কৃষিকাজে যেভাবে ড্রোনের ব্যবহার হচ্ছে ভারতে
- সময় ০৫:৩০:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
- / 238
প্রাচীন কৃষিকাজ থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতি, মানবজাতি কৃষিক্ষেত্রে যুগে যুগে নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে। ভারতে বর্তমানে যে প্রযুক্তি একেবারে নতুন মোড় তৈরি করছে, তা হলো ড্রোন প্রযুক্তি। এই ড্রোনগুলো কৃষির প্রচলিত ধারা বদলে দিয়ে, কৃষকদের জন্য আরও সুবিধাজনক, সময় সাশ্রয়ী এবং উৎপাদনশীলতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
ভারতে কৃষিকাজে ড্রোনের ব্যবহার সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম দিকে কৃষিক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহার সীমিত ছিল মূলত নজরদারি ও ফসল পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে। তবে বর্তমানে এটি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দিকে। মাটি পরীক্ষা করা, সার ছিটানো, কীটনাশক ছিটানো—এসব কাজে ড্রোনের ব্যবহার কৃষকদের জন্য কাজকে সহজ করে দিয়েছে।
কৃষিকাজে ব্যবহৃত ড্রোনগুলো সাধারণত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সেন্সর, জিপিএস প্রযুক্তি এবং ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই ড্রোনগুলো আকাশ থেকে মাটির উপরে উড়ে কৃষিক্ষেত্রের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এতে নির্ভুলতার সঙ্গে জমির অবস্থা, ফসলের বৃদ্ধি, মাটির আদ্রর্তা পরিমাপ করা যায়। ফলে কৃষকরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ভারতে ‘কৃষি ড্রোন’ নামক বিভিন্ন প্রকল্প চালু হয়েছে, যা কৃষকদের জন্য ড্রোন সহজলভ্য করছে। ভারতের মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, গুজরাট, কর্ণাটকসহ বিভিন্ন রাজ্যে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কৃষকদের জন্য এই প্রযুক্তি একটি বড় সুবিধা এনে দিয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার কৃষিতে ড্রোন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ড্রোনের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভর্তুকি দেওয়া, প্রশিক্ষণ প্রদান করা এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলমান।
ড্রোন প্রযুক্তির ফলে কৃষকদের উৎপাদনশীলতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি খরচও কমে যাচ্ছে। ড্রোনের সাহায্যে জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে সার বা কীটনাশক ছিটানো যায়, ফলে প্রয়োজনীয় উপকরণের অপচয় রোধ হয়। এছাড়া শ্রমিক খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, কারণ এক ড্রোনই অনেক জমিতে কাজ করতে সক্ষম। ফলশ্রুতিতে কৃষকের আর্থিক সাশ্রয় হচ্ছে।
ভারতে ড্রোন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিশাল। তবে এর চ্যালেঞ্জও কম নয়। প্রথমত, অনেক কৃষক এখনও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে প্রস্তুত নয়। কারণ এর জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি ড্রোন পরিচালনার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণেরও দরকার হয়। তবে সরকারের সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
ড্রোন প্রযুক্তি ভারতের কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এটি শুধু ফসল উৎপাদনে সহায়ক নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় ড্রোন ব্যবহার আগামীর কৃষিতে আরও বেশি প্রচলিত হবে, এবং ভারতে কৃষিকাজে এক নতুন যুগের সূচনা করবে।