আটক ৭৯ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু
- সময় ১০:২৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 27
জাহাজের ডেকের ওপর হাত মাথার পেছনে রেখে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন বাংলাদেশ থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ৭৯ জেলে-নাবিক। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভারতীয় কোস্টগার্ডের সদস্যরা। বাংলাদেশের জলসীমা থেকে দুটি ফিশিং বোটসহ ৭৯ নাবিককে জিম্মির তিন দিন পর এভাবেই বিষয়টি স্বীকার করেছে ভারতীয় উপকূল রক্ষী কোস্টগার্ড। তাও আবার তাদের এভাবেই আসামির মতো করে ছবি প্রকাশ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে ঠিক যেমনটা আলোচনার জন্ম দিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবেও বেশ আলোচিত হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় ২ শিপিং জাহাজসহ ৭৯ জন জেলে-নাবিককে ভারতীয় কোস্টগার্ডের সদস্যরা ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাদের পরিবারের সদস্যরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। খবর পাওয়া গেছে, দুই শিপিং জাহাজ এখন প্যারাদ্বীপে। ভারতের ওড়িশা রাজ্যের জগৎসিংহপুর জেলার
অন্তর্গত এই প্যারাদ্বীপ বন্দরে তাদের আইনি প্রক্রিয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে। ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তাদের স্বজনরা ভিড় করছেন চট্টগ্রামে জাহাজ মালিকদের অফিসে। জিম্মি ফিশিং বোটসহ নাবিকদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন স্বজনরা।
সোমবার দুপুরের দিকে ভারতীয় কোস্টগার্ডের নিয়ে যাওয়া জাহাজ দুটির মধ্যে একটি এফ ভি লায়লা-২। এই ফিশিং জাহাজটির অপারেশন কোম্পানির নাম ‘এস আর ফিশিং’। অন্য ফিশিং জাহাজ এফভি মেঘনা-৫-এর অপারেশন কোম্পানির নাম সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেড। এফভি লায়লা-২ জাহাজটিতে নাবিকসহ ৪২ জন এবং এফভি মেঘনা-৫ এ ৩৭ জন জেলে ছিলেন।
দেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশি কোনো ফিশিং ট্রলার এই প্রথম ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করেছে জানিয়ে নৌ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম বলেন, ‘সাগরের মধ্যে কোনো সীমানা নেই। জিপিএসের মাধ্যমে সীমানা চিহ্নিত করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো বোট যদি অন্য দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে তখন সাবধান করে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়; কিন্তু এভাবে আটক করা এবারই প্রথম।’
এফভি মেঘনা-৫-এর মালিক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহ বলেন, আমাদের জাহাজ সাগরের মাঝখানে কখনো ভারতীয় সীমানায় প্রবেশ করে না। এফভি মেঘনা-৫ ফিশিং জাহাজে গত ২৪ নভেম্বর মাছ ধরার জন্য সাগরে যায়। ১৪ ডিসেম্বর ফিরে আসার কথা ছিল। এরই মধ্যে সোমবার দুপুর ১১টা কিংবা ১২টা নাগাদ জাহাজটিকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। কী কারণে তাদের ধরে নিয়ে গেছে, তা আমার জানা নেই। গত সোমবার ধরার পরপরই আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অবহিত করেছি। খুলনা অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় ভারতীয় কোস্টগার্ড ধরে নিয়ে গেছে। এ সময় এফভি লায়লা-২ নামে আরও একটি মাছ ধরার জাহাজ নিয়ে গেছে। জাহাজ দুটি ভারতের ওড়িশার প্যারাদ্বীপ নামক এলাকায় নোঙর করেছে বলে জানতে পেরেছি। এ অবস্থায় সরকারের কাছে দাবি জানাব আমাদের ক্রু, জাহাজ এবং অন্য সব মালপত্র যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেরত আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ভারতীয় কোস্টগার্ডের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে জাহাজ দুটির ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ার জন্য জাহাজ দুটিকে প্যারাদ্বীপে নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংস্থাটির দাবি, বাংলাদেশি জাহাজ দুটি ভারতের জলসীমায় প্রবেশ করে অননুমোদিতভাবে মাছ ধরছিল।
এস আর শিপিং-এর মালিকানাধীন জাহাজ এফ ভি লায়লা-২ এর সিএফও মিন্টু সাহা বলেন, ‘লায়লা-২ জাহাজটি গত ২৭ নভেম্বর জাহাজটি মাছ ধরার জন্য সাগরে যায়। ২০ ডিসেম্বর সাগর থেকে মাছ ধরা শেষে ফিরে আসার কথা ছিল। গতকাল শুনলাম আমাদের জাহাজ ভারতীয় কোস্টগার্ড ধরে নিয়ে গেছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি। খুলনা অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে যে স্থানে মাছ ধরা হচ্ছিল, সেখান থেকে প্রায় সময় মাছ ধরা হয়। কেন তাদের ধরে নিয়ে গেছে, তা বুঝতে পারছি না।’
গভীর সাগরে মাছ ধরার জন্য ট্রলারগুলোকে সাগরে যেতে অনুমোদন দেয় সরকারের সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর। সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, আমাদের ট্রলার ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। তবে আমাদের জলসীমার অনেক ভেতরে ভারতের বোট চলে আসে। তখন আমরা আটক করি। গত দুই মাসেও দুটি বোট আটক করা হয়েছে। নাবিকদের উদ্ধারের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কাজ করছে। ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করছি শিগগির সমাধান হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, আটককৃত ট্রলার ও নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলব।