ঢাকা ০৯:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইএসআই যেভাবে কাজ করে

আকাশ ইসলাম
  • সময় ০৪:৩৭:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • / 226

১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তানের জন্ম। সদ্য স্বাধীন এই দেশটি দ্রুত সামরিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা অনুভব করলেন যে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা রক্ষা করতে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থার প্রয়োজন। এর ফলাফল হিসেবে পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রথমদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধীনে শুধুমাত্র সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইএসআই গঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশের সামরিক শক্তিকে সুরক্ষিত রাখা এবং সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমকে সমন্বয় করা।

সময়ের সাথে সাথে আইএসআই-এর ভূমিকা আরও বিস্তৃত হয়, যা সামরিক থেকে বেসামরিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রসারিত হয়।

আইএসআই প্রতিষ্ঠার পেছনে প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার শাহিদ হামিদ এবং ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স অফিসার মেজর জেনারেল আর.সি. ক্যাটল। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের নির্দেশে আইএসআই-এর প্রথম পরিচালক হিসেবে মেজর জেনারেল আর.সি. ক্যাটল নিয়োগ পান।

আইএসআই-এর প্রতিষ্ঠা কেবল সামরিক কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য ছিল ভারতীয় সামরিক শক্তি ও রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা, বিশেষ করে কাশ্মীর অঞ্চলে।

কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সাথে উত্তেজনার কারণেই আইএসআই-এর গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় আইএসআই সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

আইএসআই-এর শক্তিশালী কার্যক্রমের একটি দিক হল এর আন্তর্জাতিক সংযোগ ও সম্পর্ক। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তানে আগ্রাসনের সময়, আইএসআই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাথে মিলে আফগান মুজাহিদিনদের সমর্থন দেয়। এর ফলস্বরূপ, আইএসআই-এর গুরুত্ব ও ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়।

আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, আইএসআই দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন গোপন অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দেশের অভ্যন্তরে আইএসআই কেবলমাত্র সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা নয়, এটি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা এবং সরকার পরিবর্তনের পেছনে ভূমিকা রাখার অভিযোগও রয়েছে।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং তার কন্যা বেনজির ভুট্টোর সরকার পতনের পেছনে আইএসআই-এর ষড়যন্ত্রের অভিযোগও বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে।

আইএসআইয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে সেনাবাহিনীরই আধিপত্য থাকে, যদিও নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর অফিসাররাও এই সংস্থার অংশ।

আইএসআইকে দেশের সবচেয়ে বড় গুপ্তচর সংস্থা বলা হলেও সেখানে কত কর্মী আছেন, তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই। আইএসআইয়ের বাজেট বরাদ্দও কখনও জনগণের সামনে আনা হয়নি।

কয়েক বছর আগে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের চালানো এক তদন্ত অনুযায়ী, আইএসআইতে ১০ হাজার অফিসার ও কর্মচারী রয়েছেন। যারা খবরাখবর সংগ্রহ করেন বা নিজে থেকেই গোয়েন্দাদের খবর দেন তারা এই কর্মী সংখ্যার মধ্যে নেই। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আইএসআইতে ছয় থেকে আটটি বিভাগ রয়েছে।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএসআইয়ের সাংগঠনিক কাঠামো এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে এটি একটি গুপ্তচর সংস্থায় পরিণত হয়েছে, যারা মূলত পাল্টা গোয়েন্দাগিরির দিকেই মনোনিবেশ করে থাকে।

এছাড়া অন্যান্য গুপ্তচর সংস্থার ষড়যন্ত্র বা গুপ্ত হত্যার মতো ঘটনা প্রতিরোধ করাও তাদের মূল কাজের মধ্যে পড়ে। আইএসআই কেন পাল্টা গোয়েন্দাগিরির ওপরে এত বেশি নজর দেয়, তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে।

আইএসআইয়ের মধ্যে বেসামরিক কর্মকর্তারাও উচ্চ পদে থেকেছেন, কিন্তু সংস্থাটির সাংগঠনিক কাঠামোতে তাদের বিশেষ প্রভাব দেখা যায় না।

আইএসআইয়ের যে ডিরেক্টরেট বা অধিদপ্তরটি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দায়িত্ব সামলায়, তার নাম জয়েন্ট কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা জেসিআইবি। এটিই আইএসআইয়ের বৃহত্তম ডিরেক্টরেট।

