ফাটা কেষ্ট রির্টান

- সময় ০৩:০২:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 424
ওবায়দুল কাদের; বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের সাধারণ সম্পাদক। ছিলেন গত সরকারের যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী। নিজের কর্মকান্ডের জন্য তিনি ফাটা কেষ্ট নামেই বেশি পরিচিত ছিলো।
হঠাৎ করে তিনি স্ব-দলবলে বিভিন্ন দপ্তরে হাজির হতেন এবং লোক দেখানো নানা কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ওবায়দুল কাদের এখন দেশে নেই; ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কোন এক সময় তিনি দেশ ছেড়েছেন।
নেটিজেনরা বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের অভাব স্বল্প সময়েই পূরণ করে নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। দায়িত্ব নেয়ার পর গত কয়েক মাস মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
কিন্তু গত কয়েক মাসেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় তার পদত্যাগের দাবি ওঠে। বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা, রাস্তায় রাস্তায় চেক পোস্ট বসানো থেকে শুরু করে অনেক পদক্ষেপই ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে; কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি।

এ অবস্থায় ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৩ টায় হঠাৎ করেই জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেখানে তিনি হুংকার দেন, যারা আইন-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছেন তাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিবেন। এবং পদত্যাগের প্রয়োজন হবে না বলেও জানান।
কেবল ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে নিজের ঘুম নষ্ট করে রাত – বিরাতে নিজেই বিভিন্ন থানার কার্যক্রম পরিদর্শন শুরু করেন।
প্রথমদিন ভোরে তিনি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বনানী, বিজয় সররি, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, কলাবাগান, ইডেন কলেজ হয়ে নিউমার্কেট থানা পরিদর্শন করেন। এরপর শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন, মগবাজার, হাতিরঝিল, পুলিশ প্লাজা হয়ে গুলশান থানার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি কিছু অলিগলিও ঘুরে দেখেন।
দ্বিতীয় দিন সকালেও বিভিন্ন মোড় ও স্থানে স্থাপিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট ও তল্লাশি চৌকিগুলো ঘুরে দেখেন। এবং কয়েকটি থানার কার্যক্রম পরিদর্শণ করেন এবং দুই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করেন।

প্রথম দিন তার এই পরিদর্শনকালে মিডিয়ার উপস্থিতি না থাকলেও; দ্বিতীয় দিন কয়েকটি মিডিয়া তার সঙ্গে দেখা যায়। যেমনটা করতেন সাবেক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সেনাবাহিনীর একজন তিন তারকা কর্মকর্তা ছিলেন। চাকরী জীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনকে সরিয়ে গত ১৬ আগস্ট তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ধারণা করা হয়েছিল, চৌকস এই কর্মকর্তার পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফিরিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবেন।
এমএলএ ফাটা কেষ্ট ২০০৬ সালের বাংলা ভাষার ভারতীয় রাজনৈতিক নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র। শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের ব্যানারে পরিচালনা করেছেন স্বপন সাহা। নাম চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী।
এই চলচ্চিত্রের “মারব এখানে, লাশ পরবে শশ্মানে” ডায়লগ বেশ জনপ্রিয়। এটি বক্স অফিসে ৭.৫ কোটি টাকা আয় করে বাণিজ্যিক ভাবে সাফল্য পেয়েছিল। চলচ্চিত্রে ফাটা কেষ্টা মিঠুন চক্রবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে বেড়াতেন।
পুলিশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে সারাদেশে হত্যােণ্ডের শিকার হন ২৯৪ জন। এ সময়ে ১৭১টি চুরি, ৭১ ডাকাতি, ১০৫ অপহরণ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৪৪০টি।
গত বছর একই সময়ে হত্যার শিকার হন ২৩১ জন। ডাকাতি ২৯, চুরি ১৪১, অপহরণ ৪৩ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৪৩টি।
গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এবার চুরি, ডাকাতি, খুনাখুনি, অপহরণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। যদিও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান দিয়ে সমাজের প্রকৃত চিত্র বোঝানো কঠিন। কারণ, ঘটনার শিকার হয়ে অনেকে মামলা করতে চান না। আবার মামলা হলেও পুলিশ গড়িমসি করে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখনো পুলিশের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসেনি। তারা এখনো দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সুযোগ নিয়েছেন অপরাধীরা।
এছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ থানায় নতুন মুখ হওয়ায় তারা এখনও এলাকাভিত্তিক অপরাধী এবং গোয়েন্দা তথ্য রাখার ক্ষেত্রে কাঙ্খিত জায়গায় যেতে পারেননি। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও অনেককে বড় অপরাধে জড়াতে দেখা যাচ্ছে।
এ অবস্থায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেককে স্যোশাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্র-জনতার পক্ষ তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়েছে।
তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো হয়েছে। তিনি আরো ভালো করার চেষ্টা করছেন।
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর ৩ তারকা পাওয়া এই কর্মকর্তা চাকরিজীবনে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স – বিএসএফ’র সঙ্গে সংঘর্ষে সাফল্য দেখান। এছাড়া তিনি ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় জরুরি অবস্থা জারি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া বিডিআর বিদ্রোহের মামলার তদন্তের দায়িত্বেও তিনি ছিলেন। এসব বিষয় বিবেচনা করেই তাকে এবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেয়া হয়।
কিন্তু তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর সারাদেশে আবারো চুরি, ছিনতাই, হত্যাকান্ডসহ নানা ধরনের অপরাধ কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি মাঝ রাত থেকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা শুরু করা হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে।