উত্তরাঞ্চল থেকে উধাও ভূর্গভস্থ পানি | Bangla Affairs
০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তরাঞ্চল থেকে উধাও ভূর্গভস্থ পানি

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১০:৩৯:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪
  • / 315

পানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন (ওয়ারপো) পরিচালিত এক জরিপে বলা হচ্ছে, প্রতি বছর দেশের উত্তরের কয়েকটি জেলায় পানির স্তর দ্রুততার সাথে নিচে নামছে।

জেলাগুলোর একটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ; যেটি বরেন্দ্র এলাকার অন্তর্ভুক্ত। গবেষণায় পাওয়া ফলাফল অনুযায়ি, এই জেলার গোমস্তাপুরে এখন গভীর নলকুপ থেকে পানি পেতে হলে ১৬০ ফুট পর্যন্ত মাটি ভেদ করতে হয়। দুই বছর আগেও এখানে ১৫৩ ফুট গভীরেই পানির স্তর পাওয়া যেত।

উত্তরের জেলা দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা, রাজশাহী, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলাকে একত্রে বরেন্দ্র অঞ্চল বলা হয়। ওয়ারপো পরিচালিত ওই গবেষণায় দাবি করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির পরিস্থিতি আগের চেয়ে দিন দিন খারাপ হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় ‘পানির সংকট তীব্র হয়ে ধরা দিচ্ছে।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির গড় স্তর ছিল ২৬ ফুট নিচে। সে সময় রাজশাহী জেলার তানোরে সর্বোচ্চ পানির স্তর নেমেছিল ৬৮ ফুট গভীরে। অর্থাৎ তখন ৬৮ ফুট মাটির গভীরে গেলে পানি পাওয়া যেত।

এক দশক পর অর্থাৎ ২০১০ সাল। যেসব এলাকায় আগে ২৬ ফুট মাটির গভীরে গেলেই পানি মিলতো সেসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির জন্য গড়ে ৫০ ফুট গভীরে নলক‚প বসাতে হতো। এক দশকে সেখানে পানির স্তর প্রায় ২৪ ফুট নিচে নেমে গেছে। সবশেষ ২০২১ সালে স্তর নামতে নামতে ৬০ ফুটে এসে দাড়ায়।

সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যাবস্থা নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। সংস্থাটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, গত তিন দশকে সরকারের নীতিমালা অমান্য করে ব্যক্তি পর্যায়ে কয়েকগুণ গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় গভীর নলক‚পের ঘনত্ব বেড়েছে, বিপরীতে পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে।

পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এক দশক কিংবা তার আগে যেসব নলকূপ বসানো হয়েছিল; সেসব থেকে এখন আর পানি মিলছে না। স্থানীয়দের সুপেয় পানির জন্য কখনো কখনো কয়েক কিলোমিটার দূরের নলকূপে যেতে হচ্ছে। এসব নলকূপ থেকে আগে সেচেও পানি দেয়া হয়। কিন্তু পানি না পাওয়ায় অনেক জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ বিকল্পভাবে পানির ব্যবস্থা করলেও তাতে ফসল উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।

কেবল যত্রতত্র নলকূপ বসানো নয়; এই সংকটের পেছনে আরো বেশ কয়েকটি কারন চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের একটি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে গত কয়েক বছরে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বৃষ্টিপাত কমেছে। যে কারনে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর বাড়েনি।

প্রতিবেশি ভারতের পদ্মা ও তিস্তার উজানে বাঁধ দেয়ার কারনে এ অঞ্চলের বিভিন্ন নদনদীর গতিপথ পরিবর্তণ হয়েছে। চর পড়ে কমেছে পানি ধারন ক্ষমতাও। যে কারনে বৃষ্টির পানির সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এটিও এ অঞ্চলের পানির স্তর নিচে নামার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওয়ারপো তার গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং পানি সংকটাপন্ন অঞ্চলগুলোর পরিধি প্রসারিত হচ্ছে। বরেন্দ্র এলাকাতেও এমন এলাকা দিন দিন বাড়ছে।

