ঢাকা ০৯:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এলজিইডির বিতর্কিত রশীদ-ই প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ১১:০০:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 360

এলজিইডির বিতর্কিত কর্মকর্তা প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আব্দুর রশীদ মিয়া, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। তিনি এ সংস্থার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।

২০২৩ সালে, যখন তিনি সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন, তখন তার অনিয়ম-দুর্নীতি ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রাথমিক তদন্তেই এর সত্যতা প্রকাশ পায়।

অভিযোগের বিষয়ে কয়েক দফায় তাকে তলব করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। বরং, অভিযোগটি চাপা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থেকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদে পদোন্নতি নেন। এ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা হলেও, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও তাকে কোনো ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয়নি। বরং, বিগত সরকারের সময় হয়রানির শিকার হওয়ার দাবিতে তিনি সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ছয় মাসের জন্য প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সরকারের একটি অদৃশ্য শক্তি বিপুল অর্থের বিনিময়ে তাকে এই পদে বসিয়েছে। যদিও পূর্ণাঙ্গভাবে তাকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। গুলশান-উত্তরার একটি অফিসে এ বিষয়ে সমঝোতা হয় এবং ‘ব্যবসায়িক দেনা-পাওনার’ একটি স্ট্যাম্প দলিলও প্রস্তুত করা হয়, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী যুক্ত ছিলেন। সেই স্ট্যাম্পে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন আব্দুর রশীদ মিয়া।

২০২৩ সালে শুরু হওয়া দুদকের ওই তদন্তও তিনি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে সহায়তা করেছেন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার তার এক বেয়াই, যিনি একসময় দুদকের সাবেক এক প্রভাবশালী কমিশনারের স্টাফ অফিসার ছিলেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, এই কর্মকর্তার সম্পদের তালিকায় রয়েছে—

রাজশাহীতে একটি পাঁচতলা ও একটি সাততলা বাড়ি
একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় ২৫ শতাংশ জমির ওপর ফুড গার্ডেন
সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কে আরেকটি ফুড গার্ডেন
বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় জমি
হিমছায়াপুর মৌজায় বিশাল বাগানবাড়ি
শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকার তলা মৌজায় ৫ একর জমি
বগুড়ার শেরপুর সেরময়া মৌজায় ১২ বিঘা জমি
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্ট
ঢাকা ও রাজশাহীতে নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট, বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর ও নগদ টাকা

এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়ায় সংস্থার বঞ্চিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার দায়িত্ব এমন বিতর্কিত কর্মকর্তার হাতে যাওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

শেয়ার করুন

এলজিইডির বিতর্কিত রশীদ-ই প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে

সময় ১১:০০:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আব্দুর রশীদ মিয়া, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। তিনি এ সংস্থার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।

২০২৩ সালে, যখন তিনি সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন, তখন তার অনিয়ম-দুর্নীতি ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রাথমিক তদন্তেই এর সত্যতা প্রকাশ পায়।

অভিযোগের বিষয়ে কয়েক দফায় তাকে তলব করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। বরং, অভিযোগটি চাপা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থেকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদে পদোন্নতি নেন। এ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা হলেও, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও তাকে কোনো ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয়নি। বরং, বিগত সরকারের সময় হয়রানির শিকার হওয়ার দাবিতে তিনি সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ছয় মাসের জন্য প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সরকারের একটি অদৃশ্য শক্তি বিপুল অর্থের বিনিময়ে তাকে এই পদে বসিয়েছে। যদিও পূর্ণাঙ্গভাবে তাকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। গুলশান-উত্তরার একটি অফিসে এ বিষয়ে সমঝোতা হয় এবং ‘ব্যবসায়িক দেনা-পাওনার’ একটি স্ট্যাম্প দলিলও প্রস্তুত করা হয়, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী যুক্ত ছিলেন। সেই স্ট্যাম্পে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন আব্দুর রশীদ মিয়া।

২০২৩ সালে শুরু হওয়া দুদকের ওই তদন্তও তিনি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে সহায়তা করেছেন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার তার এক বেয়াই, যিনি একসময় দুদকের সাবেক এক প্রভাবশালী কমিশনারের স্টাফ অফিসার ছিলেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, এই কর্মকর্তার সম্পদের তালিকায় রয়েছে—

রাজশাহীতে একটি পাঁচতলা ও একটি সাততলা বাড়ি
একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় ২৫ শতাংশ জমির ওপর ফুড গার্ডেন
সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কে আরেকটি ফুড গার্ডেন
বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় জমি
হিমছায়াপুর মৌজায় বিশাল বাগানবাড়ি
শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকার তলা মৌজায় ৫ একর জমি
বগুড়ার শেরপুর সেরময়া মৌজায় ১২ বিঘা জমি
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্ট
ঢাকা ও রাজশাহীতে নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট, বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর ও নগদ টাকা

এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়ায় সংস্থার বঞ্চিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার দায়িত্ব এমন বিতর্কিত কর্মকর্তার হাতে যাওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।