০৮:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণের চাপে কিডনি বিক্রি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • সময় ১২:৫২:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 47

ঋণের চাপে কিডনি বিক্রি

২০২১ সালে মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনা বাহিনীর সংঘাত চলছে। এতে মিয়ানমারে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সংঘাতের কারণে ভয়াবহ খাদ্য সংকটে ভুগছে মিয়ানমার। কিন্তু বিশ্ববাসীর কাছে এই সংকটের তথ্য লুকাতে ত্রাণ কর্মী ও খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তথ্য সংগ্রহে বাধা দিচ্ছে জান্তা সরকার।

বৃটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি- গত ডিসেম্বরে জানিয়েছিল, মিয়ানমারে খাদ্য সংকট এতোটাই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পৌছেছে যে, সেখানকার মানুষ ক্ষুধা মেটাতে বাধ্য হয়ে এক ধরনের গাছের পাতা খাচ্ছিলেন। এতে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের।

এই প্রতিবেদনের দুই মাস পর সম্প্রতি প্রভাবশালী এই সংবাদ মাধ্যম জানায়, দেশটিতে কিডনি বিক্রির ঘটনা বেড়েছে। যার নেপথ্যেও রয়েছে খাদ্য ও বাসস্থানের সংকট।

২০২১ সালের পর মিয়ানমারের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, মিয়ানমারে ২০১৭ সালে ২৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিশ্বজুড়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করার হার ৫০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু বৈধভাবে প্রতিস্থাপনের জন্য দাতার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ২০০৭ সালে ডব্লিউএইচও অনুমান করেছিল, বিশ্বজুড়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কিডনি প্রতিস্থাপন অবৈধভাবে হয়। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

বিবিসি’র প্রতিবেদনে কয়েকজন ভুক্তভোগীর চিত্র তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে বেশ কয়েকজন দালালের স্বাক্ষাৎকারও প্রকাশ করে। কিন্তু দেশটিতে কি হারে কিডনি বিক্রি হচ্ছে, সে বিষয়ে কোন তথ্য দেয়া হয়নি।

২০২১ সালে জান্তা সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মিয়ানমারের মুদ্রা- কিয়াত ব্যাপকভাবে অবমূল্যায়িত হয়েছে। এর ফলে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে।

খাদ্যপণ্য, চিকিৎসা সামগ্রী, শিক্ষা – সবকিছুই এখন এক ধাপ পেছনে চলে গেছে। বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।

এদিকে, খাদ্য সংকট দেশটির সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে উঠেছে। দেশটির কৃষি সেক্টর চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একদিকে সামরিক শাসনের ভয়, অন্যদিকে কৃষি উপকরণের অভাব – এই দুটি কারণে কৃষকরা তাদের জমিতে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। যার ফলে, উৎপাদন কমেছে এবং বাজারে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়েছে।

মিয়ানমারে বর্তমানে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সীমান্তবর্তী দেশগুলো, যেমন থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও ভারতে আশ্রয় নিয়েছে শরণার্থীদের বড় এশটি অংশ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এসব দেশে থাকা শরনার্থীদের মানবিক সহায়তা পাঠালেও, মায়ানমারের অভ্যন্তরে লক্ষ লক্ষ মানুষ খাবারের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

 

শেয়ার করুন

ঋণের চাপে কিডনি বিক্রি!

সময় ১২:৫২:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২০২১ সালে মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনা বাহিনীর সংঘাত চলছে। এতে মিয়ানমারে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সংঘাতের কারণে ভয়াবহ খাদ্য সংকটে ভুগছে মিয়ানমার। কিন্তু বিশ্ববাসীর কাছে এই সংকটের তথ্য লুকাতে ত্রাণ কর্মী ও খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তথ্য সংগ্রহে বাধা দিচ্ছে জান্তা সরকার।

বৃটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি- গত ডিসেম্বরে জানিয়েছিল, মিয়ানমারে খাদ্য সংকট এতোটাই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পৌছেছে যে, সেখানকার মানুষ ক্ষুধা মেটাতে বাধ্য হয়ে এক ধরনের গাছের পাতা খাচ্ছিলেন। এতে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের।

এই প্রতিবেদনের দুই মাস পর সম্প্রতি প্রভাবশালী এই সংবাদ মাধ্যম জানায়, দেশটিতে কিডনি বিক্রির ঘটনা বেড়েছে। যার নেপথ্যেও রয়েছে খাদ্য ও বাসস্থানের সংকট।

২০২১ সালের পর মিয়ানমারের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, মিয়ানমারে ২০১৭ সালে ২৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিশ্বজুড়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করার হার ৫০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু বৈধভাবে প্রতিস্থাপনের জন্য দাতার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ২০০৭ সালে ডব্লিউএইচও অনুমান করেছিল, বিশ্বজুড়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কিডনি প্রতিস্থাপন অবৈধভাবে হয়। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

বিবিসি’র প্রতিবেদনে কয়েকজন ভুক্তভোগীর চিত্র তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে বেশ কয়েকজন দালালের স্বাক্ষাৎকারও প্রকাশ করে। কিন্তু দেশটিতে কি হারে কিডনি বিক্রি হচ্ছে, সে বিষয়ে কোন তথ্য দেয়া হয়নি।

২০২১ সালে জান্তা সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মিয়ানমারের মুদ্রা- কিয়াত ব্যাপকভাবে অবমূল্যায়িত হয়েছে। এর ফলে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে।

খাদ্যপণ্য, চিকিৎসা সামগ্রী, শিক্ষা – সবকিছুই এখন এক ধাপ পেছনে চলে গেছে। বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।

এদিকে, খাদ্য সংকট দেশটির সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে উঠেছে। দেশটির কৃষি সেক্টর চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একদিকে সামরিক শাসনের ভয়, অন্যদিকে কৃষি উপকরণের অভাব – এই দুটি কারণে কৃষকরা তাদের জমিতে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। যার ফলে, উৎপাদন কমেছে এবং বাজারে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়েছে।

মিয়ানমারে বর্তমানে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সীমান্তবর্তী দেশগুলো, যেমন থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও ভারতে আশ্রয় নিয়েছে শরণার্থীদের বড় এশটি অংশ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এসব দেশে থাকা শরনার্থীদের মানবিক সহায়তা পাঠালেও, মায়ানমারের অভ্যন্তরে লক্ষ লক্ষ মানুষ খাবারের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।