ঢাকা ০১:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভিত্তিহীন সমালোচনার মুখে করণীয়

মো: আবু সাঈদ
  • সর্বশেষ আপডেট ০৭:৫৪:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
  • / 218

মো: আবু সাঈদ

নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একটি রাষ্ট্রের অপরিহার্য অংশ। তারা দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, অপরাধ দমন করতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নানা প্রকার অযাচিত সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই সমালোচনার মাত্রা আরও বেড়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন সংস্থাগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তেমনি জনগণের মধ্যে তাদের প্রতি অবিশ্বাস ও ভীতির জন্ম হচ্ছে। এই সংকট থেকে বের হতে হলে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।

নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন সমালোচনার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে।

  • পেশাদারিত্বের অভাব: অতীতে কিছু উচ্চাভিলাষী নিরাপত্তা কর্মকর্তার কারণে সংস্থাগুলো তাদের পেশাদারিত্ব থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তারা নিজেদের ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের সেবা করার মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে এসেছেন।

  • ভুল তথ্য ও গুজব: সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দ্রুত মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভাবমূর্তি নষ্ট করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে সম্পাদিত বা যাচাই করা তথ্য না থাকায় মানুষ খুব সহজেই ভুল তথ্যে প্রভাবিত হয়।

  • রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ: অনেক সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ায়। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বিপদে ফেলতে তথ্য ছড়াতে গিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জড়ি ফেলে।

  • তথ্যের অভাব ও অস্বচ্ছতা: নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য বা স্বচ্ছতার অভাব থাকলে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে।

  • জনগণের ভীতি: কিছু ব্যক্তির অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর নাম শুনলেই দেশের মানুষ ভয়ে তটস্থ থাকে। এতে জনগণের মধ্যে তাদের প্রতি ভীতি ও অবিশ্বাসের জন্ম হয়।

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এমন সমস্যার সমাধান একটি বহুমাত্রিক কৌশল। ভিত্তিহীন সমালোচনা মোকাবিলা করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই জটিল সমস্যার সমাধানের জন্য বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করা জরুরি।

১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি:
স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা জনগণের আস্থা অর্জনের প্রথম ধাপ। এটি নিশ্চিত করতে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে হবে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর উচিত তাদের কার্যক্রম, বিশেষ করে সংবেদনশীল অভিযান বা ঘটনা সম্পর্কে সময়োপযোগী ও সঠিক তথ্য প্রকাশ করা। এটি গুজব ছড়ানোর সুযোগ কমিয়ে দেবে। তাছাড়া কোনো অভিযোগ উঠলে, তা ভিত্তিহীন হোক বা না হোক, একটি নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত করা আবশ্যক। তদন্তের ফলাফল জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে, যদি এতে রাষ্ট্রের বা সংস্থার গোপনীয়তা লঙ্ঘিত না হয়। এটি নিজেদের দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে। অভিযোগ নিষ্পত্তির কার্যকর ব্যবস্থাও নিতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। জনগণের অভিযোগ জানানোর জন্য সহজ ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা রাখা এবং দ্রুততার সঙ্গে সেগুলোর নিষ্পত্তি করাটাও জরুরি।

২. কার্যকর যোগাযোগ ও জনসম্পৃক্ততাও একটি উপযোগী কৌশল হতে পারে:
জনগণের সঙ্গে সঠিক ও নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি কমানো সম্ভব। দেশের বা বিদেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে সঠিক উপায়ে। গণমাধ্যমের সাথে একটি গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা অনেক সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে। ভয়ভীতি প্রদর্শনের পুরনো নীতি বাদ দিয়ে সম্পর্ক স্থাপনের নীতিতে অগ্রসর হতে হবে। সময় যখন প্রযুক্তির আর সোশ্যাল মিডিয়ার, তাই এর থেকে দূরে না থেকে এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে সক্রিয়ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। সঠিক তথ্য দিয়ে পোস্ট তৈরি করে গুজব চিহ্নিত করে তা খণ্ডন করতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে কমিউনিটি এনগেজমেন্ট। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কমিউনিটি পুলিশিং বা কমিউনিটি এনগেজমেন্ট প্রোগ্রাম বাড়ানো যেতে পারে। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি যোগাযোগ বাড়বে। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়মিত করতে হবে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভূমিকা, চ্যালেঞ্জ এবং সফলতার গল্পগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। সচেতনতামূলক নাটক, টিকা বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও প্রচার চালানো যেতে পারে। বিদেশে পুলিশ বন্ধু থাকে, যারা সাধারণ মানুষ কিন্তু পুলিশকে সহায়তা করে। সেটা তথ্য দিয়ে বা কৌশলগত। এটা পরিষ্কার করলাম কারণ আমাদের দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা মানে গাড়ি দেওয়া, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বিজ্ঞাপন দেওয়া বা অনুষ্ঠানে স্পন্সর দেওয়ার মতো ঘটনা চোখে পড়ে।

৩. পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা উন্নয়ন:
কর্মীদের পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা এই সংকটের মূল সমাধান। এর জন্য নিরাপত্তা কর্মীদের জনসম্পৃক্ততা, যোগাযোগ দক্ষতা এবং জনসেবামূলক আচরণের ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদের মানবাধিকার এবং আইনি কাঠামোর প্রতি সংবেদনশীল করে তুলতে হবে। ভিত্তিহীন সমালোচনার মুখে কর্মীদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের মানসিক সমর্থন দেওয়া এবং ব্যক্তিগত তথ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক থাকা সংস্থাগুলোর দায়িত্ব। তাই যদি ভিত্তিহীন সমালোচনা মানহানিকর বা বিদ্বেষমূলক হয়, তবে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে।

পরিশেষে বলবো, ভিত্তিহীন সমালোচনা মোকাবেলা করা শুধুমাত্র নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর একক দায়িত্ব নয়। বরং সরকার, গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে ক্রমাগত নিজেদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী জনআস্থা ও সমর্থন অর্জন করা সম্ভব। যখন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জনগণের বন্ধু এবং সেবক হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে, তখনই ভিত্তিহীন সমালোচনা তাদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।

লেখক: মো: আবু সাঈদ; ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। [abusayed.sdream@gmail.com]

এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

ভিত্তিহীন সমালোচনার মুখে করণীয়

সর্বশেষ আপডেট ০৭:৫৪:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একটি রাষ্ট্রের অপরিহার্য অংশ। তারা দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, অপরাধ দমন করতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নানা প্রকার অযাচিত সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই সমালোচনার মাত্রা আরও বেড়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন সংস্থাগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তেমনি জনগণের মধ্যে তাদের প্রতি অবিশ্বাস ও ভীতির জন্ম হচ্ছে। এই সংকট থেকে বের হতে হলে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।

নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন সমালোচনার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে।

  • পেশাদারিত্বের অভাব: অতীতে কিছু উচ্চাভিলাষী নিরাপত্তা কর্মকর্তার কারণে সংস্থাগুলো তাদের পেশাদারিত্ব থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তারা নিজেদের ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের সেবা করার মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে এসেছেন।

  • ভুল তথ্য ও গুজব: সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দ্রুত মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভাবমূর্তি নষ্ট করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে সম্পাদিত বা যাচাই করা তথ্য না থাকায় মানুষ খুব সহজেই ভুল তথ্যে প্রভাবিত হয়।

  • রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ: অনেক সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ায়। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বিপদে ফেলতে তথ্য ছড়াতে গিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জড়ি ফেলে।

  • তথ্যের অভাব ও অস্বচ্ছতা: নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য বা স্বচ্ছতার অভাব থাকলে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে।

  • জনগণের ভীতি: কিছু ব্যক্তির অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর নাম শুনলেই দেশের মানুষ ভয়ে তটস্থ থাকে। এতে জনগণের মধ্যে তাদের প্রতি ভীতি ও অবিশ্বাসের জন্ম হয়।

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এমন সমস্যার সমাধান একটি বহুমাত্রিক কৌশল। ভিত্তিহীন সমালোচনা মোকাবিলা করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই জটিল সমস্যার সমাধানের জন্য বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করা জরুরি।

