ঢাকা ১০:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই মুহূর্তে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোংলা
  • সময় ০৫:২২:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 56

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে জনসমাবেশ

পশুর নদী ও সুন্দরবন বিনাশী রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এই মুহূর্তে বন্ধ করুন। ভারতের স্বার্থে বনবিনাশী এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পশুর নদীতে বিষাক্ত পারদের মাত্রা এখন অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে দশগুণ বেশি। সুন্দরবনের প্রাণ পশুর নদী দূষণের ফলে মাছসহ জলজপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ধরিত্রী বাঁচাতে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভরতার কোন বিকল্প নেই। রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প নবায়নযোগ্য সোলার সিস্টেম চালু করুন।

২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে মোংলার নারিকেলতলায় ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের আয়োজনে পশুর নদী ও সুন্দরবন বিনাশী রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল, নিরাপদ পানি, বায়ু এবং টেকসই জীবিকার দাবিতে জনসমাবেশে বক্তারা একথা বলেন।

শুক্রবার বিকেল ৩টায় জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পশুর রিভার ওয়াটারকিপার সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী পরিবেশযোদ্ধা মোঃ নূর আলম শেখ। জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার শরীফ জামিল।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে জনসমাবেশ
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে জনসমাবেশ

জনসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হাওড় রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জেল সোহেল। এছাড়া বক্তব্য রাখেন পরিবেশযোদ্ধা আব্দুর রশিদ হাওলাদার, জেলে সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল, কমলা সরকার, নারীনেত্রী শিখা হালদার, গফফার মোল্লা, ঢাংমারি ডলফিন সংরক্ষণ দলের টিম লিডার ইস্রাফিল বয়াতি, হাছিব সরদার প্রমূখ।

জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের যে ক্ষতি করছে তা ইতিমধ্যে সিইজিআইএস স্টাডি করে বলেছে। রামপাল পাওয়ার প্লান্ট কেবলমাত্র চালু হয়েছে তাই এই অবস্থা, আর যদি পুরোপুরি চালু হয় তাহলে এই অঞ্চলের পানি, মাছ এবং জলজপ্রাণী ধ্বংস হবে। যেসব জলজপ্রাণী বেঁচে থাকবে তারা বিষাক্ত কেমিক্যাল বহন করবে। ফলশ্রুতিতে এগুলো এক জায়গায় থাকবেনা। মানুষের শরীরে এবং খাদ্যশৃংখলায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে উত্তর দিক থেকে দক্ষিণে বায়ু প্রবাহের ফলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবন দূষণের মাধ্যমে জীববৈচিত্রের মারাত্মক ক্ষতি করছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যেহেতু এখনও পুরোপুৃরি চালু হয়নি, তাই এটি বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প নবায়নযোগ্য জ্বালানি সোলার সিস্টেম চালু করা উচিত। রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকলে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে, তারচেয়ে কম ক্ষতি হবে এটি বন্ধ করে দিলে।

প্রধান বক্তার বক্তৃতায় ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় পশুর নদে দূষণ দেখা গেছে। নদীতে ও সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ কমছে। জেলেরা কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছে। কাজেই জনস্বার্থে ও সুন্দরবন রক্ষায় অবিলম্বে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অতিরিক্ত নৌযান চলাচলের কারনে নদীভাঙনে বাস্তুহারা মানুষ নিরাপদ পানি ও টেকসই বসতির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই চলমান প্রকল্পসমুহ একটি জনসম্পৃক্ত সমন্বিত পর্যালোচনা ও পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি। সভাপতির বক্তৃতায় পশুর রিভার ওয়াটারকিপার সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী মোঃ নূর আলম শেখ বলেন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র এবং পশুর নদীর জলজপ্রাণী রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে হবে।

আমাদের দেশে প্রায় ৫ লাখ ৭৬ হাজার একর খাসজমি আছে যেখানে চাষাবাদ করা হয়না, ঘরবাড়ি্ও নেই। এসব জমির ১০ ভাগও ব্যবহার করা যায় তাতেই ২৫ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানো যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন বক্তরা।

