ঢাকা ০৬:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এফবিসিসিআই নির্বাচন: মনোনীত পরিচালক বিষয়ে সুরাহা হয়নি

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১১:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 8

এফবিসিসিআই

দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অভ বাংলাদেশ চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) আগামী নির্বাচন এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে।

এজন্য ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সরকার-নিযুক্ত প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।

এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদে মনোনীত পরিচালক থাকবেন কি না, বিষয়টির এখনও সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে। বিদ্যমান আইনের আওতায় বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের মধ্যেও মনোনীত পরিচালক রাখার বিষয়ে বিপরীতমুখী যুক্তি রয়েছে। খসড়া বিধিমালায় মনোনীত পরিচালক রাখার বিধান রাখা হয়নি।

তবে খসড়াটি চূড়ান্ত করার সময় মনোনীত পরিচালক প্রথা রাখা হবে কি না, তা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি পদত্যাগ করেন। পরে গত ১১ সেপ্টেম্বর ১২০ দিনের জন্য সংগঠনটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার।

তবে খসড়া বিধিমালাটি জারি করে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা থাকায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসকের মেয়াদ আরও ১২০ দিন বাড়িয়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি টানা দুবারের বেশি কোনো বাণিজ্য সংগঠনে একই পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না। তবে বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করা সভাপতি এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যবসায়িক নেতাদের চাপের কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিধিমালা পাশ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারেনি বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া জরুরি।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব না থাকলে ব্যবসা ও বিনিয়োগের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয় না।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন হওয়া উচিত।

‘এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদে মনোনীত পরিচালক রাখা হলে তো আগের মতো বৈষম্য রয়েই যাবে। তাই মনোনীত পরিচালক প্রথা রাখার বদলে ক্লাস্টারভিত্তিক পরিচালক রাখা হলে তা বেশি ফলপ্রসু হতে পারে। এতে সব খাতের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা যাবে,’ বলেন তিনি।

বর্তমানে এফবিসিসিআই পর্ষদের মোট ৮০ জন পরিচালকের মধ্যে ৩৪ জন হন মনোনীত। এর মধ্যে ১৭ জন মনোনীত হন চেম্বার গ্রুপ থেকে ও ১৭ জন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে। বাকি পরিচালকরা নির্বাচিত।

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী, সরকার-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন নামে নতুন সমিতি গঠন করেছেন এবং তাদের প্রভাব ব্যবহার করে এফবিসিসিআই বোর্ডে মনোনীত পরিচালক হিসেবে পদ দখল করেছেন। এর ফলে মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছু ব্যবসায়ী এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে মনোনীত পরিচালক ব্যবস্থা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা পরিচালনা পর্ষদের আকার অর্ধেক করে ৮০ থেকে ৪০ জন সদস্য করারও প্রস্তাবও দিয়েছেন।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ১৯৯৪ সালে সালমান এফ রহমানকে সাধারণ পরিষদ সরাসরি সভাপতি নির্বাচিত করে। পরে নির্বাচন প্রক্রিয়াটি কিছুটা বদলানো হয়েছিল। সাধারণ পরিষদের সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচন শুরু করেন, আর সভাপতি ও সহ-সভাপতিদের বাছাই করতেন নির্বাচিত পরিচালকরা।

২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে বিধিমালা পরিবর্তন করে মনোনয়ন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর ফলে বৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন ও চেম্বারের যেসব নেতা সাধারণ পরিষদ নির্বাচনে জিততে পারেননি, তারা এফবিসিসিআই বোর্ডে পদ পান।

সেই সময়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকাসহ আটটি প্রধান বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের এফবিসিসিআই বোর্ডে নিযুক্ত করা হতো। বাকি পরিচালকরা কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হতেন।

তারপর থেকে মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা প্রতি বছর এক বা দুইজন করে ক্রমাগত বেড়েছে। ২০০৮ সালে আনিসুল হক যখন সভাপতি ছিলেন, তখন এফবিসিসিআই পর্ষদের সদস্যসংখ্যা ছিল ৩৮ জন। এখন এই সংখ্যা বেড়ে ৮০ জনে দাঁড়িয়েছে।

