ইসলামী ব্যাংকগুলো একীভূত করে দুটি বড় ব্যাংক করা হবে | Bangla Affairs
১২:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
টাকা পাচারকারীদের শান্তিতে থাকতে দেয়া হবে না

ইসলামী ব্যাংকগুলো একীভূত করে দুটি বড় ব্যাংক করা হবে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
  • সময় ০৫:৫৮:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / 71

১০ম বার্ষিক ব্যাংক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের একটি বড় ও ছোট ছোট অনেকগুলো ইসলামী ব্যাংক আছে; যেগুলো সমস্যায় জর্জরিত। আমরা এগুলোর অনেকগুলো একীভূত করতে যাচ্ছি। একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য সম্ভবত দুটি বড় ইসলামী ব্যাংক তৈরি করা হবে।

দেশে বর্তমানে ইসলামী ধারার ১০টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই বেশ দুর্বল ও সমস্যায় জর্জরিত। সেগুলোকে একীভূত করে বৃহৎ। একই সঙ্গে দেশের টাকা যারা পাচার করছেন, তাদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করতে ব্যাংকিংখাতে সংস্কার জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ১০ম বার্ষিক ব্যাংক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।

বুধবার (৯ এপ্রিল) মিরপুরে বিআইবিএম মিলনাতনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর নুরুন নাহার, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার। উদ্বোধনী দিনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল হান্নান চৌধুরী। সূচনা বক্তব্য রাখেন ১০ তম ব্যাংক সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির চেয়ারম্যান ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আজকে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিআইবিএম এবং অন্যান্য ব্যাংকগুলো অথাৎ ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার ফলে ব্যাংক সম্মেলনটি হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিংখাতে এখনো সরাসরি যুক্ত হতে পারেনি সমাজের একটি অংশ। অবশ্যই তাদের যুক্ত করতে হবে বলেও মনে করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. আব্দুল হান্নান চৌধুরীর সঙ্গে একমত পোষণ করে গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা আনার বিকল্প নেই। এ নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করছে।

১০ম বার্ষিক ব্যাংক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
১০ম বার্ষিক ব্যাংক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

ব্যাংকের ওপর নজরদারি প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ ব্যাংক পরিচালনা করা নয়, ব্যাংক পরিচালনা করবে সেটির পর্ষদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু রেগুলেটরি দিকগুলো দেখবে। কোথাও শেয়ার হোল্ডার থেকে শুরু করে মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন বিঘ্নিত হচ্ছে কিনা, সেদিকে নজর রাখবে।

বাংলাদেশের ইসলামিক ব্যাংকিং নিয়েও কথা বলেছেন গভর্নর। তিনি বলেন, এখনো আন্তজার্তিক মানের ইসলামিক ব্যাংক গড়ে উঠেনি বাংলাদেশে। ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জন্য আলাদা আইন প্রয়োজন, যা বর্তমানে নেই। এ নিয়েও কাজ করছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

বাংলাদেশের আর্থিক খাত একদিনেই আন্তজার্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে না, এরজন্য সময় লাগবে বলেও মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতে এখন যে খারাপ অবস্থা, তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকও দায়ী। এখন দেখার বিষয়, কেন তারা অনিয়মে সহায়তা করেছে। মনে রাখতে হবে, সামগ্রিকভাবে জাতিগত পতনের সঙ্গে ব্যাংক খাতের এই দুরবস্থা তৈরি হয়েছে।

মূল্যস্ফীতিকে বর্তমানের মূল চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এটা কমে আসবে। তবে আজই কমবে, তা নয়; কীভাবে তা কমিয়ে আনা যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিজার্ভ বাড়ানো ও মূল্যস্ফীতি কমাতে কাজ করা হবে।’

গভর্নর বলেন, অর্থ পাচার ঠেকাতে সরকারের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করবে। যারা পাচারকারী তাদের শান্তিতে থাকতে দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে বিআইবিএম জাতীয় ব্যাংক সম্মেলন আয়োজন করে আসছে। ৯-১০ এপ্রিল এবারের সম্মেলনে দেশের প্রায় সব ব্যাংকের পক্ষ থেকেই এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছে।