শেয়ার করুন

উত্তরাঞ্চল থেকে উধাও ভূর্গভস্থ পানি

সময় ১০:৩৯:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪

পানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন (ওয়ারপো) পরিচালিত এক জরিপে বলা হচ্ছে, প্রতি বছর দেশের উত্তরের কয়েকটি জেলায় পানির স্তর দ্রুততার সাথে নিচে নামছে।

জেলাগুলোর একটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ; যেটি বরেন্দ্র এলাকার অন্তর্ভুক্ত। গবেষণায় পাওয়া ফলাফল অনুযায়ি, এই জেলার গোমস্তাপুরে এখন গভীর নলকুপ থেকে পানি পেতে হলে ১৬০ ফুট পর্যন্ত মাটি ভেদ করতে হয়। দুই বছর আগেও এখানে ১৫৩ ফুট গভীরেই পানির স্তর পাওয়া যেত।

উত্তরের জেলা দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা, রাজশাহী, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলাকে একত্রে বরেন্দ্র অঞ্চল বলা হয়। ওয়ারপো পরিচালিত ওই গবেষণায় দাবি করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির পরিস্থিতি আগের চেয়ে দিন দিন খারাপ হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় ‘পানির সংকট তীব্র হয়ে ধরা দিচ্ছে।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির গড় স্তর ছিল ২৬ ফুট নিচে। সে সময় রাজশাহী জেলার তানোরে সর্বোচ্চ পানির স্তর নেমেছিল ৬৮ ফুট গভীরে। অর্থাৎ তখন ৬৮ ফুট মাটির গভীরে গেলে পানি পাওয়া যেত।

এক দশক পর অর্থাৎ ২০১০ সাল। যেসব এলাকায় আগে ২৬ ফুট মাটির গভীরে গেলেই পানি মিলতো সেসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির জন্য গড়ে ৫০ ফুট গভীরে নলক‚প বসাতে হতো। এক দশকে সেখানে পানির স্তর প্রায় ২৪ ফুট নিচে নেমে গেছে। সবশেষ ২০২১ সালে স্তর নামতে নামতে ৬০ ফুটে এসে দাড়ায়।

সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যাবস্থা নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। সংস্থাটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, গত তিন দশকে সরকারের নীতিমালা অমান্য করে ব্যক্তি পর্যায়ে কয়েকগুণ গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় গভীর নলক‚পের ঘনত্ব বেড়েছে, বিপরীতে পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে।

পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এক দশক কিংবা তার আগে যেসব নলকূপ বসানো হয়েছিল; সেসব থেকে এখন আর পানি মিলছে না। স্থানীয়দের সুপেয় পানির জন্য কখনো কখনো কয়েক কিলোমিটার দূরের নলকূপে যেতে হচ্ছে। এসব নলকূপ থেকে আগে সেচেও পানি দেয়া হয়। কিন্তু পানি না পাওয়ায় অনেক জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ বিকল্পভাবে পানির ব্যবস্থা করলেও তাতে ফসল উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।

কেবল যত্রতত্র নলকূপ বসানো নয়; এই সংকটের পেছনে আরো বেশ কয়েকটি কারন চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের একটি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে গত কয়েক বছরে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বৃষ্টিপাত কমেছে। যে কারনে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর বাড়েনি।

প্রতিবেশি ভারতের পদ্মা ও তিস্তার উজানে বাঁধ দেয়ার কারনে এ অঞ্চলের বিভিন্ন নদনদীর গতিপথ পরিবর্তণ হয়েছে। চর পড়ে কমেছে পানি ধারন ক্ষমতাও। যে কারনে বৃষ্টির পানির সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এটিও এ অঞ্চলের পানির স্তর নিচে নামার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওয়ারপো তার গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং পানি সংকটাপন্ন অঞ্চলগুলোর পরিধি প্রসারিত হচ্ছে। বরেন্দ্র এলাকাতেও এমন এলাকা দিন দিন বাড়ছে।