শেয়ার করুন

এই মুহূর্তে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবি

সময় ০৫:২২:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

পশুর নদী ও সুন্দরবন বিনাশী রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এই মুহূর্তে বন্ধ করুন। ভারতের স্বার্থে বনবিনাশী এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পশুর নদীতে বিষাক্ত পারদের মাত্রা এখন অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে দশগুণ বেশি। সুন্দরবনের প্রাণ পশুর নদী দূষণের ফলে মাছসহ জলজপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ধরিত্রী বাঁচাতে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভরতার কোন বিকল্প নেই। রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প নবায়নযোগ্য সোলার সিস্টেম চালু করুন।

২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে মোংলার নারিকেলতলায় ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের আয়োজনে পশুর নদী ও সুন্দরবন বিনাশী রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল, নিরাপদ পানি, বায়ু এবং টেকসই জীবিকার দাবিতে জনসমাবেশে বক্তারা একথা বলেন।

শুক্রবার বিকেল ৩টায় জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পশুর রিভার ওয়াটারকিপার সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী পরিবেশযোদ্ধা মোঃ নূর আলম শেখ। জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার শরীফ জামিল।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে জনসমাবেশ
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে জনসমাবেশ

জনসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হাওড় রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জেল সোহেল। এছাড়া বক্তব্য রাখেন পরিবেশযোদ্ধা আব্দুর রশিদ হাওলাদার, জেলে সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল, কমলা সরকার, নারীনেত্রী শিখা হালদার, গফফার মোল্লা, ঢাংমারি ডলফিন সংরক্ষণ দলের টিম লিডার ইস্রাফিল বয়াতি, হাছিব সরদার প্রমূখ।

জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের যে ক্ষতি করছে তা ইতিমধ্যে সিইজিআইএস স্টাডি করে বলেছে। রামপাল পাওয়ার প্লান্ট কেবলমাত্র চালু হয়েছে তাই এই অবস্থা, আর যদি পুরোপুরি চালু হয় তাহলে এই অঞ্চলের পানি, মাছ এবং জলজপ্রাণী ধ্বংস হবে। যেসব জলজপ্রাণী বেঁচে থাকবে তারা বিষাক্ত কেমিক্যাল বহন করবে। ফলশ্রুতিতে এগুলো এক জায়গায় থাকবেনা। মানুষের শরীরে এবং খাদ্যশৃংখলায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে উত্তর দিক থেকে দক্ষিণে বায়ু প্রবাহের ফলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবন দূষণের মাধ্যমে জীববৈচিত্রের মারাত্মক ক্ষতি করছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যেহেতু এখনও পুরোপুৃরি চালু হয়নি, তাই এটি বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প নবায়নযোগ্য জ্বালানি সোলার সিস্টেম চালু করা উচিত। রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকলে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে, তারচেয়ে কম ক্ষতি হবে এটি বন্ধ করে দিলে।

প্রধান বক্তার বক্তৃতায় ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় পশুর নদে দূষণ দেখা গেছে। নদীতে ও সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ কমছে। জেলেরা কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছে। কাজেই জনস্বার্থে ও সুন্দরবন রক্ষায় অবিলম্বে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অতিরিক্ত নৌযান চলাচলের কারনে নদীভাঙনে বাস্তুহারা মানুষ নিরাপদ পানি ও টেকসই বসতির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই চলমান প্রকল্পসমুহ একটি জনসম্পৃক্ত সমন্বিত পর্যালোচনা ও পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি। সভাপতির বক্তৃতায় পশুর রিভার ওয়াটারকিপার সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী মোঃ নূর আলম শেখ বলেন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র এবং পশুর নদীর জলজপ্রাণী রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে হবে।

আমাদের দেশে প্রায় ৫ লাখ ৭৬ হাজার একর খাসজমি আছে যেখানে চাষাবাদ করা হয়না, ঘরবাড়ি্ও নেই। এসব জমির ১০ ভাগও ব্যবহার করা যায় তাতেই ২৫ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানো যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন বক্তরা।