সুস্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে চাইবে বিএনপি

- সর্বশেষ আপডেট ০২:০৪:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
- / 43
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে জমে উঠেছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এ পরিস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে চায় বিএনপি। এই লক্ষ্যে আগামী ১৬ এপ্রিল (বুধবার) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল।
বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে সরকারের ভিন্ন ভিন্ন বার্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। প্রধান উপদেষ্টা কখনো জুন মাস, কখনো ডিসেম্বরের কথা বলছেন—এতে সন্দেহ ও অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে। এ কারণেই নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচি জানতে সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “১৭ বছর ধরে আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছি। এখনো সেই অবস্থানে আছি। আমরা আশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর নির্বাচন নিয়েই তারা ভাববে। কিন্তু এখনো বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি রয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে, আবার বলেছেন জুনেও হতে পারে। কিন্তু জুন তো বর্ষাকাল, নির্বাচন উপযুক্ত সময় নয়। এর ফলে আমাদের মনে সংশয় তৈরি হয়েছে। আমরাও দ্বিধায় আছি—কী ঠিক, কী ভুল। এ পরিস্থিতিতে আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে পরিষ্কার জানতে চাইব।”
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নির্বাচন কবে হবে, বড় আর ছোট সংস্কার বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে—এসব বিষয়ে আমাদের স্পষ্টতা দরকার। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ডিসেম্বরকে ঘিরেই। তাহলে এখন আবার জুন মাস কেন বলা হচ্ছে?”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) নির্বাচিত নন, এটা জাতিকে প্রতিদিন মনে করিয়ে দেওয়া হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধা কোথায়?”
বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “১৬ তারিখে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা হয়, তা দেখেই আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করব। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করবে।”
বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, ১৬ এপ্রিলের বৈঠকে সরকারের মনোভাব পরিষ্কার না হলে দলটি রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবে। এজন্য ইতোমধ্যেই জেলা-শহরে সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে আসন্ন বৈঠকের ফলাফলের ওপর।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে গেলে ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। শুরু থেকেই সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে বিএনপি ও বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। তবে তারা নির্বাচনমুখী সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়েই জাতীয় নির্বাচন দাবি করে আসছে।
ইতোমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বড় ধরনের সংস্কার চাইলে নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের জুনে, আর ছোট পরিসরের সংস্কার হলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু বিএনপি ও তাদের মিত্রদলগুলো ডিসেম্বরের পর নির্বাচন করতে দেওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
বিএনপি বলছে, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। সে জন্য তারা আগামী ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনী রোডম্যাপ জানতে চাইবে এবং তার ভিত্তিতেই পরবর্তী আন্দোলন বা রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করবে।