শেয়ার করুন

টাকা পাচারকারীদের শান্তিতে থাকতে দেয়া হবে না

ইসলামী ব্যাংকগুলো একীভূত করে দুটি বড় ব্যাংক করা হবে

সময় ০৫:৫৮:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের একটি বড় ও ছোট ছোট অনেকগুলো ইসলামী ব্যাংক আছে; যেগুলো সমস্যায় জর্জরিত। আমরা এগুলোর অনেকগুলো একীভূত করতে যাচ্ছি। একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য সম্ভবত দুটি বড় ইসলামী ব্যাংক তৈরি করা হবে।

দেশে বর্তমানে ইসলামী ধারার ১০টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই বেশ দুর্বল ও সমস্যায় জর্জরিত। সেগুলোকে একীভূত করে বৃহৎ। একই সঙ্গে দেশের টাকা যারা পাচার করছেন, তাদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করতে ব্যাংকিংখাতে সংস্কার জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ১০ম বার্ষিক ব্যাংক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।

বুধবার (৯ এপ্রিল) মিরপুরে বিআইবিএম মিলনাতনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর নুরুন নাহার, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার। উদ্বোধনী দিনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল হান্নান চৌধুরী। সূচনা বক্তব্য রাখেন ১০ তম ব্যাংক সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির চেয়ারম্যান ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আজকে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিআইবিএম এবং অন্যান্য ব্যাংকগুলো অথাৎ ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার ফলে ব্যাংক সম্মেলনটি হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিংখাতে এখনো সরাসরি যুক্ত হতে পারেনি সমাজের একটি অংশ। অবশ্যই তাদের যুক্ত করতে হবে বলেও মনে করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. আব্দুল হান্নান চৌধুরীর সঙ্গে একমত পোষণ করে গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা আনার বিকল্প নেই। এ নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করছে।

১০ম বার্ষিক ব্যাংক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
১০ম বার্ষিক ব্যাংক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

ব্যাংকের ওপর নজরদারি প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ ব্যাংক পরিচালনা করা নয়, ব্যাংক পরিচালনা করবে সেটির পর্ষদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু রেগুলেটরি দিকগুলো দেখবে। কোথাও শেয়ার হোল্ডার থেকে শুরু করে মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন বিঘ্নিত হচ্ছে কিনা, সেদিকে নজর রাখবে।

বাংলাদেশের ইসলামিক ব্যাংকিং নিয়েও কথা বলেছেন গভর্নর। তিনি বলেন, এখনো আন্তজার্তিক মানের ইসলামিক ব্যাংক গড়ে উঠেনি বাংলাদেশে। ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জন্য আলাদা আইন প্রয়োজন, যা বর্তমানে নেই। এ নিয়েও কাজ করছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

বাংলাদেশের আর্থিক খাত একদিনেই আন্তজার্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে না, এরজন্য সময় লাগবে বলেও মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতে এখন যে খারাপ অবস্থা, তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকও দায়ী। এখন দেখার বিষয়, কেন তারা অনিয়মে সহায়তা করেছে। মনে রাখতে হবে, সামগ্রিকভাবে জাতিগত পতনের সঙ্গে ব্যাংক খাতের এই দুরবস্থা তৈরি হয়েছে।

মূল্যস্ফীতিকে বর্তমানের মূল চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এটা কমে আসবে। তবে আজই কমবে, তা নয়; কীভাবে তা কমিয়ে আনা যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিজার্ভ বাড়ানো ও মূল্যস্ফীতি কমাতে কাজ করা হবে।’

গভর্নর বলেন, অর্থ পাচার ঠেকাতে সরকারের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করবে। যারা পাচারকারী তাদের শান্তিতে থাকতে দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে বিআইবিএম জাতীয় ব্যাংক সম্মেলন আয়োজন করে আসছে। ৯-১০ এপ্রিল এবারের সম্মেলনে দেশের প্রায় সব ব্যাংকের পক্ষ থেকেই এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছে।