ঢাকা ১১:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনের মুখে সেই ৪ বিচারককে প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক, পঞ্চগড়
  • সময় ১১:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 23

আন্দোলনের মুখে সেই ৪ বিচারককে প্রত্যাহার

নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৪ বিচারকের অপসারণের দাবিতে রবিবার দুপুর ২টা থেকে আদালত ঘেরাও ও মহাসড়ক অবরোধ শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৬ ঘণ্টা আন্দোলন চলার পর রাত ৮ টায় ওই চার বিচারককে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে কর্মসূচি তুলে নেন ছাত্ররা।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘বিচারকদের বিষয়ে কোনো কিছু সিদ্ধান্ত নিতে গেলে একটু সময়ের প্রয়োজন। তার পরও আইন মন্ত্রণালয়ের পর প্রধান বিচারপতিরও অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

এই প্রক্রিয়া চলছে। তবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তা আমাদের জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত হলো ওই চার বিচারককে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হচ্ছে। কাল থেকে তারা আর বিচারকাজ করতে পারবেন না।

আন্দোলনের মুখে সেই ৪ বিচারককে প্রত্যাহার
আন্দোলনের মুখে সেই ৪ বিচারককে প্রত্যাহার

তাদের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকেই উচ্চমহল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আন্দোলনকারীরা জানান, পঞ্চগড় আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুজ্জামান ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু হেনা সিদ্দিকী আগস্টের পরেও আওয়ামীলীগ সরকারের দোসরের ভূমিকা পালন করে আসছেন। তারা ঘুষ, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় সমন্বয়কদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।

তারা জানান, তাদের অপসারণের দাবিতে গত ২২ জানুয়ারি বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয় ওই দিন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের অপসারণ না করায় রবিবার দুপুর থেকে আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে আদালত ঘেরাও ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। এদিন শুরুতেই আদালতের প্রত্যেক ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

পরে মহাসড়ক অবরোধ করায় সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকরা পড়ে।

সন্ধ্যায় একটি ফটকের তালা খুলে আদালত চত্বরে প্রবেশ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। এক পর্যায়ে কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর করে তারা। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কিন্তু ওই বিচারকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তারা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। রাত ৮ টায় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ৪ চার বিচারককে প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানালে তারা আন্দোলন থেকে সরে যান। আদালত ঘেড়াও করায় আদালতে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন বিচারকসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে এমন দুর্নীতিবাজ বিচারকদের ঠাঁই নেই। আমরা দীর্ঘ সময় আন্দোলন করে তাদের সরাতে সক্ষম হয়েছি। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই তারা আমাদের মনের ভাষা বুঝতে পেরেছেন। সেই সাথে সাময়িক কষ্ট হওয়ার জন্য আমরা সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাই। এটি আমরা আমাদের জন্য করিনি। পঞ্চগড়ের মানুষের কল্যাণের জন্য করেছি। তাদের এই পরিণতি অন্য বিচারকদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকে। সেই সাথে আদালতের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন তাদের জন্য এটি একটি মেসেজ।’

শেয়ার করুন

আন্দোলনের মুখে সেই ৪ বিচারককে প্রত্যাহার

সময় ১১:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৪ বিচারকের অপসারণের দাবিতে রবিবার দুপুর ২টা থেকে আদালত ঘেরাও ও মহাসড়ক অবরোধ শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৬ ঘণ্টা আন্দোলন চলার পর রাত ৮ টায় ওই চার বিচারককে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে কর্মসূচি তুলে নেন ছাত্ররা।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘বিচারকদের বিষয়ে কোনো কিছু সিদ্ধান্ত নিতে গেলে একটু সময়ের প্রয়োজন। তার পরও আইন মন্ত্রণালয়ের পর প্রধান বিচারপতিরও অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

এই প্রক্রিয়া চলছে। তবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তা আমাদের জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত হলো ওই চার বিচারককে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হচ্ছে। কাল থেকে তারা আর বিচারকাজ করতে পারবেন না।

আন্দোলনের মুখে সেই ৪ বিচারককে প্রত্যাহার
আন্দোলনের মুখে সেই ৪ বিচারককে প্রত্যাহার

তাদের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকেই উচ্চমহল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আন্দোলনকারীরা জানান, পঞ্চগড় আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুজ্জামান ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু হেনা সিদ্দিকী আগস্টের পরেও আওয়ামীলীগ সরকারের দোসরের ভূমিকা পালন করে আসছেন। তারা ঘুষ, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় সমন্বয়কদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।

তারা জানান, তাদের অপসারণের দাবিতে গত ২২ জানুয়ারি বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয় ওই দিন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের অপসারণ না করায় রবিবার দুপুর থেকে আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে আদালত ঘেরাও ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। এদিন শুরুতেই আদালতের প্রত্যেক ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

পরে মহাসড়ক অবরোধ করায় সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকরা পড়ে।

সন্ধ্যায় একটি ফটকের তালা খুলে আদালত চত্বরে প্রবেশ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। এক পর্যায়ে কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর করে তারা। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কিন্তু ওই বিচারকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তারা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। রাত ৮ টায় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ৪ চার বিচারককে প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানালে তারা আন্দোলন থেকে সরে যান। আদালত ঘেড়াও করায় আদালতে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন বিচারকসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে এমন দুর্নীতিবাজ বিচারকদের ঠাঁই নেই। আমরা দীর্ঘ সময় আন্দোলন করে তাদের সরাতে সক্ষম হয়েছি। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই তারা আমাদের মনের ভাষা বুঝতে পেরেছেন। সেই সাথে সাময়িক কষ্ট হওয়ার জন্য আমরা সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাই। এটি আমরা আমাদের জন্য করিনি। পঞ্চগড়ের মানুষের কল্যাণের জন্য করেছি। তাদের এই পরিণতি অন্য বিচারকদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকে। সেই সাথে আদালতের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন তাদের জন্য এটি একটি মেসেজ।’