ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা `আপাতত’ স্থগিত ইরানের
- সময় ০৪:০৬:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
- / 264
Smoke rises over Beirut's southern suburbs after a strike, amid ongoing hostilities between Hezbollah and Israeli forces, as seen from Sin El Fil, Lebanon, October 2, 2024. REUTERS/Amr Abdallah Dalsh
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় দুই শ’ সিাইল চোড়ার পর ‘আপাতত’ আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) করা এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকি জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েল কোনও প্রতিহংসামূলক পদক্ষেপ না নিলে আমাদের আক্রমণের আপাতত এখানেই সমাপ্তি। কিন্তু যদি আবারও উসকানি দেওয়া হয়, আমাদের দিক থেকেও দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’
দেশটি বলছে, নতুন করে যাতে আঞ্চলিক অস্থিরতা না বৃদ্ধি পায় এজন্য এই বুধবার (২ অক্টোবর) এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে তেহরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের অঙ্গীকার করেছে তেল আবিব ও ওয়াশিংটন। এতে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা না কমে উল্টো তীব্রতর হলো। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়, প্রায় ১৮০ টি মিসাইল ছোড়া হয়েছে এবং অনেক মিসাইল ভূপাতিত করা হয়েছে, তবে মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলে ‘কিছু আঘাতের’ ঘটনাও ঘটেছে।
দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ভাষায় ‘হেজবুল্লাহ সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ অভিযান শুরু করার পরই ইরান এই মিসাইল হামলা চালালো।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছে, হামলায় তেল আবিবে অন্তত দুইজন কিছুটা আহত হয়েছেন। সম্প্রতি হামাস, হেজবুল্লাহ এবং ইরানের সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যার জবাবে এই মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড।
তারা বলছে, ইসরায়েল যদি এই হামলার জবাব দেয় তবে আরও হামলা চালানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে,ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে তারা ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য বলেছে, যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা কাজে অংশ নিয়েছে ব্রিটিশ সৈন্যরা।
শনিবারেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা অঙ্গীকার করেছিলেন যে তাদের মিত্র, হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে।
এদিকে ইরানের হামলার মধ্যেও লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হেজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে দেশটি দাবি করেছে।
এই সংঘাত নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।
গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় বছরব্যাপী সংঘর্ষের পর ইসরায়েল এই অভিযান শুরু করে। তারা বলছে, হেজবুল্লাহর হামলায় সীমান্ত এলাকার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই তারা এই আক্রমণ শুরু করেছে।
যদিও ইসরায়েল এবং হেজবুল্লাহর মধ্যকার দীর্ঘ বিবাদ এখন নতুন করে তীব্র হয়ে ওঠার ফলে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের সূচনা হতে পারে বলে ব্যাপকভাবে আশঙ্কা রয়েছে, যাতে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই জড়িয়ে পড়তে পারে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর অপরিশোধিত তেলের দাম রাতারাতি বাড়তে শুরু করেছে। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম একদিনে এক শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪.৪০ ডলার।
বিশ্বে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থান সপ্তম।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তেহরানের রাস্তায় মানুষজন নেমে এসে উৎসব করতে শুরু করে। তাদের অনেকের হাতে ইরান ও হেজবুল্লাহর পতাকা এবং হাসান নাসরাল্লাহর ছবি ছিল।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ও জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে ইরানের রাষ্ট্রদূতআমির সাইদ ইরাভানি বলেছেন, হামাস ও হেজবুল্লাহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি ভবিষ্যৎ হামলার আরো জোরালো জবাব দেয়া হবে বলে তিনি বলেছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ডানি ডানন ঘোষণা দিয়েছেন যে,ইরানের সর্বশেষ হামলার সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
তিনি বলেছেন, ”আমাদের যুদ্ধের কোন ইচ্ছা নেই কিন্তু যখন আমাদের বেসামরিক লোকজনের ওপর এভাবে হামলা করা হচ্ছে, তখন আমরা অলস বসে থাকতে পারি না।”
গত সপ্তাহ জুড়েই নিরাপত্তা পরিষদের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকার অভিযোগ করে আসছে ইরান। দেশটি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে পুরোদস্তুর একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়া উচিত পরিষদের।
ইসরায়েলে যেসব এলাকায় ক্ষেপনাস্ত্র হামলার সাইরেন বেজেছে তার একটি ছবি প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।ছবির উৎস,Israel Defence Force
ছবির ক্যাপশান,ইসরায়েলে যেসব এলাকায় ক্ষেপনাস্ত্র হামলার সাইরেন বেজেছে তার একটি ছবি প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
মিসাইল হামলার আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলিদের উদ্দেশ্যে এক ভিডিও বার্তায় “আমরা ইরানের অশুভ অক্ষের বিরুদ্ধে অভিযানে রয়েছি” বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, “ইরান থেকে ইসরায়েলে সরাসরি কোন সামরিক হামলা চালানো হলে তার জন্য ইরানকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে”।
এর আগে গত এপ্রিলে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলায় কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েলে ৩০০ টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইরান।
সেসময় প্রায় সবগুলো ড্রোনই ভূপাতিত করেছিল ইরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের আরব মিত্ররা।ঐ হামলায় ইসরায়েলের একটি বিমান ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জবাবে তখন ইরানের একটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।