হাজার টাকা। অতিরিক্ত দাম হওয়ায় আমরা কিনেও খেতে পারিনি। তাই দুই পয়সা লাভের আশায় ৮ হাজার টাকা মণ হলেও বীজ কিনে পেঁয়াজ চাষ করেছি। আমার এক বিঘা ৪ কাঠা জমিতে পিয়াজ হয়েছে মাত্র ৩২ মণ। অন্তত ৮০ হাজার টাকা লোকসান হবে।

কুষ্টিয়াতে পেঁয়াজ চাষী
কুষ্টিয়াতে পেঁয়াজ চাষী

ওই এলাকার শারমীন আখতার নামের একজন নারী চাষী বলেন, সরকার আমাদের বিপদে ফেলে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনছে। আমরা চাষ করলেই সেই জিনিসের দাম কমে যায়। পিয়াজের দামে হতাশ এ অঞ্চলের কৃষকরা।

কয়েক দফা কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছেন। তবে আশ্বাস দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি দাবি করে কামাল নামে একজন বলেন, শুনছি বিদেশি পিয়াজে বাজার সয়লাব। ক্রেতারাও কম দামে পেঁয়াজ পেয়ে নাকি খুশি। কিন্তু আমাদের দুঃখকষ্ট তো সরকার বুঝতে পারে। কেউ কোনো খোঁজ নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলছেন, সব কৃষক সমান ক্ষতির মুখে পড়বে না। যদি ফলন স্বাভাবিক হয়, তাহলে দাম কিছুটা কম হলেও ক্ষতি এতো বড় হতো না।

তিনি বলেন, মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার যেসব কৃষক আগাম পেঁয়াজ চাষ করেছেন, তাদের পেঁয়াজ বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও ১৫-২০ দিন পরে যাদের পিয়াজ উঠবে, তারা ফলন ও দাম ভালো পাবেন বলে আশা করছি।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর কুষ্টিয়া জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৮০৪ হেক্টর জমিতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।

শেয়ার করুন

কুষ্টিয়াতে পেঁয়াজ চাষীদের হাহাকার

সময় ১০:৩২:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

কুষ্টিয়া জেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৮০৪ হেক্টর জমিতে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হলেও কৃষকদের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়েছে। মূলত আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে জেলার হাজারো কৃষক। বিঘাপ্রতি অর্ধলাখ টাকা লোকসানের বোঝা বইতে গিয়ে অনেক কৃষককে হারাতে হচ্ছে চাষের জমি কিংবা হালের গরু।

কৃষকদের অভিযোগ, মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুমকে সামনে রেখে সরকার দেশের বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণে পিয়াজ আমদানি করেছে। এতেই লোকসানে পড়তে হয়েছে তাদের।

এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজে প্রতিবিঘায় কৃষকের খরচ গেছে লাখ টাকার ওপরে। রোপণ করার জন্য চাষিদের ছোট সাইজের পিয়াজ কিনতে হয় ৮ হাজার টাকা মণ। আকাশ ছোঁয়া দামের বীজ থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১৪-১৫শ’ টাকা মণ। তা ছাড়া রোপণের পরপরই অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ফলনও নেমে এসেছে ৪ ভাগের ১ ভাগে।

কৃষক, ব্যবসায়ী ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছর এই সময় পেঁয়াজের মণ ছিল ৩-৪ হাজার টাকা। অতিরিক্ত দাম হওয়ায় আমরা কিনেও খেতে পারিনি। তাই দুই পয়সা লাভের আশায় ৮ হাজার টাকা মণ হলেও বীজ কিনে পেঁয়াজ চাষ করেছি। আমার এক বিঘা ৪ কাঠা জমিতে পিয়াজ হয়েছে মাত্র ৩২ মণ। অন্তত ৮০ হাজার টাকা লোকসান হবে।

কুষ্টিয়াতে পেঁয়াজ চাষী
কুষ্টিয়াতে পেঁয়াজ চাষী

ওই এলাকার শারমীন আখতার নামের একজন নারী চাষী বলেন, সরকার আমাদের বিপদে ফেলে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনছে। আমরা চাষ করলেই সেই জিনিসের দাম কমে যায়। পিয়াজের দামে হতাশ এ অঞ্চলের কৃষকরা।

কয়েক দফা কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছেন। তবে আশ্বাস দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি দাবি করে কামাল নামে একজন বলেন, শুনছি বিদেশি পিয়াজে বাজার সয়লাব। ক্রেতারাও কম দামে পেঁয়াজ পেয়ে নাকি খুশি। কিন্তু আমাদের দুঃখকষ্ট তো সরকার বুঝতে পারে। কেউ কোনো খোঁজ নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলছেন, সব কৃষক সমান ক্ষতির মুখে পড়বে না। যদি ফলন স্বাভাবিক হয়, তাহলে দাম কিছুটা কম হলেও ক্ষতি এতো বড় হতো না।

তিনি বলেন, মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার যেসব কৃষক আগাম পেঁয়াজ চাষ করেছেন, তাদের পেঁয়াজ বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও ১৫-২০ দিন পরে যাদের পিয়াজ উঠবে, তারা ফলন ও দাম ভালো পাবেন বলে আশা করছি।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর কুষ্টিয়া জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৮০৪ হেক্টর জমিতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।