উন্নয়ন তো দূরের কথা, বিদ্যুৎ পৌঁছেনি ১৬ গ্রামে

- সময় ০৮:২৬:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
- / 6
স্বাধীনতা ৫৪ বছরে উন্নয়নের ছোঁয়া তো দূরের কথা, এখনো পর্যন্ত প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকার ১৬টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগই পৌঁছায়নি। প্রান্তিক এই জনপদের গ্রামগুলোতে বিভিন্ন আর্থসামাজিক, সুযোগ সুবিধা ,শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে পিছিয়ে রয়েছে প্রায় দশ হাজার মানুষ। ওই এলাকায় যেনতেন ভাবে মুল সড়কটি পেলেও প্রতিটি গ্রামগুলোতে এখনো উন্নয়ন বাহিরে রয়ে গেছে। যার কারণে প্রতিদিন শিক্ষার্থী, রোগীসহ এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বঞ্চিত হচ্ছে কৃষিপণ্যের নায্যমুল্য দাম থেকেও। বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এমন চিত্র দেখা মিলেছে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৩ হতে ৬ নং ওয়ার্ডের।
রোয়ংছড়ি সদর হতে লুলাই বম পাড়া পর্যন্ত ১১কিলোমিটার সড়কের ঘেষে ১৬টি গ্রাম রয়েছে। ব্যঙছড়ি বড় পাড়া, অংজাই পাড়া, ব্যঙছড়ি নতুন, ব্যঙছড়ি বাজার, ব্যঙছড়ি ত্রিপুরা, ব্যঙছড়ি মুনয়ার বম, ব্যঙছড়ি খাবেহ, ব্যঙছড়ি রেফো, ব্যঙছড়ি পূর্ণবাসন, সিমন, রায়চন্দ্র ত্রিপুরা,শুকনা ঝিড়ি,কয়াল বম,সঙ্খমনি,তারাছা ত্রিপুড়া ও সর্বশেষ দুর্গম এলাকায় গ্রামের অবস্থান লুলাইং বম পাড়া। এই ১৬টি গ্রামের জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১০ হাজার অধিক মানুষের বসবাস। প্রতিটি গ্রামের বয়স প্রায় ৫০০ বছরের অধিক। কিন্তু সেসব গ্রামের এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। হারিকেন কিংবা সোলারে আলোতে জীবিনযাপনে ঘাটতি টানছে ওই গ্রামের মানুষজন।
দুর্গম এই প্রত্যন্ত এলাকায় ১৬টি গ্রামগুলোতে মারমা, ত্রিপুরা, বম ও তংচঙ্গ্যা এই চার সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসছে। এলাকায় জুড়ে রয়েছে ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১টি গীর্জা ও বৌদ্ধ উপসানালয় রয়েছে ৬টি। তাদের প্রধান জীবিকা নির্বাহ বলতে বাঁশ, গাছ ও জুম বাগানের উপর নির্ভরশীল। এসবের উপর নির্ভর করে চলে তাদের সংসার। সেসব ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এখনো আলোর মুখ দেখেনি এলাকাবাসীসহ ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। স্বাধীনতা পর থেকে নানা বঞ্চিত অবহেলায় পড়ে রয়েছে গ্রামগুলো। জনপ্রতিনিধিরা একের পর এক আশ্বাস দিয়ে গেলেও নির্বাচিত হওয়ার পর ফিরেও তাকায়নি সেসব গ্রামে। নানা প্রতিকূলতার কারণে এলাকায় দিন দিন বেড়েই চলছে স্কুলবিমুখ শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সেই সাথে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রেও তাদের জন্য নেই সরকারি তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, গত ১৭ বছরে কোন মন্ত্রী কিংবা স্থানীয় জেলা পরিষদ জনপ্রতিনিধিও এই এলাকাগুলোতে একবারেও পরিদর্শনে আসেনি। এখানকার মানুষদের জীবনযাত্রা মান কেমন চলছে সেটিও খোঁজ নেয়নি। এতে করে স্বাধীনতা আগ থেকে সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এখানকার হাজারো মানুষ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসারসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। প্রতিটি এলাকায় উন্নয়নের ছোয়াও একফোঁটা পড়েনি। আগামীতে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো আহ্বান জানান তারা।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলা সদর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে লুংলাই বম পাড়া পর্যন্ত এই পাহাড়ি জনপদে পাঁচশত বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছে মারমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গ্যা ও বম সম্প্রদায়ের দশ হাজারের অধিক মানুষ। এই জনগোষ্ঠীর অভাব-অনটন ও কাজের সন্ধানে শহরমূখী হওয়ায় তাদের অধিকাংশ শিশু এখন স্কুল বিমুখ। তাই এখনও অন্ধকারে পাশাপাশি আর্থ সামাজিক, সুযোগ-সুবিধা ও স্বাস্থ্য চিকিসা থেকে বঞ্চিত রয়েছে চার সম্প্রদায়ের মানুষ। চিকিৎসা সেবায় কোনো কার্যক্রম না থাকায় স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা-ঘাটের কোনো কাজ না করায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামের মানুষদের।
ব্যাঙছড়ি বড় পাড়া গ্রামপ্রধান( কারবারী) উথোয়াই প্রু মারমা বলেন, স্বাধীনতা পর থেকে কোন এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েনি। এখনো পর্যন্ত কোন গ্রামে বিদ্যু পৌছাতে পারেনি’ শুধু সোলার আর হারিকেনে আলোতে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এতে এলাকার মানুষদের মাঝে নানা দূর্ভোগ দেখা দেয়। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একবারও পরিদর্শনে আসেনি।
ওই এলাকার বাসিন্দা উবামং ও নুথোয়াই মারমা বলেন, গ্রামে গুলোতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপসানালয় রয়েছে কিন্তু এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এলাকাবাসীরা আর্থ সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। তারা চান এই সরকারে আমলে এলাকার মাঝে উন্নয়ন ছোঁয়া বয়ে আনুক।
রোয়াংছড়ি ১নং সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা বলেন, ব্যাঙছড়ি এলাকা জুড়ে স্কুল, কমিনিউটি সেন্টার ও প্রতিটি ঘরে সোলার প্যানেল দেয়া হয়েছে। সড়ক নির্মাণে জন্য বিভিন্ন স্থানে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর সরকার পরিবর্তন হওয়াই সেসব উন্নয়ন কাজ ধমকে আছে। আশা করছি দ্রুত উন্নয়ন ছোঁয়া বইবে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য নাংফ্রাং খুমী বলেন, আমি ব্যাঙছড়ি ওদিকে কোনদিন যায়নি। এলাকাবাসীরা দরখাস্ত না দিলে কি করব। তবুও দেখি কাল পরশু পরিদর্শনে যেতে পারি কিনা?