১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি:
স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা জনগণের আস্থা অর্জনের প্রথম ধাপ। এটি নিশ্চিত করতে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে হবে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর উচিত তাদের কার্যক্রম, বিশেষ করে সংবেদনশীল অভিযান বা ঘটনা সম্পর্কে সময়োপযোগী ও সঠিক তথ্য প্রকাশ করা। এটি গুজব ছড়ানোর সুযোগ কমিয়ে দেবে। তাছাড়া কোনো অভিযোগ উঠলে, তা ভিত্তিহীন হোক বা না হোক, একটি নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত করা আবশ্যক। তদন্তের ফলাফল জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে, যদি এতে রাষ্ট্রের বা সংস্থার গোপনীয়তা লঙ্ঘিত না হয়। এটি নিজেদের দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে। অভিযোগ নিষ্পত্তির কার্যকর ব্যবস্থাও নিতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। জনগণের অভিযোগ জানানোর জন্য সহজ ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা রাখা এবং দ্রুততার সঙ্গে সেগুলোর নিষ্পত্তি করাটাও জরুরি।

২. কার্যকর যোগাযোগ ও জনসম্পৃক্ততাও একটি উপযোগী কৌশল হতে পারে:
জনগণের সঙ্গে সঠিক ও নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি কমানো সম্ভব। দেশের বা বিদেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে সঠিক উপায়ে। গণমাধ্যমের সাথে একটি গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা অনেক সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে। ভয়ভীতি প্রদর্শনের পুরনো নীতি বাদ দিয়ে সম্পর্ক স্থাপনের নীতিতে অগ্রসর হতে হবে। সময় যখন প্রযুক্তির আর সোশ্যাল মিডিয়ার, তাই এর থেকে দূরে না থেকে এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে সক্রিয়ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। সঠিক তথ্য দিয়ে পোস্ট তৈরি করে গুজব চিহ্নিত করে তা খণ্ডন করতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে কমিউনিটি এনগেজমেন্ট। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কমিউনিটি পুলিশিং বা কমিউনিটি এনগেজমেন্ট প্রোগ্রাম বাড়ানো যেতে পারে। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি যোগাযোগ বাড়বে। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়মিত করতে হবে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভূমিকা, চ্যালেঞ্জ এবং সফলতার গল্পগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। সচেতনতামূলক নাটক, টিকা বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও প্রচার চালানো যেতে পারে। বিদেশে পুলিশ বন্ধু থাকে, যারা সাধারণ মানুষ কিন্তু পুলিশকে সহায়তা করে। সেটা তথ্য দিয়ে বা কৌশলগত। এটা পরিষ্কার করলাম কারণ আমাদের দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা মানে গাড়ি দেওয়া, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বিজ্ঞাপন দেওয়া বা অনুষ্ঠানে স্পন্সর দেওয়ার মতো ঘটনা চোখে পড়ে।

৩. পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা উন্নয়ন:
কর্মীদের পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা এই সংকটের মূল সমাধান। এর জন্য নিরাপত্তা কর্মীদের জনসম্পৃক্ততা, যোগাযোগ দক্ষতা এবং জনসেবামূলক আচরণের ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদের মানবাধিকার এবং আইনি কাঠামোর প্রতি সংবেদনশীল করে তুলতে হবে। ভিত্তিহীন সমালোচনার মুখে কর্মীদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের মানসিক সমর্থন দেওয়া এবং ব্যক্তিগত তথ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক থাকা সংস্থাগুলোর দায়িত্ব। তাই যদি ভিত্তিহীন সমালোচনা মানহানিকর বা বিদ্বেষমূলক হয়, তবে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে।

পরিশেষে বলবো, ভিত্তিহীন সমালোচনা মোকাবেলা করা শুধুমাত্র নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর একক দায়িত্ব নয়। বরং সরকার, গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে ক্রমাগত নিজেদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী জনআস্থা ও সমর্থন অর্জন করা সম্ভব। যখন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জনগণের বন্ধু এবং সেবক হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে, তখনই ভিত্তিহীন সমালোচনা তাদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।

লেখক: মো: আবু সাঈদ; ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। [abusayed.sdream@gmail.com]