ঢাকা ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ ৭ দেশ

আকাশ ইসলাম
  • সর্বশেষ আপডেট ০৭:০৮:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / 285

জাতিসংঘের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা আচিম স্টেইনার ২০২২ সালে সতর্ক করেছিলেন যে ৫০টি দেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই সতর্কবার্তা এখনো প্রাসঙ্গিক। বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আজ এমন একস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ঋণ, মূল্যস্ফীতি, এবং জ্বালানি সংকট প্রতিটি দেশের জন্য চরম বিপদের  ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশ্বের এই সংকট থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি টিভি ১৮ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে সাতটি দেশের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। এই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আর্জেন্টিনা, জাম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ঘানার পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থাও উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০০৮ সালের তুলনায় পাঁচগুন বেশি। যেখানে বিশ্বব্যাপী রেটিং এজেন্সি এসএন্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশকে ‘জাঙ্ক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মানে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক সংকটের সীমারেখায় দাঁড়িয়ে।

সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তা কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার টাকার অবমূল্যায়ন করেছে, তবে এ পদক্ষেপ এখনো অর্থনীতির কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে পারেনি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে

যে, ২০২৫ সালে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। এ অবস্থায় খাদ্য মূল্যে বৃদ্ধি দেশের নিন্ম আয়ের জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে আরও কষ্টকর করে তুলছে।

এর মধ্যেই ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে। অপরিশোধিত ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে সংকট আরও তীব্র হতে পারে। তবে এখনো ঋণ সংকটের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে দেশটি। কিন্তু যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সাময়িক স্বস্তি এনেছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই ঋণ ছাড়ের প্রক্রিয়া চলমান থাকবে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো কিছুটা স্থিতিশীল রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, ঋণ নির্ভর অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে কতটা কার্যকর হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।

জাতিসংঘের ইউএনডিপি প্রধানের ২০২২ সালের সতর্কবার্তা এখন আরো বাস্তব হয়ে উঠছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা বিশ্বব্যাপী দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থনৈতিক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

Tag :

এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ ৭ দেশ

সর্বশেষ আপডেট ০৭:০৮:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

জাতিসংঘের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা আচিম স্টেইনার ২০২২ সালে সতর্ক করেছিলেন যে ৫০টি দেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই সতর্কবার্তা এখনো প্রাসঙ্গিক। বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আজ এমন একস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ঋণ, মূল্যস্ফীতি, এবং জ্বালানি সংকট প্রতিটি দেশের জন্য চরম বিপদের  ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশ্বের এই সংকট থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি টিভি ১৮ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে সাতটি দেশের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। এই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আর্জেন্টিনা, জাম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ঘানার পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থাও উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০০৮ সালের তুলনায় পাঁচগুন বেশি। যেখানে বিশ্বব্যাপী রেটিং এজেন্সি এসএন্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশকে ‘জাঙ্ক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মানে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক সংকটের সীমারেখায় দাঁড়িয়ে।

সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তা কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার টাকার অবমূল্যায়ন করেছে, তবে এ পদক্ষেপ এখনো অর্থনীতির কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে পারেনি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে

যে, ২০২৫ সালে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। এ অবস্থায় খাদ্য মূল্যে বৃদ্ধি দেশের নিন্ম আয়ের জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে আরও কষ্টকর করে তুলছে।

এর মধ্যেই ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে। অপরিশোধিত ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে সংকট আরও তীব্র হতে পারে। তবে এখনো ঋণ সংকটের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে দেশটি। কিন্তু যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সাময়িক স্বস্তি এনেছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই ঋণ ছাড়ের প্রক্রিয়া চলমান থাকবে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো কিছুটা স্থিতিশীল রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, ঋণ নির্ভর অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে কতটা কার্যকর হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।

জাতিসংঘের ইউএনডিপি প্রধানের ২০২২ সালের সতর্কবার্তা এখন আরো বাস্তব হয়ে উঠছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা বিশ্বব্যাপী দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থনৈতিক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।