১০ নভেম্বর ঘিরে উত্তেজনা!
আওয়ামী লীগের দেখানো পথেই ঠেকানোর পরিকল্পনা!
- সময় ০৫:৪৮:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪
- / 129
দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কিন্তু এই সময়ে বিরোধী দলের প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দমিয়ে রাখতে প্রশাসন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ বাহিনীকে যথেচ্ছাই ব্যবহার করা হয়েছিল।
৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর ৩ মাসের অধিক সময় পার করছে শান্তিতের নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার। কিন্তু সারাদেশেই আইন শৃঙ্খলার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। যদিও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনা. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি দাবি করেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। তবে আরও উন্নতি কীভাবে করা যায় সে চেষ্টা চলছে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে, আগামীকাল ১০ নভেম্বরকে ঘিরে নতুন করে আবারও রাজনৈতিক উত্তাপ শুরু হয়েছে। রোববার (১০ নভেম্বর) ঐতিহাসিক শহীদ নূর হোসেন দিবস। ১৯৮৭ সালের এদিনে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর গুলিস্তানে জিরো পয়েন্ট এলাকায় (বর্তমান শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার) পুলিশের গুলিতে শহীদ হন যুবলীগ নেতা নূর হোসেন।
বুকে-পিঠে গণতন্ত্র মুক্তি পাক/স্বৈরাচার নিপাত যাক লিখে বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে পুলিশ তাকে গুলি করে। এরপর থেকে দিনটি ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে।
তবে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশত্যাগী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুসারীরা বিশেষ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ নভেম্বরে ঢাকার রাজধানীতে ব্যাপক শো ডাউনের প্রস্তৃতির কথা ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।
এছাড়া, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের ফেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকার জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে দলটির বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
অন্তবর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পোস্টে বলা হয়, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী অগণতান্ত্রিক এই গোষ্ঠীর মতিভ্রম হয়েছে। ফলে তারা রাষ্ট্রে ও সমাজে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করে গোষ্ঠীতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে এবং অভূতপূর্ব নৈরাজ্যবাদ কায়েম করেছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সঠিক পন্থায় আনতে হলে গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী জনগণকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং এই অগণতান্ত্রিক অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চলমান রাখতে হবে। এই লড়াইয়ে শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগ আমাদের সীমাহীন প্রেরণা জোগাবে।
বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে ফেইসবুক পোস্টে বলা হয়, আগামী ১০ নভেম্বর রবিবার বিকাল ৩টায় শহীদ নূর হোসেন চত্বরে অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
মিছিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষকে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
একইসঙ্গে দেশব্যাপী সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয় ফেইসবুক পোস্টে।
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই ফর্মুলাতেই এগুচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার দুপুর ১২টার পরপর ফেইসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগকে বিক্ষোভ করতে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
প্রেস সচিবের পোস্টে বলা হয়, আওয়ামী লীগ তার বর্তমান রূপে একটি ফ্যাসিবাদী দল। এই ফ্যাসিবাদী দলকে বাংলাদেশে বিক্ষোভ করতে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
কেউ কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে তাকে কঠোরভাবে মোকাবেলার হুঁশিয়ারি দিয়ে পোস্টে বলা হয়, গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ সমাবেশ, জমায়েত ও মিছিল করার চেষ্টা করলে তাকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অন্তরর্তী সরকার কোনও ধরনের সহিংসতা বা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি লঙ্ঘনের কোনও প্রচেষ্টাকে বরদাস্ত করবে না বলেও সতর্ক করেন প্রেস সচিব শফিকুল।
সরকারের পক্ষ থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রোববার রাজধানী ঢাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা এটাও বলেছেন, এই ফর্মুলা আওয়ামী লীগ-ই শিখিয়েছে। বিগত শাসনামলে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিহত করতে সরাসরি পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করা হতো। যে কারণে ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ বাহিনীকে টার্গেট করা হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে এখনো পুলিশ বাহিনীতে আগের মনোবল ও পেশাদারিত্ব ফিরে আসেনি। যা নিয়ে পুরো বাংলাদেশের জনগণই শঙ্কা প্রকাশ করেছে। এখন দেখার বিষয় আগামীকাল রোববার সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিভাবে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর আগে ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কর্মসূচী ঘোষণা করা হলেও সেদিনগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাঁড়াতেই পারেনি।