ইসলামী যুব আন্দোলনের জন্য হঠাৎ বন্ধ বইমেলার কাজ
- সময় ১২:৩৭:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
- / 22
ফেব্রুয়ারি মাস মানেই বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গনে অমর একুশে বইমেলা। স্থান সংস্কুলানের কারণে বাংলা একাডেমির উল্টোপাশেই সোহরাওয়ার্দীও ব্যবহৃত হয় বই মেলার কাজে। তবে এবার মেলার শুরুতেই তা হচ্ছে না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ হঠাৎ থেমে গেছে; ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের ‘যুব কনভেনশন’ এর জন্য তা চার দিন বন্ধ থাকার উপক্রম হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে উদ্যানের যে অংশে বইমেলার নির্মাণ কাজ চলছিল সেখানে এসে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখতে বলেন সংগঠনটির পরিচয় দেওয়া একদল ব্যক্তি।
তারা সম্মেলনের জন্য উদ্যান ব্যবহারের অনুমোদন নেওয়ার কথা বলেন। এরপর কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে বইমেলা ২০২৫ এর পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব সরকার আমিন বলেন, সন্ধ্যা থেকে আমাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি গণপূর্ত অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।
এখন তো প্রতিটা ঘণ্টাই আমাদের কাছে একেকটা দিনের মত। বইমেলার তো আর বেশিদিন নেই। যথাসময়ে প্রস্তুতি শেষ না হলে তো ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরু করা যাবে না।
তবে যুব সম্মেলনের আগে চার দিন বইমেলার কাজ বন্ধ রাখলে খুব একটা সমস্যা হবে না বলে মনে করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কবির।
তিনি বলেন, ১৭ তারিখ সম্মেলন হয়ে গেলে, এর পর থেকে কাজ করার জন্য তো আরো সময় থাকবেই।
মেলা আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে বইমেলার প্রস্তুতি বিঘ্নিত হবে। এখন থেকে যতটা সময় কাজ চালু রাখা যাবে না, পূর্ণ প্রস্তুতিসহ মেলা শুরু করতে ততটাই ঝামেলা হবে।
আগামী ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অংশে ওই ‘যুব কনভেনশন’ হওয়ার কথা। এটির আয়োজক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুব সংগঠন ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ।
এজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দেখভালকারী গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনুমোদন পাওয়ার কথা তুলে ধরেন সোমবার সন্ধ্যায় মাঠে আসা সংগঠনটির কর্মীরা। পরে অধিদপ্তরের এক প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইসলামী যুব আন্দোলনকে অনুমোদন দেওয়ার তথ্য দিয়ে বলেন, বিষয়টি ‘ওভারল্যাপিং’ হয়ে গেছে।
ওই সম্মেলনের চার দিন আগে এবং উদ্যানের যে অংশে মেলা হওয়ার কথা সেখান থেকে সম্মেলন স্থল কিছুটা দূরবর্তী হলেও মেলার কাজ বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলা একাডেমি, প্রকাশক ও নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা।
মেলা আয়োজনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলেন, এবার মেলায় পাঁচ শতাধিক স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ চলছে। হঠাৎ করে কয়েকদিন কাজ বন্ধ রাখা হলে উদ্বোধনের নির্ধারিত দিনের আগে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।
তারা বলেন, এরইমধ্যে মেলায় কোন কোন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে, তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারি লটারির মাধ্যমে প্রকাশকদের স্টল বুঝিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মেলা পরিচালনা কমিটির।
এর আগেই স্টল বানিয়ে প্রস্তুতির কাজ শেষ করতে হবে। ১৭ জানুয়ারি এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে নির্ধারিত সময়ে স্টলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। আর সম্মেলনে যোগ দিতে আসা ব্যক্তিরা উদ্যানজুড়ে অবস্থান নিলে এখন যতটুকু কাজ হয়েছে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এতে কাজ আরও বাড়বে বলে শঙ্কা তাদের।
বইমেলার আগে এ মাঠে সম্মেলন হলে, এর প্রভাব কেমন হতে পারে? জানতে চাইলে মেলার সদস্য সচিব সরকার আমিন বলেন, সম্মেলনের মত একটা বড় আয়োজন হওয়ার পর সেই প্যান্ডেল ভেঙে মাঠকে বইমেলার উপযোগী করা কতটা সম্ভব হবে? এই বিষয়টি তো সবারই চিন্তা করা উচিত।
তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্মেলনের কারণে বইমেলার সমস্যা হবে না বলে মনে করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কবির।
তিনি বলেন, “সম্মেলনের জন্য যথাযথ জায়গা থেকে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি নিয়েছি। এখন বইমেলার সঙ্গে আমাদের তো কোনো বিরোধ নেই। আর বইমেলা তো ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে, আমাদের সম্মেলন হবে শুধু ১৭ জানুয়ারি। এই সম্মেলনের জন্য দুই মাস ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের কারণে বইমেলার কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করি না।”
ক্ষমতার পালাবদলের নতুন প্রেক্ষাপটে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান : নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপি বইমেলা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
বিগত বছরের মতোই এবারের মেলাও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পুরোদমে চলছিল প্রস্তুতি।
গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে বইমেলার জন্য ১ জানুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সম্মুখপ্রান্ত এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দের অনুমতি দেওয়া হয়।
অন্যদিকে আগামী ১৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব সম্মেলনের জন্যও মাঠটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গণপূর্তের অনুমতিপত্রে দেখা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর বইমেলার জন্য বাংলা একাডেমিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর ২৯ ডিসেম্বর যুব সম্মেলনের জন্য ইসলামী আন্দোলনকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহবুব রহমান বলেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আমাদেরকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এখানে যে ব্যাপারটি হয়েছে, এটি একটু ‘ওভারলেপ’ হয়ে গেছে। আমরা এটি সমাধানের চেষ্টা করব।