এবার ভারতে নিষিদ্ধ হলো হিযবুত তাহরীর
- সময় ১০:৩১:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
- / 232
বাংলাদেশ, পাকিস্তানের পর হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ভারত সরকারও। দেশটির মন্ত্রণালয় গত ১০ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনে এই ঘোষণা দিয়েছে। এতে বলাহয়, জিহাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভারতসহ বিশ্বব্যাপী ইসলামি রাষ্ট্র ও খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় হিযবুত তাহরীর।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, হিযবুত তাহরীর চরমপন্থা বিস্তারে যুক্ত রয়েছে। তারা সহজ-সরল তরুণদের আইএসের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করায় নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে।
এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এক প্রেস নোটের মাধ্যমে এই সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংগঠনটি ফের প্রকাশ্যে আসে। এবং গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে। তাৎক্ষনিকভাবে
ইউনূস সরকারও তাদের এক শীর্ষ নেতাকে আটক করেন এবং সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা আবারো আত্মগোপনে চলে যায়।
আদর্শগতভাবে হিযবুত তাহরীর-এর লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে ‘ইসলামি খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করা। তারা গণতন্ত্র বিরোধী। হিযবুত তাহরীর কুরআন সুন্নাহ’র আলোকে সংবিধান চান তারা। এরকম একটি খসড়া সংবিধানও সংগঠনটির রয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের কয়েকটি আরব দেশ, জার্মানি, তুরস্ক, পাকিস্তানের হিযবুত তাহরির নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্য ও তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অনেক দেশে সংগঠনটি বৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে।
হিযবুত তাহরীর প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৫৩ সালে ফিলিস্থিনের জেরুজালেমে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ তাকিউদ্দিন আন-নভাহানি। মূলত একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে, হিযবুত তাহরীরের মূল লক্ষ্য হলো ইসলামি খিলাফতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তারা বিশ্বাস করে যে, বর্তমানের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং পশ্চিমা ধাঁচের গণতান্ত্রিক কাঠামো ইসলামি সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
হিযবুত তাহরীরের দাবি, ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে একীভূত করা সম্ভব হবে এবং এটি মুসলিম বিশ্বের সব সমস্যার সমাধান এনে দেবে। তাদের মতে, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার মূল কারণ হলো ধর্মনিরপেক্ষতা ও পশ্চিমা প্রভাব, যা মুসলিম সমাজকে দুর্বল ও বিভক্ত করছে।
হিযবুত তাহরীর শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের লক্ষ্য অর্জনের কথা বলে, তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা অনেক সময় সহিংস পন্থার আশ্রয় নেয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ায় হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম দেখা গেছে।
বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীর প্রথম কার্যক্রম শুরু করে ২০০০ সালের দিকে। যদিও এই সংগঠনটি ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ করা হয়, তবুও তারা গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ সমাজের মধ্যে তারা প্রভাব বিস্তার সক্ষম হয়েছে। এবং তারা সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে নানা প্রচার-প্রচারণা চালায়।
বাংলাদেশে সংগঠনটির প্রসারিত হওয়ার প্রধান কারণ হলো দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। হিযবুত তাহরীর তরুণ সমাজকে ইসলামের খিলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন
দেখায়, যা অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিপথে পরিচালিত করে। এই সংগঠনের মাধ্যমে তরুণদের উগ্রবাদী চিন্তাভাবনার দিকে আকৃষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুদিন পর ৭ আগস্ট বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে সভা করতে দেখা যায় হিযবুত তাহরীরের কর্মীদের। একই দিনে সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটি সভা করে। এছাড়া সরকার পতনের পর হিযবুত তাহরীর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচী নিয়ে প্রকাশ্য কর্মসূচী করেছে।