ঢাকা ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফগানিস্তানে তালেবান ম্যাজিক!

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৭:৩২:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪
  • / 259

তালেবান। কিছুদিন আগেও নামটা শুনলেই বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ভেসে উঠতো শত বছর পিছিয়ে থাকা একদল যোদ্ধার ছবি। কিন্তু আফগানিস্তানের রাজ ক্ষমতায় বসে পৃথিবীর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে নিজেদের সক্ষমতা।
মার্কিন বাহিনীকে হটিয়ে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ফাঁকা রাজকোষ নিয়ে যাত্রা শুরু করে তালেবান সরকার।

আর্থিকভাবে তালেবানদের পঙ্গু রাখার সব ধরনের প্রচেষ্টাই অব্যাহত রাখে যুক্তরাষ্ট্র। দেয়া হয় অর্থনৈতিক অবরোধ। এমনকি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভে থাকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে থাকা প্রায় দশ বিলিয়ন ডলারও আটকে রাখে ওয়াশিংটন। এছাড়া ধস নামে ত্রাণ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য নির্ভর অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও। নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে তালেবানদের নেতিবাচক ইমেজের কারণে মুখ ফিরিয়ে দেন দাতাসংস্থাগুলো।

হঠাৎ করেই ২০২৩ সালের শেষের দিকে নিজেদের শাসন ক্ষমতায় চমক দেখায় আফগান সরকার। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা মুদ্রা হয়ে ওঠে আফগানিস্তানের মুদ্রা আফগানি। এমনকি শক্তিশালী মার্কিন ডলারকেও ছাড়িয়ে যায় আফগান মুদ্রা।

এর জন্য বেশ কিছু অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তালেবান সরকারকে। যার মধ্যে অন্যতম ছিলো- স্থানীয় লেনদেনে ডলার ও পাকিস্তানি রুপির ব্যবহার বন্ধ করা। দেশ থেকে বাইরে ডলার নিয়ে যাওয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ। এছাড়া অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এসব আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়ার ঘোষণা দেয় তালেবানরা।

পাশাপাশি প্রবাসী আয় বাড়াতেও নানা উদ্যোগ নেয় আফগান সরকার। কেননা চার কোটি মানুষের দেশ আফগানিস্তানের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সারা বিশ্বে। এসব প্রবাসীদের দেশে অর্থ পাঠাতে নানাভাবে উদ্বুদ্ধু করে তালেবান সরকার। তাদের এসব কার্যক্রমের প্রভাব পড়ে দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে।

ফলে ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে ডলারের বিপরীতে আফগানিস্তানের মুদ্রা আফগানির দর বেড়ে যায় ৯ শতাংশ। যা ওই প্রান্তিকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ২০২৩ সালে আফগানির দর বেড়ে যায় ১৪ শতাংশ। ফলে ২০২৩ সালে সব মিলিয়ে বিশ্বের যেসব মুদ্রার দর সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়, তাতে তৃতীয় অবস্থানে ছিল আফগানি। আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে নগদ অর্থের স্বল্পতা থাকলেও খনিজ সম্পদের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশটি। এই মুহূর্তেবিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের একটি হচ্ছে বৈদ্যুতিক ব্যাটারি, যার মূল উপাদান লিথিয়ামের ওপর ভাসছে পুরো আফগানিস্তান।

এছাড়া পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ব্যাপকহারে ডলার পাচার হয়। আর এই পাচার হওয়া ডলারও গতি সঞ্চার করছে আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে। রূক্ষ ধূসর ভূমি আর পার্বত্য অঞ্চলে বেষ্টিত আফগানিস্তানকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নেয়া হয় এক যুগান্তকারি পদক্ষেপ। আফগানিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প কুশটেপা ক্যানেল নামের একটি কৃত্রিম খাল খননের কর্মসূচি হাতে নেয় তালেবান সরকার। খাল বলা হলেও আসলে ১০৮ মিটার প্রস্থ ও ২৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে একটি পুরোদস্তুর নদীই এই কুশটেপা ক্যানাল।

এই খালের মাধ্যমে প্রায় ৬ লাখ হেক্টর জমিতে সারা বছর স্থায়ী সেচের ব্যবস্থা করা হবে। এর মাধ্যমে এসব জমিতে গম ও ভোজ্যতেলের আবাদ করা হবে। যা বাস্তবায়ন করা গেলে আফগানিস্তান শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশেই পরিণত হবে না, তারা গম রফতানিকারক দেশেও পরিণত হতে পারে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন ও প্রযুক্তিতে এই খাল নির্মাণ করে ইতোমধ্যেই বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তালেবান সরকার।

পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে তালেবানদের নিয়ে প্রকাশিত বেশিরভাগ সংবাদই নেতিবাচক শিরোনামে উপস্থাপিত হলেও তা ঢেকে রাখতে পারেনি তালেবানদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সাফল্য।

শেয়ার করুন

আফগানিস্তানে তালেবান ম্যাজিক!

