বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
কিভাবে তালেবানের দলে নাম লিখছে বাংলাদেশিরা

- সর্বশেষ আপডেট ০৫:৫৬:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
- / 98
গত ছয় মাসে পাকিস্তানের একটি সশস্ত্র সংগঠনের হয়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের সময় দুই জন বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে এসেছে। ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুই জনকে গত জুলাই মাসে আটক করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। ফলে প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে বাংলাদেশের তরুণরা পাকিস্তানের এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়াচ্ছে।
পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর অভিযানে গত শুক্রবার সশস্ত্র সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ১৭ জন সদস্য নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি তরুণকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তার নাম ফয়সাল, বাড়ি মাদারীপুরে।
এর আগে এপ্রিলে দেশটির উত্তর ওয়াজিরিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে আহমেদ জুবায়ের নামে আরেক বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে টিটিপি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহে দুজনকে গত জুলাই মাসে আটক করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। জঙ্গি বিষয়ে কাজ করা ঢাকার পুলিশ সূত্র বলছে, টিটিপির জন্য বাংলাদেশ থেকে জনবল সংগ্রহের একটি প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। এ কার্যক্রমের নেতৃত্বে আছেন ইঞ্জিনিয়ার ইমরান হায়দার।
বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা নজর রাখেন এমনরা বলছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশি জঙ্গিদের সম্পৃক্ত হওয়া নতুন বিষয় নয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে ‘মুজাহিদ রিক্রুটমেন্ট’-এর মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বাংলাদেশে সক্রিয় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া নামের একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আল-কায়েদার যোগসূত্র রয়েছে। আল-কায়েদার সঙ্গে আবার টিটিপির যোগসূত্র রয়েছে।
পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টিটিপির সঙ্গে সম্পৃক্ত দুজনকে জুলাইয়ে আটক করার পর বাংলাদেশের ভেতরে নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
টিটিপি মূলত পাকিস্তানের পাঠান মাদ্রাসার ছাত্রদের বিভিন্ন সংগঠনের একটি জোট। ২০০৭ সালে বাইতুল্লাহ মেহসুদের নেতৃত্বে ১৩টি সংগঠন মিলে টিটিপি গঠিত হয়। জোট গঠনের পর দলীয় কোন্দলের কারণে বিভিন্ন উপদল তৈরি হয়। ২০২০ সালে টিটিপি পুনরায় একত্রিত হয়। তারা পাকিস্তানে ‘ইসলামী শাসন’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
পাকিস্তানে বিভিন্ন বড় ধরনের হামলার ঘটনায় টিটিপির নাম সামনে এসেছে। সংগঠনটি পাকিস্তানের বাইরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ‘জিহাদি’ সদস্য রিক্রুট করে। মসজিদ, স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলার জন্যও টিটিপি দায়ী বলে জানা যায়।
২০১৪ সালে পাকিস্তান সরকার টিটিপির সঙ্গে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেয়, যা সমালোচনার মুখে পড়ে। এরই মধ্যে ছয় মাসে পাকিস্তানের মাটিতে দুই জন বাংলাদেশি, যারা টিটিপির সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে, নিহত হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশি জঙ্গিদের সম্পৃক্ত হওয়া নতুন নয়। বাংলাদেশে প্রকাশ্যভাবে মুজাহিদ সংগ্রহের তৎপরতা নজর করা গেছে। যদিও এখন তাদের কার্যক্রম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে, পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
বাংলাদেশে টিটিপির কার্যক্রমে জড়িতদের আটক করার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব বা দুবাই হয়ে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানে পাঠানো হয়। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য সরবরাহ করে, যার ভিত্তিতেই জুলাইতে দুই জনকে আটক করা হয়।
একজনকে ২রা জুলাই ঢাকার কাছে সাভার থেকে এবং অপরজনকে ১৪ই জুলাই নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে টিটিপির সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগ আনা হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, আটক দুই জন ২০২৪ সালের ১৮ই অক্টোবর ঢাকা ছেড়েছিল। তারা ওমরাহ না করে পরদিন সৌদি আরব থেকে পাকিস্তানে গিয়েছিল। এরপর ৬ই নভেম্বর তুরখান সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছায়। একজন পরদিন আবার পাকিস্তানে আসেন। করাচী থেকে দুবাই হয়ে ১৬ই নভেম্বর দেশে ফেরেন। অপর বাংলাদেশি উত্তর ওয়াজিরিস্তানে নিহত হন, তার নাম আহমেদ জুবায়ের ওরফে যুবরাজ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক একজন পুলিশকে তথ্য দিয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে দ্বিতীয় জনও আটক হয়।
মামলায় বলা হয়েছে, “ইঞ্জিনিয়ার ইমরান হায়দার বাংলাদেশের জন্য টিটিপির কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সদস্যদের যুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ ও সংঘবদ্ধ করছে।” তিনি সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, ইসলামী খিলাফতের দাওয়াত পৌঁছানো এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসে উদ্বুদ্ধ করার কাজও করছেন।
২০২৩ সালের ২৩ জুন এই ব্যক্তি ও তার স্ত্রীকে ঢাকার ডেমরা থেকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছিল। তখন পুলিশ তাকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।