ঢাকা ০৬:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ কেন জাতীয় সরকারের গুঞ্জন?

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সর্বশেষ আপডেট ১০:৩১:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 63

জাতীয় সরকার

জাতীয় সরকার এই শব্দ দুটি হঠাৎ করেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনায় চলে এসেছে। খুব বেশি চর্চিত হচ্ছে এখন। কিন্তু জাতীয় সরকার বলতে কী বোঝায়? বাংলাদেশের সংবিধানে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থার উল্লেখ আছে কি?

জাতীয় সরকার, একটি তত্ত্ব বা ধারণা হিসেবে, মূলত এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশের সকল বড় রাজনৈতিক দল একত্রে সরকার গঠন করে।

এটি সাধারণত জাতীয় সংকট, যুদ্ধ বা বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে প্রয়োজনীয় মনে করা হয়। এমন সরকারের মূল লক্ষ্য দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।

বিশ্ব রাজনীতিতে জাতীয় সরকারের উদাহরণ রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে এমন সরকার গঠন করা হয়েছিল। তবে এসব দেশের ক্ষেত্রে জাতীয় সরকার গঠনের জন্য তাদের নিজ নিজ সংবিধানে নির্দিষ্ট বিধান ছিল।

কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় সরকারের কোনো ধারণা বা কাঠামোর উল্লেখ নেই। সংবিধানের ৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, দেশে একটি সংসদীয় ব্যবস্থা চালু থাকবে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

তাহলে প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গ কেন উঠে এলো? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি মূলত দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং দ্বন্দ্ব নিরসনের একটি বিকল্প হিসেবে আলোচনায় এসেছে। ফলে এবার জাতীয় সরকার গঠন করলে সেখানেও সাংবিধানিক বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন দেশের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই দেশে এখনো অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। পাশপাশি প্রতিবেশি ভারতের সাথেও সম্পর্কের টানাপোড়ন শুরু হয়েছে। যা মূলত পরিস্থিতি জাতীয় সরকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। একটি পক্ষ মনে করে, এটি দেশের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যদিকে, আরেকটি পক্ষ একে অগণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক শাসনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।

এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনোভাবও মিশ্র। কেউ মনে করেন, এটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয়, আবার কেউ বলেন, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, জাতীয় সরকারের ধারণাটি যদি কখনো বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি কেবলমাত্র একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হতে পারে, যার নির্দিষ্ট সময়-সীমা ঘোষণা করা উচিত। অন্যথায় বড় দলগুলো বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে।

এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

হঠাৎ কেন জাতীয় সরকারের গুঞ্জন?

সর্বশেষ আপডেট ১০:৩১:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

জাতীয় সরকার এই শব্দ দুটি হঠাৎ করেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনায় চলে এসেছে। খুব বেশি চর্চিত হচ্ছে এখন। কিন্তু জাতীয় সরকার বলতে কী বোঝায়? বাংলাদেশের সংবিধানে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থার উল্লেখ আছে কি?

জাতীয় সরকার, একটি তত্ত্ব বা ধারণা হিসেবে, মূলত এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশের সকল বড় রাজনৈতিক দল একত্রে সরকার গঠন করে।

এটি সাধারণত জাতীয় সংকট, যুদ্ধ বা বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে প্রয়োজনীয় মনে করা হয়। এমন সরকারের মূল লক্ষ্য দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।

বিশ্ব রাজনীতিতে জাতীয় সরকারের উদাহরণ রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে এমন সরকার গঠন করা হয়েছিল। তবে এসব দেশের ক্ষেত্রে জাতীয় সরকার গঠনের জন্য তাদের নিজ নিজ সংবিধানে নির্দিষ্ট বিধান ছিল।

কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় সরকারের কোনো ধারণা বা কাঠামোর উল্লেখ নেই। সংবিধানের ৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, দেশে একটি সংসদীয় ব্যবস্থা চালু থাকবে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

তাহলে প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গ কেন উঠে এলো? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি মূলত দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং দ্বন্দ্ব নিরসনের একটি বিকল্প হিসেবে আলোচনায় এসেছে। ফলে এবার জাতীয় সরকার গঠন করলে সেখানেও সাংবিধানিক বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন দেশের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই দেশে এখনো অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। পাশপাশি প্রতিবেশি ভারতের সাথেও সম্পর্কের টানাপোড়ন শুরু হয়েছে। যা মূলত পরিস্থিতি জাতীয় সরকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। একটি পক্ষ মনে করে, এটি দেশের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যদিকে, আরেকটি পক্ষ একে অগণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক শাসনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।

এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনোভাবও মিশ্র। কেউ মনে করেন, এটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয়, আবার কেউ বলেন, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, জাতীয় সরকারের ধারণাটি যদি কখনো বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি কেবলমাত্র একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হতে পারে, যার নির্দিষ্ট সময়-সীমা ঘোষণা করা উচিত। অন্যথায় বড় দলগুলো বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে।