অটোচালক আনোয়ার ভিক্ষা করেও বাঁচতে চান
- সময় ১১:২৯:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
- / 10
এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুপা ভেঙ্গে গেছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার দুপায়ে লোহার রড স্থাপন করে দিয়েছেন। ভাগ্য ভালো হলে দশ মাস পর লোহার রড খোলা হবে। ভুক্তভোগী দরিদ্র অসহায় সেই আহত লোকটি হলেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার সতরশি গ্ৰামের বাসিন্দা অটোচালক আনোয়ার হোসেন।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আনোয়ার মিয়ার দুই মেয়ে সুবর্ণা আক্তার ও লাবণ্য আক্তার এবং স্ত্রী লাকী আক্তারকে নিয়ে সংসার চালাতে অক্ষম। তাই তিনি আহত হয়েও শরীরের কষ্ট নিয়ে হুইল চেয়ার দুহাত দিয়ে ঠেলে বাজারে বাজারে ভিক্ষা করছেন। ভিক্ষা করে ব্যয়বহুল ঔষধপত্রের টাকা মেলে না। বেতন দিতে না পারায় মেয়ে দুটোর লেখাপড়া বন্ধের পথে।তিন বার খাবারের সংস্থান ও করতে পারছেন না তিনি। তবু তিনি বাঁচতে চান দুই মেয়ে ও স্ত্রীর খরচ যোগানোর জন্য।
আবেগ আপ্লুত কন্ঠে আহত আনোয়ার হোসেন জানান, কিছুদিন পুর্বে নেত্রকোনা – ঠাকুরাকোনা সড়কে যাত্রীবোঝাই একটি অটোরিকশা নিয়ে ঠাকুরাকোনা আসতে ছিলেন। পথিমধ্যে বিপরীতে দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীরা আহত হয়েছেন।পিক আপের চাপা পড়ে দুটো পা ভেঙ্গে যায় আনোয়ার হোসেনের। তাকে স্থানীয়রা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ডাক্তার দুপায়ে লোহার রড স্থাপন করে দিয়েছেন।দশ মাস পর লোহার রড খোলার কথা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, তার দুই মেয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। বেতন দিতে না পারায় তাদের পড়ালেখা বন্ধের পথে।অনটন আর পিতার অসুস্থতার দুশ্চিন্তায় তারা এখন আর ক্লাসে যায় না। আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী বাধ্য হয়ে একটি বাসায় কাজ করে সামান্য যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে তার স্বামীর চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব নয়। তবু স্বামীকে সুস্থ করে তোলার অদম্য চেষ্টা।
মেয়ে সুবর্ণা আক্তার বলে, আমরা দুই বোন আব্বার দুঃসময়ে কোন কাজ করতে পারিনা। মাদ্রাসায় বেতন না দিতে পারার কারণে ক্লাসেও যেতে পারছি না। আব্বার প্রতিদিনের অষুধ না দিতে পারায় তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারছেন না তিনি। পায়ে যন্ত্রণা নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হুইল চেয়ার দুহাত দিয়ে ঠেলে বাজারে বাজারে ভিক্ষা করছেন।এই কষ্ট সহ্য করতে পারিনা। কেন আল্লাহ গরীব আব্বাকে এত কষ্ট দিচ্ছেন। আমরা মেয়ে হয়ে কিছুই করতে পারছিনা আব্বার জন্য।
আনোয়ার মিয়া জানান, তিনি টিসিবি কিংবা অন্য কোন সরকারি আর্থিক সহযোগিতা পান না। যদি সরকারিভাবে অথবা ধনী ব্যক্তির সহযোগিতা পেতেন তাহলে চিকিৎসার খরচ চালাতে পারতেন। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে না পারায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন তিনি।রাতে দুপায়ের যন্ত্রণায় ছটফট করতে হয়। ঘুমাতে পারেন না। তবু সকালে ঘুম থেকে উঠে দুহাতে ঠেলে হুইল চেয়ার নিয়ে এলাকায় ভিক্ষার জন্য বের হতে হয়। এছাড়া বাঁচার আর কোন উপায় নেই তার।
কান্না জড়িত কন্ঠে স্ত্রী লাকী আক্তার জানান, তিনি পরিবারের সদস্যদের খরচ বহন করতে এখন একটি বাসায় কাজ করেন। এতে নিজে ও মেয়েদের খাবার চলে কিন্তু স্বামীর চিকিৎসার জন্য ওষুধ ও পথ্য যোগাড় করতে পারেন না। তবু এর কোন বিকল্প নাই থাকায় বাধ্য হয়ে যেতে হয় প্রতিদিন। অসহায় আহত স্বামীর চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বিত্তবানরা যদি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতেন তাহলে সঠিক চিকিৎসা পেলে স্বামী সুস্থ হয়ে উঠতেন। যেদিন ওষুধ কেনার জন্য টাকা যোগাড় হয় না সেদিন সারারাত পায়ের যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাতে কাতরাতে রাত কাটাতে হয়।
সতরশি এলাকার বাসিন্দা মালেক মিয়া বলেছেন,দুই ভাঙ্গ পা নিয়ে আনোয়ার হুইল চেয়ারে চলে ভিক্ষা করেন।এর চেয়ে বড় দুর্ভাগা জীবনে দেখিনি কখনো। কোন সরকারি আর্থিক সহযোগিতা নেই।ধনী ব্যক্তিদের আর্থিক সুবিধা পেলে তিনি চিকিৎসা সেবা নিয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতেন। পরবর্তী সময়ে লোহার রড খোলার জন্য ও অনেক টাকা প্রয়োজন পড়বে।
ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও সদস্য খোকন মিয়ার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।