ইসলামাবাদ অভিমুখে ভয়ঙ্কর ১৫ হাজার তালিবান সেনা
- সময় ০৪:৪৬:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 35
রাজনৈতিক স্বার্থে বছরের পর বছর তালিবানকে মদত দিয়ে এসেছে পাকিস্তান। অভিযোগ এমনটাই। এখন সেই তালিবানের প্রত্যাঘাতেই শিয়রে শমন পাকিস্তানের। আফগানিস্তানের পাকতিকায় পাকিস্তানি বিমানহানার ‘প্রতিশোধ’ নিতে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ সীমান্ত অভিমুখে রওনা দিল ভয়ঙ্কর তালিবান সেনা।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে আফগানিস্তানের পাকতুনিয়া প্রদেশের একাধিক গ্রামে জঙ্গি দমনে বিমান হামলা চালায় পাক বিমান বাহিনী। সেই বিমান হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ৪৬ জন। এই ঘটনার পরই পাকিস্তানকে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল আফগানিস্তানের তালিবান প্রশাসন।
পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তালিবান প্রশাসন জানিয়েছে, ওয়াজিরিস্তানের শরণার্থী শিবিরে নিরাপরাধ মানুষের উপর হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষদের খুন করেছে পাকিস্তান। এরফল ওদের ভোগ করতে হবে। নিজেদের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাতের শিগগিরি জবাব দেব আমরা।
আফগান সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, বিমান হামলার বদলা নিতে ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি ভয়ঙ্কর তালিবানি সেনা। গতকালই কাবুল, কান্দাহার, হিরাট থেকে দলে দলে পাক তালিবানি জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক ই তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপির ১৫ হাজারেরও বেশী সদস্য রওনা দিয়েছে পাক-আফগান সীমান্তের মির আলি সীমান্তের দিকে। লক্ষ্য তাদের ইসলামাবাদ। যদিও সরকারি ভাবে এখনও বিষয়টি নিশ্চিত করেনি কোনো পক্ষই।
আফগান সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকতিকার বারমাল জেলায় লামান-সহ সাতটি গ্রাম লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলা চালানো হয়। হামলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বারমালের মুর্গ বাজার গ্রামটি। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্তও ধ্বংসাবশেষ থেকে মৃতদেহ এবং আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারের কাজ চলেছে। হামলার পরেই পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দেয় আফগানিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তালিবান। তাদের দাবি, ওয়াজিরিস্তানের শরণার্থী শিবিরের নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে নিশানা করে এই হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিজেদের ভূমি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে শীঘ্রই এই হামলার পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। এই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই সীমান্তের উদ্দেশে রওনা হলেন তালিবান যোদ্ধারা।
কিন্তু কেন একদা ‘বন্ধু’ আফগানিস্তানের উপর বিমান হামলা চালাল ইসলামাবাদ? ২০২১ সালের ১৫ অগাস্ট যখন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘানি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ওমান হয়ে সংযুক্ত আরব আমির আমিরশাহিতে পালিয়ে যান তখন তালিবান সরকারকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল এই পাকিস্তানই। শুধু তাই নয় তালিবান সরকার গঠনের আগে জট কাটাতে কাবুল সফর করেন তৎকালীন পাক গোয়েন্দা প্রধানও। তাহলে হঠাৎ দুই দেশের মধ্যেকার ‘বন্ধুত্ব’ হঠাৎ শত্রুতায় বদলে গেল কেন?
২০১১ সালে পাকিস্তান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে হিলারি ক্লিন্টন বলেছিলেন, ‘বাড়ির উঠোনে সাপ পুষলে সে শুধু প্রতিবেশীদেরই কামড়াবে, এমনটা আশা করা যায় না। এক দিন সেই সাপ বাড়ির মালিকের উপরেই চড়াও হয়।’ হিলারির সেই কথাই যেন সত্যি হতে চলেছে!
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পিছনে আছে চীনের চাপ। সিপেক এবং চিনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনেশিয়েটিভের কাজ চলছে পাকিস্তানে। এই প্রকল্পে বিপুল পরিমান ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে বেইজিং। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনিয়া প্রদেশে রাস্তাসহ পরিকাঠামো তৈরিতে প্রচুর চিনা প্রযুক্তিবিদ এবং নাগরিক বর্তমানে সেদেশে রয়েছেন। তাঁদের উপর নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে বালুচ রেভলুশনারি আর্মি এবং তালিবানি জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি। বর্তমানে সেই টিটিপি জঙ্গিদের দমণ করতে ইসলামাবাদের উপর প্রবল চাপ দিয়েছে বেইজিং। আর এক ‘বন্ধু’র অনুরোধ রাখতে গিয়ে আরেক প্রতিবেশী ‘বন্ধু’র দেশে হামলা চালিয়ে আফগানিস্তানের তালিবান শাসকদের ব্যাপক চটিয়ে ফেলেছে ইসলামাবাদ। একদা ‘বন্ধু’ তালিবানরা গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবারই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসলামাবাদকে বদলার হুমকি দিয়েছিল। আজ আফগান সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী ১৫ হাজারেরও বেশি তেহরিক ই তালিবান যোদ্ধারা চললেন যুদ্ধে।
আর একদা পুরনো ‘বন্ধু’ কাবুল এবং ইসলামাবাদের দহরম মহরমের স্মৃতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে টিপ্পনি কেটেছেন নেট নাগরিকদের একাংশ। সমাজ মাধ্যমে রসিক নেটিজেনদের টিপ্পনি এটাই হল ইসলামাবাদের ‘বন্ধুত্বের’ নিদর্শন, ঢাকা যেন তা মনে রাখে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানি সেনার উপর হামলা বাড়িয়েছে আফগান তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)। উল্টো দিকে, পাকিস্তানও আফগানের বিরুদ্ধে টিটিপি-কে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। এর পরেই আফগানিস্তানকে নিশানা করেছে পাকিস্তান। পাক-হামলার পর এবার প্রত্যাঘাতে তালিবরাও।