শেয়ার করুন

এফবিসিসিআই নির্বাচন: মনোনীত পরিচালক বিষয়ে সুরাহা হয়নি

সময় ১১:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অভ বাংলাদেশ চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) আগামী নির্বাচন এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে।

এজন্য ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সরকার-নিযুক্ত প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।

এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদে মনোনীত পরিচালক থাকবেন কি না, বিষয়টির এখনও সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে। বিদ্যমান আইনের আওতায় বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের মধ্যেও মনোনীত পরিচালক রাখার বিষয়ে বিপরীতমুখী যুক্তি রয়েছে। খসড়া বিধিমালায় মনোনীত পরিচালক রাখার বিধান রাখা হয়নি।

তবে খসড়াটি চূড়ান্ত করার সময় মনোনীত পরিচালক প্রথা রাখা হবে কি না, তা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি পদত্যাগ করেন। পরে গত ১১ সেপ্টেম্বর ১২০ দিনের জন্য সংগঠনটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার।

তবে খসড়া বিধিমালাটি জারি করে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা থাকায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসকের মেয়াদ আরও ১২০ দিন বাড়িয়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি টানা দুবারের বেশি কোনো বাণিজ্য সংগঠনে একই পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না। তবে বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করা সভাপতি এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যবসায়িক নেতাদের চাপের কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিধিমালা পাশ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারেনি বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া জরুরি।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব না থাকলে ব্যবসা ও বিনিয়োগের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয় না।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন হওয়া উচিত।

‘এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদে মনোনীত পরিচালক রাখা হলে তো আগের মতো বৈষম্য রয়েই যাবে। তাই মনোনীত পরিচালক প্রথা রাখার বদলে ক্লাস্টারভিত্তিক পরিচালক রাখা হলে তা বেশি ফলপ্রসু হতে পারে। এতে সব খাতের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা যাবে,’ বলেন তিনি।

বর্তমানে এফবিসিসিআই পর্ষদের মোট ৮০ জন পরিচালকের মধ্যে ৩৪ জন হন মনোনীত। এর মধ্যে ১৭ জন মনোনীত হন চেম্বার গ্রুপ থেকে ও ১৭ জন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে। বাকি পরিচালকরা নির্বাচিত।

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী, সরকার-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন নামে নতুন সমিতি গঠন করেছেন এবং তাদের প্রভাব ব্যবহার করে এফবিসিসিআই বোর্ডে মনোনীত পরিচালক হিসেবে পদ দখল করেছেন। এর ফলে মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছু ব্যবসায়ী এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে মনোনীত পরিচালক ব্যবস্থা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা পরিচালনা পর্ষদের আকার অর্ধেক করে ৮০ থেকে ৪০ জন সদস্য করারও প্রস্তাবও দিয়েছেন।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ১৯৯৪ সালে সালমান এফ রহমানকে সাধারণ পরিষদ সরাসরি সভাপতি নির্বাচিত করে। পরে নির্বাচন প্রক্রিয়াটি কিছুটা বদলানো হয়েছিল। সাধারণ পরিষদের সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচন শুরু করেন, আর সভাপতি ও সহ-সভাপতিদের বাছাই করতেন নির্বাচিত পরিচালকরা।

২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে বিধিমালা পরিবর্তন করে মনোনয়ন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর ফলে বৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন ও চেম্বারের যেসব নেতা সাধারণ পরিষদ নির্বাচনে জিততে পারেননি, তারা এফবিসিসিআই বোর্ডে পদ পান।

সেই সময়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকাসহ আটটি প্রধান বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের এফবিসিসিআই বোর্ডে নিযুক্ত করা হতো। বাকি পরিচালকরা কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হতেন।

তারপর থেকে মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা প্রতি বছর এক বা দুইজন করে ক্রমাগত বেড়েছে। ২০০৮ সালে আনিসুল হক যখন সভাপতি ছিলেন, তখন এফবিসিসিআই পর্ষদের সদস্যসংখ্যা ছিল ৩৮ জন। এখন এই সংখ্যা বেড়ে ৮০ জনে দাঁড়িয়েছে।