০১:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একুশের শক্তি আমাদের চেতনা-সংগ্রামের প্রেরণা

আকাশ ইসলাম
  • সময় ১২:০০:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 54

একুশের শক্তি: চেতনা ও সংগ্রামের প্রেরণা

২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক, আত্মত্যাগের অনন্য ইতিহাস। ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করার ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল, আর বাঙালির সেই আত্মত্যাগের ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। একুশের শক্তি মানে কেবলমাত্র ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নয়, এটি আমাদের জাতীয় চেতনার মূল ভিত্তি, যা প্রতিনিয়ত আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগায়।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষের উপর ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক দিক থেকে দমননীতি চালায়। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসকরা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র করলে বাংলার আপামর জনতা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকেই বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের সেই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় একুশের শক্তি—যা শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির চিরন্তন লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

একুশের শক্তি আমাদের জাতীয়তাবোধকে জাগ্রত করে। এই শক্তির প্রভাবেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পরবর্তীতে স্বাধিকার আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। একুশ আমাদের শিক্ষা দেয় যে অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করা যাবে না, অধিকার আদায় করতে হলে সংগ্রাম করতেই হবে।

একুশের আরেকটি বড় শক্তি হলো সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধ। ভাষার জন্য লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালির সাহিত্য, সংগীত, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি আরও দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের ভাষার মর্যাদা স্মরণ করি, যা বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকারের আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে।

একুশের শক্তি শুধু ইতিহাসের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। ভাষার মর্যাদা রক্ষা, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সমাজের শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো—এই সবকিছুতেই একুশের চেতনা আমাদের পথ দেখায়।

তরুণ প্রজন্মের দায়িত্ব একুশের শক্তিকে ধারণ করে একটি ন্যায্য, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা। প্রযুক্তি ও আধুনিকতার যুগেও মাতৃভাষার মর্যাদা অটুট রাখা এবং জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো আমাদের সবার দায়িত্ব।

একুশের শক্তি হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শক্তি, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার। এটি কেবল একটি দিনের আবেগ নয়, এটি একটি চিরন্তন প্রেরণা, যা আমাদের জাতিগত ঐক্য ও স্বাধীনতার পথচলায় নিরন্তর শক্তি জোগায়। একুশের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব, এটিই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

শেয়ার করুন

একুশের শক্তি আমাদের চেতনা-সংগ্রামের প্রেরণা

সময় ১২:০০:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক, আত্মত্যাগের অনন্য ইতিহাস। ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করার ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল, আর বাঙালির সেই আত্মত্যাগের ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। একুশের শক্তি মানে কেবলমাত্র ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নয়, এটি আমাদের জাতীয় চেতনার মূল ভিত্তি, যা প্রতিনিয়ত আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগায়।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষের উপর ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক দিক থেকে দমননীতি চালায়। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসকরা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র করলে বাংলার আপামর জনতা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকেই বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের সেই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় একুশের শক্তি—যা শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির চিরন্তন লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

একুশের শক্তি আমাদের জাতীয়তাবোধকে জাগ্রত করে। এই শক্তির প্রভাবেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পরবর্তীতে স্বাধিকার আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। একুশ আমাদের শিক্ষা দেয় যে অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করা যাবে না, অধিকার আদায় করতে হলে সংগ্রাম করতেই হবে।

একুশের আরেকটি বড় শক্তি হলো সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধ। ভাষার জন্য লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালির সাহিত্য, সংগীত, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি আরও দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের ভাষার মর্যাদা স্মরণ করি, যা বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকারের আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে।

একুশের শক্তি শুধু ইতিহাসের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। ভাষার মর্যাদা রক্ষা, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সমাজের শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো—এই সবকিছুতেই একুশের চেতনা আমাদের পথ দেখায়।

তরুণ প্রজন্মের দায়িত্ব একুশের শক্তিকে ধারণ করে একটি ন্যায্য, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা। প্রযুক্তি ও আধুনিকতার যুগেও মাতৃভাষার মর্যাদা অটুট রাখা এবং জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো আমাদের সবার দায়িত্ব।

একুশের শক্তি হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শক্তি, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার। এটি কেবল একটি দিনের আবেগ নয়, এটি একটি চিরন্তন প্রেরণা, যা আমাদের জাতিগত ঐক্য ও স্বাধীনতার পথচলায় নিরন্তর শক্তি জোগায়। একুশের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব, এটিই হোক আমাদের অঙ্গীকার।