০৪:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের দ্বিমত

ঐক্যমত কমিশনে যেসব মতামত দিল বিএনপি

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৭:১৬:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
  • / 25

ঐক্যমত কমিশনে যেসব মতামত দিল বিএনপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কার সংক্রান্ত মতামত জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এতে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে দলটি।

রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের কাছে সংস্কার সংক্রান্ত মতামত জমা দেয় বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এ মতামত জমা দেয়। প্রতিনিধি দলের অন্যজন হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল হোসেন জবিউল্লাহ।

দলের পক্ষ থেকে ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা দেওয়ার পর সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপরে তারা যে স্প্রেডশিট আমাদের দিয়েছিলেন তার ওপর আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে মতামত দিয়েছি।

এসময় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপি প্রদত্ত মতামতের সারাংশ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। সেগুলো হলো-

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুদক নিয়ে তাদের স্প্রেডশিট সুপারিশে ২০টির মতো প্রস্তাবনা ছিল। এর মধ্যে আমরা ১১টিতে সরাসরি একমত। আর ৭-৮টায় আমরা মন্তব্যসহ নীতিগতভাবে একমত। শুধু একটি প্রস্তাবে আমরা মন্তব্যসহ ভিন্নমত পোষণ করেছি। কারণ ওখানে একটি আইন সংশোধনের বিষয় রয়েছে।

প্রশাসন

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রশাসন সংস্কারে আমরা যেসব প্রস্তাব পেয়েছি তার প্রায় অর্ধেক প্রস্তাবে একমত। সেখানে ২৬টি প্রস্তাবনা রয়েছে। বাকি অর্ধেকে আমাদের মতামত রয়েছে। বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোতে একটা জায়গায় আনা যাবে। তার মধ্যে একটা আছে কর্মকর্তাদের সচিব পর্যায়ে পদোন্নতির বিষয়। বিদ্যমান এসএসপি ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে, যার সঙ্গে আমরা একমত নই। তার পরিবর্তে মন্ত্রিপরিষদের একটি কমিটি করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি এর মধ্য দিয়ে প্রশাসনে রাজনীতিকরণের সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আমরা ভিন্নমত পোষণ করেছি। আরেকটা বিষয়ে প্রমোশনের ক্ষেত্রে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে সেখানে আদালতের একটা রায় আছে। আদালতের রায় বহাল থাকায় ওই বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাইনি।

বিচার বিভাগ

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে প্রায় সব প্রস্তাবে আমরা একমত। আপনারা জানেন আমাদের একত্রিশ দফার মধ্যে বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা বলেছি। বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে চার-পাঁচটি বিষয়ে আমরা মন্তব্যসহ অন্য মতামত দিয়েছি, এটা বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।

নির্বাচন ব্যবস্থা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ২৭ সুপারিশের মধ্যে অধিকাংশ প্রস্তাব সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটা আমরা ঠিক বুঝতে পারিনি। নির্বাচন ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রস্তাবে কিছু কিছু সংবিধান সংশ্লিষ্টতা আছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজ নয় যেটা রিপোর্টে এসেছে।

তিনি বলেন, এটা উনারা ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবেন। সে বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আমরা মতামত দিয়েছি। একটি বিষয়ে আমরা মতামত পজিটিভলি দিয়েছি, কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দিয়েছে যেগুলো আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা মনে করি এগুলো নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে থাকা দরকার। যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি, এটা যদি অন্য কোনো স্বতন্ত্র সংস্থার কাছে দেওয়া যায় তাহলে এনআইডি বিষয়ক সহযোগিতার জন্য নির্বাচন কমিশনকে বারবার অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হবে। এখন অবশ্য একটা আইন বহাল আছে, আওয়ামী লীগের সময়ে একটা আইন করা হয়েছে এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেওয়া হয়েছে। আইনটি এখনো বাতিল করা হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি এই আইনটি বাতিল করে এনআইডি পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া উচিত।

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, আরেকটা হচ্ছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ- এটা নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সাংবিধানিক এখতিয়ার। নির্বাচন কমিশনের সেই আইনে সামান্য একটা প্রিন্টিং মিসটেক ছিল সেটা নিয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দিয়েছি, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ করেছি, আইন মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি গিয়েছে; কিন্তু সেটা এখনো সংশোধন হয়নি। না হওয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন ডিলিমিটেশন সংক্রান্ত শুনানি করতে পারছে না। তার ফলে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা সরকারকে আহ্বান জানাবো অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধনী দিয়ে নির্বাচন কমিশনের হাতে ডিলিমিটেশনটা রাখা হোক। আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে রাখার বিষয়টি আমরা নাকচ করছি। পরবর্তীতে যদি বিস্তারিত আলোচনা করা যায় আমরা সেটা বুঝিয়ে বলবো। আরেকটা বিষয় হলো নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধতার জন্য সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহি করার জন্য একটা সুপারিশ এসেছে। তাতে আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে যারা আছেন এবং ভবিষ্যতে যারা আসবেন তাদের দায়বদ্ধতা সংসদীয় কমিটির কাছে না রেখে বিদ্যমান ব্যবস্থায় রাখা।

সংবিধান সংস্কার

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের যে বিষয়টি থাকার কথা ছিল সেটা তারা উল্লেখ করেননি। সংবিধানের প্রথম পৃষ্ঠাকে পুরোপুরি সংশোধনের প্রস্তাব আসছে। অনেকটা রিরাইটের মতো। যেখানে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে এক কাতারে নিয়ে আসা হয়েছে। যেটা এক কাতারে রাখাকে আমরা একমত বলে মনে করি না। সেটাকে পরে আমরা প্রকাশ করবো।

তিনি বলেন, তারা শুরুই করলেন রিপাবলিক দিয়ে। রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করবে। যেটাকে প্রজাতন্ত্র না বলে জনগণতন্ত্র বা নাগরিকতন্ত্র বা পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইংরেজিতে তারা লিখতে চান। কিন্তু বাংলার মধ্যে জনগণতন্ত্র বা নাগরিকতন্ত্র লিখতে চান। এটার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, মৌলিক অধিকার বা মূলনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা প্রস্তাব করেছি, সংবিধানের যেসব ধারা রয়েছে তার মধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে হয়তো মূলনীতির ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা যায়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে পূর্বের অবস্থা বহাল রাখার জন্য বলেছি।

তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা নামক আলাদা চ্যাপ্টার সংযোজন করার প্রস্তাব করেছে। আমরা মনে করি অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে, যাদের পার্লামেন্টারি অভিজ্ঞতা বা রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে এমন অভিমত আসতে পারে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার এনশিউর করতে হবে রাষ্ট্রকে। মৌলিক অধিকারের বাস্তব, সিভিল রাইটগুলো সীমিত, সোশ্যাল, কালচারাল বিষয়গুলো রাষ্ট্রের গুড গভার্নেন্সের ওপর ছেড়ে দিতে হয়।

তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে যেসব কমিশন গঠন বা কার্যাবলীর প্রস্তাব করেছে, সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধির কোনো ক্ষমতা থাকে। রাষ্ট্র নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হবে। এটা হলো আমাদের চেতনা।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব আমরা আগেই দিয়েছি। আমার মনে হয় এটার ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য তেরি হয়েছে। তাদের একটি প্রস্তাব হলো সদস্য সংখ্যা ১০৫, আমরা বলেছি ১০০র মধ্যে। কিন্তু মনোনয়ন কীভাবে হবে? সেটা পরবর্তী সময়ে আলোচনা করা যাবে।

তিনি বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন করার জন্য সাংবিধানিকভাবে ৫০ আসন থেকে ১০০ তে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছি। আমরা মনে করি এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়ার প্রয়োজন আছে। এই বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আমরা কয়েকদিন পরে সুপারিশ দেবো।

শেয়ার করুন

রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের দ্বিমত

ঐক্যমত কমিশনে যেসব মতামত দিল বিএনপি

সময় ০৭:১৬:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কার সংক্রান্ত মতামত জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এতে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে দলটি।

রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের কাছে সংস্কার সংক্রান্ত মতামত জমা দেয় বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এ মতামত জমা দেয়। প্রতিনিধি দলের অন্যজন হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল হোসেন জবিউল্লাহ।

দলের পক্ষ থেকে ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা দেওয়ার পর সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপরে তারা যে স্প্রেডশিট আমাদের দিয়েছিলেন তার ওপর আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে মতামত দিয়েছি।

এসময় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপি প্রদত্ত মতামতের সারাংশ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। সেগুলো হলো-

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুদক নিয়ে তাদের স্প্রেডশিট সুপারিশে ২০টির মতো প্রস্তাবনা ছিল। এর মধ্যে আমরা ১১টিতে সরাসরি একমত। আর ৭-৮টায় আমরা মন্তব্যসহ নীতিগতভাবে একমত। শুধু একটি প্রস্তাবে আমরা মন্তব্যসহ ভিন্নমত পোষণ করেছি। কারণ ওখানে একটি আইন সংশোধনের বিষয় রয়েছে।

প্রশাসন

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রশাসন সংস্কারে আমরা যেসব প্রস্তাব পেয়েছি তার প্রায় অর্ধেক প্রস্তাবে একমত। সেখানে ২৬টি প্রস্তাবনা রয়েছে। বাকি অর্ধেকে আমাদের মতামত রয়েছে। বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোতে একটা জায়গায় আনা যাবে। তার মধ্যে একটা আছে কর্মকর্তাদের সচিব পর্যায়ে পদোন্নতির বিষয়। বিদ্যমান এসএসপি ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে, যার সঙ্গে আমরা একমত নই। তার পরিবর্তে মন্ত্রিপরিষদের একটি কমিটি করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি এর মধ্য দিয়ে প্রশাসনে রাজনীতিকরণের সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আমরা ভিন্নমত পোষণ করেছি। আরেকটা বিষয়ে প্রমোশনের ক্ষেত্রে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে সেখানে আদালতের একটা রায় আছে। আদালতের রায় বহাল থাকায় ওই বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাইনি।

বিচার বিভাগ

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে প্রায় সব প্রস্তাবে আমরা একমত। আপনারা জানেন আমাদের একত্রিশ দফার মধ্যে বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা বলেছি। বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে চার-পাঁচটি বিষয়ে আমরা মন্তব্যসহ অন্য মতামত দিয়েছি, এটা বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।

নির্বাচন ব্যবস্থা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ২৭ সুপারিশের মধ্যে অধিকাংশ প্রস্তাব সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটা আমরা ঠিক বুঝতে পারিনি। নির্বাচন ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রস্তাবে কিছু কিছু সংবিধান সংশ্লিষ্টতা আছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজ নয় যেটা রিপোর্টে এসেছে।

তিনি বলেন, এটা উনারা ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবেন। সে বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আমরা মতামত দিয়েছি। একটি বিষয়ে আমরা মতামত পজিটিভলি দিয়েছি, কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দিয়েছে যেগুলো আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা মনে করি এগুলো নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে থাকা দরকার। যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি, এটা যদি অন্য কোনো স্বতন্ত্র সংস্থার কাছে দেওয়া যায় তাহলে এনআইডি বিষয়ক সহযোগিতার জন্য নির্বাচন কমিশনকে বারবার অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হবে। এখন অবশ্য একটা আইন বহাল আছে, আওয়ামী লীগের সময়ে একটা আইন করা হয়েছে এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেওয়া হয়েছে। আইনটি এখনো বাতিল করা হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি এই আইনটি বাতিল করে এনআইডি পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া উচিত।