এই বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে বিদেশে কর্মরত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের ওপর নজরদারি করা। একইসাথে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, চীন, আফগানিস্তান ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া দেশগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তি চালানোও এই বিভাগের কাজ।

জেসিআইবির চারটি অধিদপ্তর রয়েছে, যার প্রতিটির আলাদা আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। এই বিভাগগুলো বিদেশি কূটনীতিক ও বিদেশিদের ওপর নজরদারির কাজ একজন পরিচালকের অধীনে করা হয়। আরেকজন পরিচালকের দায়িত্ব অন্যান্য দেশের রাজনীতি সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।

তৃতীয় এক পরিচালকের দায়িত্ব এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। চতুর্থ একজন পরিচালক গোয়েন্দা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এটিই আইএসআইয়ের সবচেয়ে বড় অধিদপ্তর। এই বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে আইএসআই কর্মকর্তাদের ওপরেও নজরদারি চালানো।

আইএসআইয়ের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তর হল যৌথ গোয়েন্দা ব্যুরো (জেআইবি)। এটি স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখে। এটির কাজের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন, আফগানিস্তান, সন্ত্রাস-দমন কার্যক্রম এবং ভিআইপিদের নিরাপত্তা।

বিদেশি দূতাবাসগুলোতে নিযুক্ত পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টাদের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করে এই অধিদপ্তর। জেআইবির আরেকটি দায়িত্ব হল জম্মু-কাশ্মীর। এই অধিদপ্তর মূলত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা, কাশ্মীরি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা।

জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, আমেরিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করে এবং এজেন্টদের মাধ্যমে আইএসআই সদর দফতরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখে। বিদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তারা গোপন তথ্য সংগ্রহ করে। ভারত ও আফগানিস্তানে আক্রমণাত্মক অভিযানের জন্য প্রশিক্ষিত গুপ্তচরদের ব্যবহার করে থাকে এই বিভাগটি।

একজন অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার মতে, আইএসআই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় কাজ করে। এর ফলে তারা প্রবল সামরিক শক্তিতে বলীয়ান। তবে তিনি এও বলছেন যে আইএসআই এবং সেনাবাহিনীর সম্পর্কের মধ্যে কখনও কখনও ফাটল ধরেছে, যা প্রকাশ্যেও এসেছে।

শেয়ার করুন

আইএসআই যেভাবে কাজ করে

সময় ০৪:৩৭:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তানের জন্ম। সদ্য স্বাধীন এই দেশটি দ্রুত সামরিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা অনুভব করলেন যে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা রক্ষা করতে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থার প্রয়োজন। এর ফলাফল হিসেবে পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রথমদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধীনে শুধুমাত্র সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইএসআই গঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশের সামরিক শক্তিকে সুরক্ষিত রাখা এবং সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমকে সমন্বয় করা।

সময়ের সাথে সাথে আইএসআই-এর ভূমিকা আরও বিস্তৃত হয়, যা সামরিক থেকে বেসামরিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রসারিত হয়।

আইএসআই প্রতিষ্ঠার পেছনে প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার শাহিদ হামিদ এবং ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স অফিসার মেজর জেনারেল আর.সি. ক্যাটল। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের নির্দেশে আইএসআই-এর প্রথম পরিচালক হিসেবে মেজর জেনারেল আর.সি. ক্যাটল নিয়োগ পান।

আইএসআই-এর প্রতিষ্ঠা কেবল সামরিক কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য ছিল ভারতীয় সামরিক শক্তি ও রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা, বিশেষ করে কাশ্মীর অঞ্চলে।

কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সাথে উত্তেজনার কারণেই আইএসআই-এর গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় আইএসআই সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

আইএসআই-এর শক্তিশালী কার্যক্রমের একটি দিক হল এর আন্তর্জাতিক সংযোগ ও সম্পর্ক। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তানে আগ্রাসনের সময়, আইএসআই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাথে মিলে আফগান মুজাহিদিনদের সমর্থন দেয়। এর ফলস্বরূপ, আইএসআই-এর গুরুত্ব ও ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়।

আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, আইএসআই দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন গোপন অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দেশের অভ্যন্তরে আইএসআই কেবলমাত্র সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা নয়, এটি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা এবং সরকার পরিবর্তনের পেছনে ভূমিকা রাখার অভিযোগও রয়েছে।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং তার কন্যা বেনজির ভুট্টোর সরকার পতনের পেছনে আইএসআই-এর ষড়যন্ত্রের অভিযোগও বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে।

