মিয়ানমারের আকাশে রাশিয়ান যুদ্ধ বিমান!

- সময় ১১:২৩:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
- / 121
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত মিয়ানমার। দেশটির রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর পরাজয়ের খবর প্রায়শ: শোনা যায়। শুধু তাই না; আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী টেকনাফ নদীতে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশী জেলেদের মাছ ধরার ট্রলারে হামলা ও তাদের অপহরনেরও ঘটনা ঘটছে।
কোনঠাসা মায়ানমার জান্তা সরকার এবার ঘুরে দাঁড়াতে মস্কোর স্মরনাপন্ন হয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের জান্তা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমার রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।
মস্কোতে যাওয়ার আগে জান্তা প্রধান পুতিনকে ছয়টি জ্যান্ত হস্তি উপহার দিয়েছেন। অন্যদিকে রাশিয়া সরবরাহ করেছে তাদের তৈরি ছয়টি যুদ্ধ বিমান। যা ইতোমধ্যে মিয়ানমারে পৌছে গেছে এবং বিদ্রোহী দমনে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করছে জান্তা বাহিনী।
কেবল যুদ্ধ বিমান না; এই সফরে পুতিন মিয়ানমারে একটি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণেও এগিয়ে এসেছেন। যা জান্তা সরকারের ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এই সফরের মাধ্যমে মিয়ানমার ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। রাশিয়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান সমর্থক হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে; যা আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মিয়ানমার যেটি এক সময় বার্মা নামে পরিচিত। দেশটির সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমারের স্বাধীনতার পর থেকেই তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
২০২১ সালে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল নেয় জান্তা সরকার। তখন জান্তা সরকারকে সমর্থন দিয়েছে মস্কো। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
মিয়ানমারের জ্বালানি খাত, বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তি, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। ২০২১ সালে রাশিয়া মিয়ানমারে পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহের চুক্তি করেছে।
জান্তা সরকারের সাথে রাশিয়ার সামরিক সম্পর্ক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাশিয়া মিয়ানমারকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে। দুই দেশ নিয়মিত সামরিক প্রশিক্ষণ ও যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়। ২০২১ সালে মিয়ানমারের জান্তা সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও সামরিক সহায়তা পেয়েছে বলেও জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক ফোরামে মস্কো মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক সংকটের বিষয়ে রাশিয়া জাতিসংঘে মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জান্তা সরকার আরাকানসহ কয়েকটি রাজ্যে বিদ্রোহীদের কাছে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আবারো জান্তা সরকার রাশিয়ার স্মরণাপন্ন হয়েছে।
ইতোপূর্বে মিয়ানমার রাশিয়া থেকে সুখোই সু-৩০এসই যুদ্ধবিমান, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান এবং মিল মি-১৭ ও মি-৩৫ হেলিকপ্টার ক্রয় করেছে। সে তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে নতুন আরো ছয়টি অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান। যা বিদ্রোহীদের দমনে ব্যবহার করা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।