পুরো ক্যাম্পজুড়েই আতঙ্ক
ঈদের দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলার হুমকি

- সময় ১১:০৭:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
- / 73
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো আবারও সহিংসতার আতঙ্কে রয়েছে। সম্প্রতি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-এর শীর্ষ নেতা আবু আম্মার আতাউল্লাহ জুনুনী ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের পর ক্যাম্পজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আরসার সদস্যদের হুমকির কারণে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চাইছে না। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে এ পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এমনকি বিভিন্ন গ্রুপে ঈদের দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলার হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয়দের মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যা ক্রমশ ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। আরসার সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভয়েস রেকর্ড ও পোস্টের মাধ্যমে আতাউল্লাহর মুক্তির দাবি জানাচ্ছে এবং সরকারকে হুমকি দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি কমে যেতে পারে।
রোহিঙ্গা কমিউনিটির বিশিষ্ট নেতা আরিফ উল্লাহ ও মাস্টার মুহিব উল্লাহ একসময় শিক্ষিত ও সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। তবে তারা আরসার সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। মাস্টার মুহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সাক্ষী হামিদ হোসেন মাঝি এক ভিডিও বার্তায় জানান, ক্যাম্পে শিক্ষিত ও সচেতন রোহিঙ্গাদের একে একে হত্যা করা হয়েছে। তিনি জানান, সাক্ষী হওয়ার কারণে তিনি দীর্ঘ দুই বছর ধরে ক্যাম্পের বাইরে আশ্রয় নিয়েছেন এবং তার পরিবার আত্মগোপনে রয়েছে। তিনি আতাউল্লাহর ফাঁসির দাবি জানিয়ে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চান।
অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পে আরসার পাশাপাশি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আলীকিন নামে আরেকটি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে এবং আতাউল্লাহকে হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে একটি ভয়েস রেকর্ডে উঠে এসেছে।

রোহিঙ্গা ফেসবুক গ্রুপগুলোতে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট অনুযায়ী, ঈদের দিন ক্যাম্পের মসজিদগুলোতে হামলার আশঙ্কা রয়েছে। পোস্টগুলোর দাবি, এই হামলার নির্দেশনা আসতে পারে আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে এবং বাস্তবায়ন করবে আরসার সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে এসব পোস্টে।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তবে ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ মাঝি ও হেড মাঝিদের হাতে নেই, বরং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে চলে গেছে। স্থানীয় প্রশাসনও কার্যকরভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে, সন্ত্রাসীরা নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে, না দিলে হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।
সূত্র মতে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং ইয়াবা ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে একাধিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক রোহিঙ্গা জানান, নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা না দিলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নানা অপরাধ করলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশাল ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ করা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষেও সহজ নয়। রাত নামলেই আতঙ্ক বাড়ে, যা ভবিষ্যতে বড় সংকট তৈরি করতে পারে।’
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন অপরাধ বাড়ছে। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নজরদারি করছি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’