আইএসআইয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে সেনাবাহিনীরই আধিপত্য থাকে, যদিও নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর অফিসাররাও এই সংস্থার অংশ।

আইএসআইকে দেশের সবচেয়ে বড় গুপ্তচর সংস্থা বলা হলেও সেখানে কত কর্মী আছেন, তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই। আইএসআইয়ের বাজেট বরাদ্দও কখনও জনগণের সামনে আনা হয়নি।

কয়েক বছর আগে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের চালানো এক তদন্ত অনুযায়ী, আইএসআইতে ১০ হাজার অফিসার ও কর্মচারী রয়েছেন। যারা খবরাখবর সংগ্রহ করেন বা নিজে থেকেই গোয়েন্দাদের খবর দেন তারা এই কর্মী সংখ্যার মধ্যে নেই। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আইএসআইতে ছয় থেকে আটটি বিভাগ রয়েছে।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএসআইয়ের সাংগঠনিক কাঠামো এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে এটি একটি গুপ্তচর সংস্থায় পরিণত হয়েছে, যারা মূলত পাল্টা গোয়েন্দাগিরির দিকেই মনোনিবেশ করে থাকে।

এছাড়া অন্যান্য গুপ্তচর সংস্থার ষড়যন্ত্র বা গুপ্ত হত্যার মতো ঘটনা প্রতিরোধ করাও তাদের মূল কাজের মধ্যে পড়ে। আইএসআই কেন পাল্টা গোয়েন্দাগিরির ওপরে এত বেশি নজর দেয়, তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে।

আইএসআইয়ের মধ্যে বেসামরিক কর্মকর্তারাও উচ্চ পদে থেকেছেন, কিন্তু সংস্থাটির সাংগঠনিক কাঠামোতে তাদের বিশেষ প্রভাব দেখা যায় না।

আইএসআইয়ের যে ডিরেক্টরেট বা অধিদপ্তরটি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দায়িত্ব সামলায়, তার নাম জয়েন্ট কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা জেসিআইবি। এটিই আইএসআইয়ের বৃহত্তম ডিরেক্টরেট।

এই বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে বিদেশে কর্মরত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের ওপর নজরদারি করা। একইসাথে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, চীন, আফগানিস্তান ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া দেশগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তি চালানোও এই বিভাগের কাজ।

জেসিআইবির চারটি অধিদপ্তর রয়েছে, যার প্রতিটির আলাদা আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। এই বিভাগগুলো বিদেশি কূটনীতিক ও বিদেশিদের ওপর নজরদারির কাজ একজন পরিচালকের অধীনে করা হয়। আরেকজন পরিচালকের দায়িত্ব অন্যান্য দেশের রাজনীতি সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।

তৃতীয় এক পরিচালকের দায়িত্ব এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। চতুর্থ একজন পরিচালক গোয়েন্দা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এটিই আইএসআইয়ের সবচেয়ে বড় অধিদপ্তর। এই বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে আইএসআই কর্মকর্তাদের ওপরেও নজরদারি চালানো।

আইএসআইয়ের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তর হল যৌথ গোয়েন্দা ব্যুরো (জেআইবি)। এটি স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখে। এটির কাজের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন, আফগানিস্তান, সন্ত্রাস-দমন কার্যক্রম এবং ভিআইপিদের নিরাপত্তা।

বিদেশি দূতাবাসগুলোতে নিযুক্ত পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টাদের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করে এই অধিদপ্তর। জেআইবির আরেকটি দায়িত্ব হল জম্মু-কাশ্মীর। এই অধিদপ্তর মূলত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা, কাশ্মীরি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা।

জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, আমেরিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করে এবং এজেন্টদের মাধ্যমে আইএসআই সদর দফতরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখে। বিদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তারা গোপন তথ্য সংগ্রহ করে। ভারত ও আফগানিস্তানে আক্রমণাত্মক অভিযানের জন্য প্রশিক্ষিত গুপ্তচরদের ব্যবহার করে থাকে এই বিভাগটি।

একজন অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার মতে, আইএসআই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় কাজ করে। এর ফলে তারা প্রবল সামরিক শক্তিতে বলীয়ান। তবে তিনি এও বলছেন যে আইএসআই এবং সেনাবাহিনীর সম্পর্কের মধ্যে কখনও কখনও ফাটল ধরেছে, যা প্রকাশ্যেও এসেছে।