আলোচিত মামলায় দুই রোহিঙ্গার যাবজ্জীবন সাজা
- সময় ০৪:১০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
- / 22
রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এবার দুই রোহিঙ্গাকে অপরাধে জড়িত থাকায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে থাকলেও আলোচিত একটি মামলায় ২ রোহিঙ্গাকে এই সাজা দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত মাদকদ্রব্য বহনের মামলায় দুই মায়ানমার নাগরিককে (রোহিঙ্গা) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী আবদুল মজিদ এই রায় প্রদান করেন।
দণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন- মিয়ানমারের মংডু এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে জুবাইর ও একই এলাকার আবদুল গণির ছেলে মো. রফিক।
মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২ এপ্রিল নাফ নদের জালিয়াদিয়া পয়েন্ট দিয়ে নৌকাযোগে মাদকের চালান নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশকালে বিজিবি সদস্যরা জুবাইর ও মো. রফিককে আটক করে।
পরে তাদের কাছে থাকা বস্তা তল্লাশি করে ১ কেজি ৭০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস ও ৫৪ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে।
কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম জানান, আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করা হয়েছে। কক্সবাজারের অনেক মাদক মামলা রয়েছে। সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আমরা কাজ করছি।
৬ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার মাদক উদ্ধারের মামলায় ২ রোহিঙ্গাকে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ বুধবার (৮ জানুয়ারি) এ রায় প্রদান করেন। একই আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলা অ্যাফেয়ার্সের কক্সবাজারের সিনিয়র প্রতিবেদক এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন এ ঘটনায় জানিয়েছেন, কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ বুধবার এ রায় প্রদান করেন। একই আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামীরা হলেন-মায়ানমারের মংডু জেলার নাগকুড়া থানার মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন ও মোছা: মোস্তফা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জুবায়ের (২২) এবং মংডু সদর থানার মৃত আবদুল গণি ও মোছা: মৌমিনা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিক (২৩)। দন্ডিত ২ জনেই কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নেচার পার্কস্থ ২৭ নম্বর জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শরনার্থী। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামীদ্বয় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ সিরাজুল ইসলাম এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোঃ আবসার কামাল মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
২০২২ সালের ২ এপ্রিল রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটের দিকে টেকনাফস্থ বিজিবি’র ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের ২টি টিম অভিযান চালিয়ে টেকনাফের জালিয়ারদ্বীপ জিরো পয়েন্ট ক্রস করে একটি কাঠের বোট বাংলাদেশ সমুদ্র সীমায় প্রবেশ করলে বোটটি আটক করে। পরে বোটটি তল্লাশি করে ৫ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা মূল্যের এক কেজি ৬৯ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইচ, এক কোটি ৬২ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫৪ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের কাঠের বোট সহ মোট ৬ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার মাদক উদ্ধার করে। এসময় কাঠের বোটে থাকা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জুবায়ের ও রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিককে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় টেকনাফস্থ বিজিবি’র ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের নায়েক মো: আনোয়ারুল হক বাদী হয়ে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জুবায়ের ও রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিককে আসামী করে টেকনাফ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ০৫, তারিখ : ০২/০৪/২০২২ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৩০৫/২০২২ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৫৩৮/২০২৩ ইংরেজি।
বিচার ও রায় :
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়। মামলায় ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য বুধবার দিন ধার্য্য করা হয়।
ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০ (গ) ধারায় আসামী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জুবায়ের ও রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিককে দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদন্ড প্রদান করেন।
রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা মূলে দন্ডিত আসামী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জুবায়ের ও রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিককে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন জানিয়েছেন।