ঢাকা ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিদ্রোহীদের সাথে মিললেন প্রধানমন্ত্রী

সিরিয়াতে অর্ধ শতাব্দী পর আসাদ পরিবারের অত্যাচারের অবসান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • সময় ১২:৪০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 29

সিরিয়া আসাদ

সিরিয়ার রাজধানী শহর দামেস্কে ঢুকে পড়েছেন বিদ্রোহীরা। তার আগেই রবিবার ভোরে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিমানে করে দামেস্ক ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে যান। এরপর দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি বিদ্রোহীদের সঙ্গে হাত মেলানোর ঘোষণা দেন।

এ প্রসঙ্গে বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বলেন, “মনে হচ্ছে, সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের অত্যাচারের অবসান হয়েছে।”

সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি
সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি

তিনি ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে আসাদ পরিবারের শাসনের কথা উল্লেখ বলেন, “এটা সত্যিই মনে হচ্ছে যে, আমরা সিরিয়ায় ৫৪ বছরের অত্যাচারের চূড়ান্ত অবসান ও শেষ মুহূর্তে এসে পৌঁছেছি।”

নাতাশা হল আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছেড়ে গেছেন বলে মনে হচ্ছে।” তিনি বলেন, “বিদ্রোহীদের হাতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পতনের ঘটনাটি নানা ঘটনার সংমিশ্রণের ফলাফল, যার মধ্যে রয়েছে ইরান ও রাশিয়াসহ আসাদের মিত্রদের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ‘দুর্বল এবং বিভ্রান্ত’ হয়ে পড়া।”

তিনি যোগ করেন, “সিরিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছিল। অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত শিবিরে অস্থির জীবনযাপন করছিল। আমি মনে করি, মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।”

প্রসঙ্গত, বাশার আল-আসাদ ২০০০ সালে সিরিয়ার শাসন ক্ষমতায় আসেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।

সিরিয়া দখলে বিদ্রোহীরা
সিরিয়া দখলে বিদ্রোহীরা

২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। এরপর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে করে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।

পরবর্তীতে বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। এতে বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, ইরান তার চিরশত্রু ইসরায়েলের দিকে মনোনিবেশ ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠে। সম্প্রতি বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র হামলা শুরু করে এবং এই হামলার মুখে আজ রবিবার নাটকীয়ভাবে দামেস্ক ছেড়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ পালিয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচএস) জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্কে সিরিয়ান সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর শতাধিক সদস্যকে তাদের সামরিক ইউনিফর্ম খুলে ফেলতে দেখা গেছে, কারণ তাদের বলা হয়েছে, সরকার পতনের কারণে তারা চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা, বিবিসি

শেয়ার করুন

বিদ্রোহীদের সাথে মিললেন প্রধানমন্ত্রী

সিরিয়াতে অর্ধ শতাব্দী পর আসাদ পরিবারের অত্যাচারের অবসান

সময় ১২:৪০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সিরিয়ার রাজধানী শহর দামেস্কে ঢুকে পড়েছেন বিদ্রোহীরা। তার আগেই রবিবার ভোরে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিমানে করে দামেস্ক ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে যান। এরপর দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি বিদ্রোহীদের সঙ্গে হাত মেলানোর ঘোষণা দেন।

এ প্রসঙ্গে বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বলেন, “মনে হচ্ছে, সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের অত্যাচারের অবসান হয়েছে।”

সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি
সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি

তিনি ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে আসাদ পরিবারের শাসনের কথা উল্লেখ বলেন, “এটা সত্যিই মনে হচ্ছে যে, আমরা সিরিয়ায় ৫৪ বছরের অত্যাচারের চূড়ান্ত অবসান ও শেষ মুহূর্তে এসে পৌঁছেছি।”

নাতাশা হল আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছেড়ে গেছেন বলে মনে হচ্ছে।” তিনি বলেন, “বিদ্রোহীদের হাতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পতনের ঘটনাটি নানা ঘটনার সংমিশ্রণের ফলাফল, যার মধ্যে রয়েছে ইরান ও রাশিয়াসহ আসাদের মিত্রদের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ‘দুর্বল এবং বিভ্রান্ত’ হয়ে পড়া।”

তিনি যোগ করেন, “সিরিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছিল। অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত শিবিরে অস্থির জীবনযাপন করছিল। আমি মনে করি, মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।”

প্রসঙ্গত, বাশার আল-আসাদ ২০০০ সালে সিরিয়ার শাসন ক্ষমতায় আসেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।

সিরিয়া দখলে বিদ্রোহীরা
সিরিয়া দখলে বিদ্রোহীরা

২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। এরপর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে করে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।

পরবর্তীতে বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। এতে বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, ইরান তার চিরশত্রু ইসরায়েলের দিকে মনোনিবেশ ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠে। সম্প্রতি বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র হামলা শুরু করে এবং এই হামলার মুখে আজ রবিবার নাটকীয়ভাবে দামেস্ক ছেড়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ পালিয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচএস) জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্কে সিরিয়ান সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর শতাধিক সদস্যকে তাদের সামরিক ইউনিফর্ম খুলে ফেলতে দেখা গেছে, কারণ তাদের বলা হয়েছে, সরকার পতনের কারণে তারা চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা, বিবিসি