অভিযানের নাম কেন ‘ডেভিল হান্ট’!

- সময় ১০:৩৯:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 1944
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট‘ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়ছে অন্তবর্তী সরকার। ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকেই শুরু হয়েছে এই অপারেশন। কিন্তু কিভাবে পরিচালিত হবে এই অপারেশন। আর অভিযানের নাম কেন ‘ডেভিল হান্ট’ রাখা হয়েছে – এ নিয়ে নানা ধরনের কৌতুহল তৈরি হয়েছে।
ডেভিল হান্ট শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। মধ্যযুগীয় ইউরোপে ডেভিল হান্ট বলতে বোঝানো হতো জাদুকরী শিকার বা ডাইনী বধ, যেখানে নিরীহ মানুষকে শাস্তি দেওয়া হতো কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে।
আবার, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীতে এটি শামানদের এক ধরণের আচার-অনুষ্ঠান ছিল, যেখানে তারা বিশ্বাস করত যে অশুভ আত্মাকে বশে আনতে হবে বা ধ্বংস করতে হবে।
বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর; আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। গত কয়েকদিন ধরে শুরু হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুরের ঘটনা। এ নিয়ে বৈষম্য বিরোধীদের সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্র্ষের ঘটনাও ঘটেছে ইতোমধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি প্রতিকী নাম। এর মাধ্যমে মূলত সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হবে। যার নেতৃত্বে থাকবেন সেনাবাহিনী। এছাড়াও এই দলে থাকবে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা।
এর আগে ২০০৭ সালে ‘ওয়ান ইলেভেন’ হিসেবে পরিচিত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও এই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করা হয়। সেবার যৌথবাহিনীর সেই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল ‘ অপারেশন র্যাপিড ফ্রিডম’।
ওই অভিযানের মাধ্যমে যৌথবাহিনী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সন্ত্রাস দমনে কাজ করেছিল। সে অভিযানে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলাসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের আটক করা হয়েছিল।
তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত অভিযান ছিলো ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’। ২০০২-০৩ সালে এই অভিযান পরিচালিত হয়। তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার।
দেশে তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিল। মানুষের মনে আতঙ্ক, উদ্বেগ, ক্ষোভ আর হতাশা জন্ম নিয়েছিল। ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনা করা হয়। এবং তাতে সফলতাও আসে।
এছাড়াও ২০১৬-২০১৭ সালে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনের জন্য আরো বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অপারেশন প্যাথফাইন্ডার, অপারেশন সানডাউন, অপারেশন স্টর্ম-২৬, অপারেশন ঈগল হান্ট, অপারেশন হিট ব্যাক, অপারেশন ম্যাক্সিমাম এক্সপ্রেশন, অপারেশন টোয়াইলাইট।
অভিযানের নাম কেন এমন হয় ? সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংক্ষিপ্ত, শক্তিশালী এবং প্রতীকী এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে অভিযানের নাম নির্ধারণ করা হয়। বাহিনীর সদস্যদের মনোবল বাড়ানো এবং জনগণের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করা- এমন নানা উদ্দেশ্য থাকে নামকরণের ক্ষেত্রে।