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, আরেকটা হচ্ছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ- এটা নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সাংবিধানিক এখতিয়ার। নির্বাচন কমিশনের সেই আইনে সামান্য একটা প্রিন্টিং মিসটেক ছিল সেটা নিয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দিয়েছি, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ করেছি, আইন মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি গিয়েছে; কিন্তু সেটা এখনো সংশোধন হয়নি। না হওয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন ডিলিমিটেশন সংক্রান্ত শুনানি করতে পারছে না। তার ফলে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা সরকারকে আহ্বান জানাবো অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধনী দিয়ে নির্বাচন কমিশনের হাতে ডিলিমিটেশনটা রাখা হোক। আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে রাখার বিষয়টি আমরা নাকচ করছি। পরবর্তীতে যদি বিস্তারিত আলোচনা করা যায় আমরা সেটা বুঝিয়ে বলবো। আরেকটা বিষয় হলো নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধতার জন্য সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহি করার জন্য একটা সুপারিশ এসেছে। তাতে আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে যারা আছেন এবং ভবিষ্যতে যারা আসবেন তাদের দায়বদ্ধতা সংসদীয় কমিটির কাছে না রেখে বিদ্যমান ব্যবস্থায় রাখা।

সংবিধান সংস্কার

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের যে বিষয়টি থাকার কথা ছিল সেটা তারা উল্লেখ করেননি। সংবিধানের প্রথম পৃষ্ঠাকে পুরোপুরি সংশোধনের প্রস্তাব আসছে। অনেকটা রিরাইটের মতো। যেখানে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে এক কাতারে নিয়ে আসা হয়েছে। যেটা এক কাতারে রাখাকে আমরা একমত বলে মনে করি না। সেটাকে পরে আমরা প্রকাশ করবো।

তিনি বলেন, তারা শুরুই করলেন রিপাবলিক দিয়ে। রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করবে। যেটাকে প্রজাতন্ত্র না বলে জনগণতন্ত্র বা নাগরিকতন্ত্র বা পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইংরেজিতে তারা লিখতে চান। কিন্তু বাংলার মধ্যে জনগণতন্ত্র বা নাগরিকতন্ত্র লিখতে চান। এটার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, মৌলিক অধিকার বা মূলনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা প্রস্তাব করেছি, সংবিধানের যেসব ধারা রয়েছে তার মধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে হয়তো মূলনীতির ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা যায়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে পূর্বের অবস্থা বহাল রাখার জন্য বলেছি।

তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা নামক আলাদা চ্যাপ্টার সংযোজন করার প্রস্তাব করেছে। আমরা মনে করি অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে, যাদের পার্লামেন্টারি অভিজ্ঞতা বা রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে এমন অভিমত আসতে পারে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার এনশিউর করতে হবে রাষ্ট্রকে। মৌলিক অধিকারের বাস্তব, সিভিল রাইটগুলো সীমিত, সোশ্যাল, কালচারাল বিষয়গুলো রাষ্ট্রের গুড গভার্নেন্সের ওপর ছেড়ে দিতে হয়।

তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে যেসব কমিশন গঠন বা কার্যাবলীর প্রস্তাব করেছে, সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধির কোনো ক্ষমতা থাকে। রাষ্ট্র নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হবে। এটা হলো আমাদের চেতনা।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব আমরা আগেই দিয়েছি। আমার মনে হয় এটার ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য তেরি হয়েছে। তাদের একটি প্রস্তাব হলো সদস্য সংখ্যা ১০৫, আমরা বলেছি ১০০র মধ্যে। কিন্তু মনোনয়ন কীভাবে হবে? সেটা পরবর্তী সময়ে আলোচনা করা যাবে।

তিনি বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন করার জন্য সাংবিধানিকভাবে ৫০ আসন থেকে ১০০ তে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছি। আমরা মনে করি এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়ার প্রয়োজন আছে। এই বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আমরা কয়েকদিন পরে সুপারিশ দেবো।