কাবার পরিচ্ছন্নতার চমকপদ আয়োজন

- সময় ১১:১৪:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
- / 3
প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার কর্মী। ১২টি বিশেষায়িত ওয়াশিং মেশিন। ৬৭৯টি অত্যাধুনিক ক্লিনিং ডিভাইস। কয়েক হাজার লিটার পানি ও ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয় পবিত্র কাবা শরীফের পরিচ্ছন্নতায়।
ঠিকই শুনেছেন! আর এই কাজে সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতিদিনের খরচ আনুমানিক ২-৫ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল। এই খরচের মধ্যে রয়েছে কর্মীদের বেতন, পানি, কেমিক্যাল, যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
সম্প্রতি, মাত্র ৩৫ মিনিটের মধ্যে কাবা শরীফের সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সম্পন্ন করে সৌদি কর্তৃপক্ষ একটি অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
পবিত্র কাবা শরীফ ও মসজিদে নববী, ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান। সাধারণ দিনগুলোতে প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ মুসল্লি মসজিদুল হারামে ইবাদত করেন। রমজান ও হজ মৌসুমে এই সংখ্যা বেড়ে ২০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষে পৌঁছে যায়।
এই দুই পবিত্রতম স্থানে প্রতিদিন প্রায় ৭০ টন থেকে ১০০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। যা পরিস্কারের জন্য কাজ করে বছরের ৩৬৫ দিন সাড়ে ৩ হাজার কর্মী। হাজীদের ইবাদতে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সে বিষয়টি বিশেষভাবে নজর রাখতে হয় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের।

এই পবিত্র স্থানের পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং কাজ। মসজিদুল হারামের ভেতরে ও বাইরে তিন হাজারেরও বেশি কনটেইনার স্থাপন করা হয়েছে, যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে করেছে আরও সহজ ও কার্যকর। এই বিশাল পরিমাণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও কর্তৃপক্ষ পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন।
কর্তৃপক্ষ পরিবেশের ক্ষতি কমাতে পরিবেশবান্ধব কেমিক্যাল এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার পানি এবং প্রচুর পরিমাণে জীবাণুনাশক কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়।
পরিচ্ছন্নতায় কেমিক্যাল ছাড়াও জমজমের পানি, ইরাকের বিশুদ্ধ গোলাপ দিয়ে তৈরি বিশেষ সুগন্ধি, উদ ও পারফিউম মিশ্রিত বিশেষ তরল পদার্থ ব্যবহার করা হয়। উন্নত মানসম্পন্ন এ উপাদানগুলোর দামও খুব চড়া।
মূলত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় থেকে পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার ঐতিহ্য চলে আসছে। অষ্টম হিজরিতে রাসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের পর পবিত্র কাবাঘর ধৌত করেন। সেই হিসেবে ১৪০০ বছর ধরে খানায়ে কাবাকে এইভাবেই পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। ইসলামের সম্মানিত খলিফারাও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। তাদের পর থেকে আজ পর্যন্ত এ প্রথা চালু রয়েছে।
সৌদি রাজপরিবারের সদস্যরা কাবাঘর ধোয়ার এই কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। জমজমের পানিতে কাপড় ভিজিয়ে, সেই কাপড় দ্বারা কাবাঘরের ভেতরের দেয়াল পরিস্কার করা হয়। এই কাজ আঞ্জাম দেয়ার একদিন আগে থেকেই জোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
কাবাঘর ধোয়ার পর, তোয়ালে দ্বারা পানি মুছে ফেলা হয়। মেহমানরা চলে যাওয়ার পর পরিচ্ছন্ন মেঝে কাপড় দ্বারা ঢেকে ফেলা হয়। তখন দেয়ালের উপর জমজমের পানিতে ভেজানো, গোলাপজলের পানি মিশ্রিত সাদা কাপড় দিয়ে মুছে দেওয়া হয়। কাবার ভেতরের দেয়াল ৩ মিটার লম্বা এবং তার ছাদ সবুজ রেশমের কাপড় দ্বারা আবৃত।