০৬:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউনূসের কাঁধ থেকে হাত সরে যাচ্ছে!

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
  • সময় ০১:৪৬:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 68

ড. ইউনূস (ফাইল ছবি)

আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেয়ার পর অনেকের মাঝেই স্বস্তি ফিরে এসেছিলো। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো উন্নয়ন সহযোগী হয়ে পাশে থাকার। কিন্তু সরকারের প্রথম ছয় মাসের প্রতিবেদন বলছে ভিন্ন কথা।

দিন যতোই গড়াচ্ছে; দূরে সরে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থাগুলো। তাদের কাছ থেকে যে ঋণ পাওয়া যাচ্ছিল, তা গত বছরের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

তবে বেড়েছে বিগত সরকারের রেখা যাওয়া বিশাল ঋণের বোঝা। সেটি পরিশোধ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে অন্তবর্তী সরকারকে। ফলে সরকারের আর্থিক অবস্থা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। যা নিয়ে লেজে গোবরে অবস্থা ইউনূস প্রশাসনের। তার কাঁধ থেকে হাত সরে যাচ্ছে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশি ঋণের ছাড় ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে আর ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ দশমিক ২২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ঋণ পরিশোধ ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে; যা প্রায় ৮ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। সরকারের এখন যে পরিমাণ অর্থ ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ হচ্ছে, তা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ভারত, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশের কাছ থেকে পাওয়া ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক জটিলতা উল্লেখ করা হচ্ছে।

সরকারি ঋণ-সম্পর্কিত নতুন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের জোগান দিতে এই অস্থিরতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশ থেকে ঋণের প্রতিশ্রুতি ছিল, সেগুলো আর আসছে না, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় আঘাত হেনেছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে যদি তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান না করা হয়।

একদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতা চলমান। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তা ৪ লাখ ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় এসে দাঁড়ায়।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৪১ হাজার ২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক সমস্যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।

চলতি অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি); ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। অথচ তাদের ৭০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি ছিলো। কিন্তু সংস্থাটি তাদের ঋণ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক; ৯৪ কোটি ডলারের বেশি প্রতিশ্রুতি ছিলো সংস্থাটির কাছ থেকে। এর বিপরীতে তারা অর্থ ছাড় করেছে ৮৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি।

তা ছাড়া বড় দেশগুলো যেমন ভারত, চীন এবং রাশিয়া ঋণ দিতে আগ্রহী নয়, যার ফলে সরকারের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পে পর্যাপ্ত অর্থের সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি ঋণের পরিমাণ ও তার সুদ পরিশোধের চাপ যত বাড়বে, ততই সরকারের জন্য বাজেটের তহবিল পুনর্বণ্টন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প পিছিয়ে যাচ্ছে।

ইআরডি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৩৯৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার ঋণছাড় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এই ঋণ ছাড়ে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ হ্রাস পাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কতা সংকেত।

শেয়ার করুন

ইউনূসের কাঁধ থেকে হাত সরে যাচ্ছে!

সময় ০১:৪৬:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেয়ার পর অনেকের মাঝেই স্বস্তি ফিরে এসেছিলো। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো উন্নয়ন সহযোগী হয়ে পাশে থাকার। কিন্তু সরকারের প্রথম ছয় মাসের প্রতিবেদন বলছে ভিন্ন কথা।

দিন যতোই গড়াচ্ছে; দূরে সরে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থাগুলো। তাদের কাছ থেকে যে ঋণ পাওয়া যাচ্ছিল, তা গত বছরের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

তবে বেড়েছে বিগত সরকারের রেখা যাওয়া বিশাল ঋণের বোঝা। সেটি পরিশোধ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে অন্তবর্তী সরকারকে। ফলে সরকারের আর্থিক অবস্থা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। যা নিয়ে লেজে গোবরে অবস্থা ইউনূস প্রশাসনের। তার কাঁধ থেকে হাত সরে যাচ্ছে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশি ঋণের ছাড় ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে আর ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ দশমিক ২২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ঋণ পরিশোধ ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে; যা প্রায় ৮ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। সরকারের এখন যে পরিমাণ অর্থ ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ হচ্ছে, তা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ভারত, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশের কাছ থেকে পাওয়া ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক জটিলতা উল্লেখ করা হচ্ছে।

সরকারি ঋণ-সম্পর্কিত নতুন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের জোগান দিতে এই অস্থিরতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশ থেকে ঋণের প্রতিশ্রুতি ছিল, সেগুলো আর আসছে না, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় আঘাত হেনেছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে যদি তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান না করা হয়।

একদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতা চলমান। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তা ৪ লাখ ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় এসে দাঁড়ায়।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৪১ হাজার ২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক সমস্যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।

চলতি অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি); ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। অথচ তাদের ৭০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি ছিলো। কিন্তু সংস্থাটি তাদের ঋণ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক; ৯৪ কোটি ডলারের বেশি প্রতিশ্রুতি ছিলো সংস্থাটির কাছ থেকে। এর বিপরীতে তারা অর্থ ছাড় করেছে ৮৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি।

তা ছাড়া বড় দেশগুলো যেমন ভারত, চীন এবং রাশিয়া ঋণ দিতে আগ্রহী নয়, যার ফলে সরকারের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পে পর্যাপ্ত অর্থের সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি ঋণের পরিমাণ ও তার সুদ পরিশোধের চাপ যত বাড়বে, ততই সরকারের জন্য বাজেটের তহবিল পুনর্বণ্টন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প পিছিয়ে যাচ্ছে।

ইআরডি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৩৯৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার ঋণছাড় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এই ঋণ ছাড়ে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ হ্রাস পাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কতা সংকেত।