সময় ০৭:৩২:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪

তালেবান। কিছুদিন আগেও নামটা শুনলেই বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ভেসে উঠতো শত বছর পিছিয়ে থাকা একদল যোদ্ধার ছবি। কিন্তু আফগানিস্তানের রাজ ক্ষমতায় বসে পৃথিবীর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে নিজেদের সক্ষমতা।
মার্কিন বাহিনীকে হটিয়ে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ফাঁকা রাজকোষ নিয়ে যাত্রা শুরু করে তালেবান সরকার।

আর্থিকভাবে তালেবানদের পঙ্গু রাখার সব ধরনের প্রচেষ্টাই অব্যাহত রাখে যুক্তরাষ্ট্র। দেয়া হয় অর্থনৈতিক অবরোধ। এমনকি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভে থাকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে থাকা প্রায় দশ বিলিয়ন ডলারও আটকে রাখে ওয়াশিংটন। এছাড়া ধস নামে ত্রাণ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য নির্ভর অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও। নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে তালেবানদের নেতিবাচক ইমেজের কারণে মুখ ফিরিয়ে দেন দাতাসংস্থাগুলো।

হঠাৎ করেই ২০২৩ সালের শেষের দিকে নিজেদের শাসন ক্ষমতায় চমক দেখায় আফগান সরকার। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা মুদ্রা হয়ে ওঠে আফগানিস্তানের মুদ্রা আফগানি। এমনকি শক্তিশালী মার্কিন ডলারকেও ছাড়িয়ে যায় আফগান মুদ্রা।

এর জন্য বেশ কিছু অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তালেবান সরকারকে। যার মধ্যে অন্যতম ছিলো- স্থানীয় লেনদেনে ডলার ও পাকিস্তানি রুপির ব্যবহার বন্ধ করা। দেশ থেকে বাইরে ডলার নিয়ে যাওয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ। এছাড়া অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এসব আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়ার ঘোষণা দেয় তালেবানরা।

পাশাপাশি প্রবাসী আয় বাড়াতেও নানা উদ্যোগ নেয় আফগান সরকার। কেননা চার কোটি মানুষের দেশ আফগানিস্তানের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সারা বিশ্বে। এসব প্রবাসীদের দেশে অর্থ পাঠাতে নানাভাবে উদ্বুদ্ধু করে তালেবান সরকার। তাদের এসব কার্যক্রমের প্রভাব পড়ে দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে।

ফলে ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে ডলারের বিপরীতে আফগানিস্তানের মুদ্রা আফগানির দর বেড়ে যায় ৯ শতাংশ। যা ওই প্রান্তিকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ২০২৩ সালে আফগানির দর বেড়ে যায় ১৪ শতাংশ। ফলে ২০২৩ সালে সব মিলিয়ে বিশ্বের যেসব মুদ্রার দর সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়, তাতে তৃতীয় অবস্থানে ছিল আফগানি। আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে নগদ অর্থের স্বল্পতা থাকলেও খনিজ সম্পদের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশটি। এই মুহূর্তেবিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের একটি হচ্ছে বৈদ্যুতিক ব্যাটারি, যার মূল উপাদান লিথিয়ামের ওপর ভাসছে পুরো আফগানিস্তান।

এছাড়া পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ব্যাপকহারে ডলার পাচার হয়। আর এই পাচার হওয়া ডলারও গতি সঞ্চার করছে আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে। রূক্ষ ধূসর ভূমি আর পার্বত্য অঞ্চলে বেষ্টিত আফগানিস্তানকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নেয়া হয় এক যুগান্তকারি পদক্ষেপ। আফগানিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প কুশটেপা ক্যানেল নামের একটি কৃত্রিম খাল খননের কর্মসূচি হাতে নেয় তালেবান সরকার। খাল বলা হলেও আসলে ১০৮ মিটার প্রস্থ ও ২৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে একটি পুরোদস্তুর নদীই এই কুশটেপা ক্যানাল।

এই খালের মাধ্যমে প্রায় ৬ লাখ হেক্টর জমিতে সারা বছর স্থায়ী সেচের ব্যবস্থা করা হবে। এর মাধ্যমে এসব জমিতে গম ও ভোজ্যতেলের আবাদ করা হবে। যা বাস্তবায়ন করা গেলে আফগানিস্তান শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশেই পরিণত হবে না, তারা গম রফতানিকারক দেশেও পরিণত হতে পারে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন ও প্রযুক্তিতে এই খাল নির্মাণ করে ইতোমধ্যেই বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তালেবান সরকার।

পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে তালেবানদের নিয়ে প্রকাশিত বেশিরভাগ সংবাদই নেতিবাচক শিরোনামে উপস্থাপিত হলেও তা ঢেকে রাখতে পারেনি তালেবানদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সাফল্য।