আতাকামা মরুভূমির রহস্য!

- সময় ১০:৫২:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
- / 29
বিশ্বের অন্যতম শুষ্কতম স্থান, যেখানে বৃষ্টি পড়ে একেবারেই সামান্য। এমনই এক বিস্ময়কর ভূখণ্ডের নাম আতাকামা মরুভূমি। দক্ষিণ আমেরিকার চিলির উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই মরুভূমি বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, রহস্যময় ভূগোল ও বৈজ্ঞানিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত।
আতাকামা মরুভূমির বিস্তৃতি প্রায় এক হাজার কিলোমিটার জুড়ে, প্রশান্ত মহাসাগর ও আন্দেজ পর্বতমালার মাঝে অবস্থিত। এর বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য হলো, এটি পৃথিবীর শুষ্কতম মরুভূমি। কিছু কিছু অংশে শতাব্দীর পর শতাব্দী বৃষ্টি হয়নি। বাতাসে আর্দ্রতা অত্যন্ত কম এবং দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম থাকলেও রাতের বেলা তাপমাত্রা তীব্রভাবে নেমে যায়।
যদিও এটি অত্যন্ত শুষ্ক এলাকা, তবে এখানকার ল্যান্ডস্কেপ অবিশ্বাস্যরকম বৈচিত্রময়। এখানে রয়েছে লবণের সমভূমি, আগ্নেয়গিরি, গুহা, বিশাল বালির পাহাড়, এমনকি কিছু এলাকা যেখানে মরিচিকা দেখা যায়।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, অতি বিরল হলেও যখন এখানে বৃষ্টি হয়, তখন মরুভূমির নির্জীব ভূমি ফুলের বাগানে রূপান্তরিত হয়। এই ঘটনাকে বলা হয় “ডেজার্ট ব্লুম” বা “মরুভূমির প্রস্ফুটন”।
আতাকামা মরুভূমি বিজ্ঞানীদের জন্য এক গবেষণাগার। এই অঞ্চলের শুষ্কতা ও ভূমির গঠন মঙ্গলের সঙ্গে অত্যন্ত মিল রয়েছে। তাই, নাসা এখানে মহাকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা করে।
এছাড়াও, এখানে অবস্থিত আলমা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রেডিও টেলিস্কোপগুলোর মধ্যে একটি, যা মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও নক্ষত্রদের গঠন বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যদিও এটি বসবাসের জন্য প্রতিকূল, তবে হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী এখানে বসবাস করছে। বিশেষ করে, ইনকা ও প্রাক-ইনকা সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায় এখানে।
মরুভূমির মধ্যে ছড়িয়ে থাকা প্রাচীন পেট্রোগ্লিফ বা শিলালিপিগুলো মানুষের অতীত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন বহন করে। আজও কিছু স্থানীয় সম্প্রদায় এখানে বসবাস করে, যারা মূলত কৃষি ও পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে আতাকামা মরুভূমি পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এখানে পর্যটকরা বিশেষত সান পেদ্রো দে আতাকামা শহরে ভিড় জমায়, যেখান থেকে তারা আশপাশের মরুভূমি, গিজার, লবণের হ্রদ ও মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করতে পারে।
এই মরুভূমির সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হলো এর রাতের আকাশ। বিশ্বের অন্যতম পরিষ্কার হওয়ায় এখানে তারামণ্ডল ও মহাজাগতিক রহস্যের দৃশ্য দেখার জন্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
আতাকামা মরুভূমি শুধুমাত্র একটি ভৌগোলিক বিস্ময় নয়, এটি বিজ্ঞান, ইতিহাস ও প্রকৃতির এক অনন্য মিলনস্থল।