কারাগারে কথা বলার ‘রেট কার্ড’!

- সময় ০৮:৫০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 403
কারাগারে আছেন, মন চাচ্ছে কথা বলবেন পরিবারের সঙ্গে, সেই সুবিধা সরকারিভাবেই দেয়া আছে। সেটি সপ্তাহে একদিন সর্বোচ্চ ৫ মিনিট। কিন্তু সরকারি সুবিধার বাইরে গিয়েও চাইলেই কথা বলতে পারবেন! শুধু কি কথা; সুুযোগ আছে ভিডিও কলে কথা বলারও।
কারামুক্ত কয়েকজন কয়েদি জানান, সরকার নির্ধারিত দিনের বাইরে কথা বলতে চাইলে গুণতে হবে কাড়ি কাড়ি টাকা ! অডিও না ভিডিও কলে কথা বলবেন; সেক্ষেত্রে রয়েছে আলাদা রেট কার্ড। অডিও কল ৫ মিনিটের জন্য ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা; আর ভিডিও কলের রেট কয়েদি বা আসামিভেদে তারতম্য থাকলেও মিনিট প্রতি কমপক্ষে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা গুণতে হয়।
কারাগারে কয়েদি অথবা আসামিদের জন্য প্রিজনার ক্যাশ (পিসি) তে টাকা জমা দিলেই মিলবে, কারাগারের অভ্যন্তরে ক্যান্টিনে থাকা সকল সুযোগ সুবিধা। কারাবিধি অনুযায়ী, বাইরের কোনো খাবার বা সামগ্রী নেয়ার কোনো সুযোগ না থাকলেও এমনটা ঘটছে নিয়মিত। হাই প্রোফাইল বন্দিদের সুযোগ সুবিধা দিতে যেন ব্যস্ত হয়ে থাকেন কারাগারে দায়িত্বপালনকারী একটি সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটের সদস্যদের চাহিদা মতো টাকা দিলে, আপনি কারাগারে বসেই পাবেন প্রায় সব সুযোগ সুবিধা। ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে শুরু করে নানা ধরনের বেআইনী সুবিধা দিতেই তৈরি করা হয়েছে অলিখিত এক রেট কার্ড। যা দেশের ৬৯ টি কারাগারের অধিকাংশ কারাগারেই বিদ্যমান।
সম্পদশালী কেউ কারাগারে গেলেই তাকে ঘিরে রাখে কারাগারের এই সিন্ডিকেড। কারারক্ষী থেকে শুরু করে জেল সুপার, এমনকি আরো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাগেও যায় সেই টাকা। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করেছে বাংলা অ্যাফেয়ার্স।
কারাগারে সম্পদশালী এক কয়েদি কারারক্ষীর মাধ্যমে জেলের ভিতরে আইফোন নিয়েছিলেন, বিনিময়ে কারারক্ষীকে দিতে হয়েছে ১ লাখ টাকা। এমন দুইটি ঘটনা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর জেল গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলা অ্যাফেয়ার্স।
কারারক্ষী এক জেল গোয়েন্দার সদস্য বলেন, আমাদের এখানে কিছুই করার নেই। সিনিয়র জেল সুপার, জেলার, ডেপুটি জেলার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের কারণে আমরা এমন তথ্য কাউকে দিলেও চাপে পরে যাই। উল্টো আমাদের মতো কারারক্ষীদের বদলি করে কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পাঠানো হয়।
এদিকে, দেশের ৬৯ টি কারাগারে গোয়েন্দা নজরদারির জন্য কারা গোয়েন্দা ইউনিট সৃষ্টি। সেখানে গোয়েন্দা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি জেলার মো. জাকির হাসান রিয়াল। বলেছেন, ‘ডিআইজি পদমার্যার কোনো কর্মকর্তার ওপর নজরদারি করার এখতিয়ার নেই’। বাংলা অ্যাফেয়ার্সের সাথে আলাপকালে এ কথা স্বীকার করেছেন জেল গোয়েন্দা ইউনিটের এই কর্মকর্তা।
সপ্তাহে একদিন সর্বোচ্চ ৫ মিনিট কথা বলতে পারবেন তালিকাভুক্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। বিনিময়ে দিতে হবে এক টাকা। করোনাকালীন সময়ে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে এ সার্ভিস চালু করা হয়েছিল, যা এখনো চলমান রয়েছে। এরই মাঝে খবর এসেছে, কারাগারে থেকেই ফেসবুক চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী লে. কর্ণেল (অব.) ফারুক খান।
যদিও কারাগারে এমন কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করে এ নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ সোমবার রাতেই একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। এতে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শকের (উন্নয়ন) স্বাক্ষর করেছেন।

চট্টগ্রামের ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে নিজের বাংলোতে পালিত গরুর দুধ কারাগারে বিক্রি করার বিষয়টি সামনে উঠে আসলে, এ বিষয়ে কথা হয়েছে রোববার কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেছে, বিষয়টি তিনি দেখছেন। তবে ডিআিইজি প্রিজনদের ওপর নজরদারি করার ক্ষমতা কেন নেই কারা গোয়েন্দাদের এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি কোনো জবাব দেননি।
তবে কারা গোয়েন্দা ইউনিটের ডেপুটি জেলার মো. জাকির হাসান রিয়াল বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেছেন অন্য কথা। কারাগারের সব বিষয় আমাদের পক্ষে নজরদারি করার এখতিয়ার নেই। কেন নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন বলে দাবি তার।
এদিকে, কারা মহাপরিদর্শ বাংলা অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে আলাপকালে আরো বলেন, আমি গেল বছরের ২৪ আগস্ট আইজি প্রিজন হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। রাতারাতি তো সব করা সম্ভব নয়।
কারাগার থেকে ভিডিও কলে কয়েদি/ আসামিরা কথা বলছেন কিভাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, এটার কোনো সুযোগ নেই। আপনার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে আমাদের দিয়ে সহায়তা করুন। বাংলা অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে ৯ মিনিটের আলাপচারিতায় বি. জেনা. সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, কারাগারকে আরো আধুনিকায়নসহ অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন।
সহকারি কারা মহাপরির্দশক (প্রশাসন) মো. আবু তালেব বলেন, আমি আগে কারা গোয়েন্দা ইউনিটে ছিলাম। এখন নেই। এই ইউনিট সরাসরি আমাদের আইজি প্রিজন স্যার দেখেন।